জাপানি করোনা ভ্যাক্সিন
Gavi COVAX Advance Market Commitment (Gavi COVAX AMC) কে জাপান কর্তৃক দান করা প্রথম COVID-19 ভ্যাকসিনের ডোজ পাঠানো হয়েছে ৭টি দেশে , প্রথম চালানটি 2021 এর, 23 জুলাই কম্বোডিয়া, অতপর ভিয়েতনাম, নেপাল, ফিলিপনস,, শ্রীলংকা, ইরানে এবং 24 জুলাই বাংলাদেশে । এই বিতরণগুলি এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং অন্যান্য অঞ্চল জুড়ে AstraZeneca ভ্যাকসিনের 11 মিলিয়ন ডোজ দান করার অংশ।
জাপান প্রধানত ভ্যাক্সিন রিএজেন্ট আমদানি করে, মার্কিন কোম্পানি থার্মো ফিশার সায়েন্টিফিকের তৈরি।
এ পর্যন্ত ৮টি করোনা ভ্যাকসিন জাপানে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে । জাপানের বেশিরভাগ কোভিড টিকা Pfizer এবং Moderna দ্বারা তৈরি mRNA প্রকারের ভ্যাক্সিন । Astrazeneca এর (AZN.L) শটও অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু দেশীয়ভাবে উৎপাদিত সরবরাহ জাপানে ব্যবহার করা হয়নি এবং পরিবর্তে বিদেশে দান করা হয়েছে। ভ্যাক্সিনগুলোর নাম
- তাকেদা TAK-019 (নোভাভ্যাক্স ফর্মুলেশন), যা প্রোটিন সাব ইউনিট প্রকারের,
- তাকেদা TAK-919 (মডার্ণা, rna প্রকারের )।
- শিওনোগি S-268019, rna প্রকারের,
- মেডিকাগো কোভিফেঞ্জ (vlp প্রকারের ),
- দাইচি সানকিও কোং, লিমিটেড, DS-5670a
- ভিএলপি থেরাপিউটিকস জাপান, VLPCOV-01
- Anges ভ্যাকসিন
ফেব্রুয়ারী, ২০২১ জাপানে প্রথম করোনা টিকাদান
অনেকে প্রশ্ন করে, জাপান এতো উন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন তারা কোনো COVID-19 ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারল না, তাহলে জাপান কি আগের মতো গবেষণায় উন্নত না?
এর উত্তর হলো, ভ্যাক্সিন নিয়ে জাপানের তিক্ত অভিজ্ঞতা এজন্য দায়ী। বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের উপর আস্থার হার সর্বনিম্ন জাপানে। একে এন্টি-ভ্যাক্স সেন্টিমেন্ট বলে। শুধু তাই নয়, জাপানে কোন ভ্যাক্সিন অনুমতি পেতে তা জাপানেই ক্লিনিকেল ট্রায়ালে উত্তীর্ণ হওয়ার আইন ছিল যা বার্ডস ফ্লু এপিডেমিকের সময় শিথিল করা হয়েছিল যার ফলে বর্তমানে স্বাস্থ্যকর্মীরা দেরিতে হলেও কোভিড19 ভ্যাক্সিন গ্রহণ করতে পারছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে সংশয়বাদীরা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। ভেবে অবাক হবেন, বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১৪৯ টি দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের আত্মবিশ্বাসকে গণনা করা হয়েছিল। জাপানের ৩০% এরও কম লোক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে ভ্যাকসিন নিরাপদ, গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর - আর আমেরিকায় সেটা ৫০% ।
জাপানে ৭০ এর দশকে ডিপথেরিয়া ভ্যাক্সিন নিয়ে দুজন শিশু মারা গেলে, সেখানে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ৮০ এর দশকে mmr (মিজেলস, মামপ্স, রুবেলা) ভ্যাক্সিন নিয়ে একজন মারা গেলে, তার পরিবার কে বেশ মোটা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় সরকারের। পরের ১৫ বছর ভ্যাক্সিন নিতে কাউকে বাধ্য করা হত না, ভ্যাক্সিন গ্রহণ ঐচ্ছিক ছিল। ফলে জাপানি মেয়েদের ভ্যাক্সিন গ্রহণের হার ১% এ নেমে আসে। কোভিড ১৯ রোগের ভ্যাক্সিন ফাইজার- বায়ো এনটেক কে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় সপ্তাহ পরে জাপান অনুমোদন দেয় । ব্যাপারটা মজার। অথচ সামনের জুলাই তে সেখানে অলিম্পিক গেমস হওয়ার কথা। ভ্যাক্সিন গ্রহণের জন্য সরকার জনগণকে নানাভাবে উৎসাহিত করছে। সেজন্য নিচের কার্টুনটি অন্যতম ।
এহেন বিরূপ পরিস্থিতি ই মূলতঃ জাপানে ভ্যাক্সিন তৈরির গবেষণার অন্তরায় । ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানজিস কোম্পানি জাপানের ভ্যাকসিন ডেভলপমেন্ট রেসে নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা এখনো ক্লিনিকেল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে । সবশেষে, জাপানের জনৈক বিজ্ঞানীর মতে, " আমরা যদি এর চেয়েও দ্রুত ভ্যাক্সিন তৈরি করি তবে তা অন্য কোনও করোনা ভাইরাস মহামারীর জন্য। " কিন্তু দানশীল জাপান ঠিক সময়ে উৎপাদন করেছে ও তা নিজেরা ব্যবহার না করে দান ও করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও জাপানের মানবিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে।
শুধু তাই নয়, ভারতে উৎপাদিত কোভ্যক্স এর অধীন এস্ট্রা জেনেকা 'র টিকা রপ্তানি জোর করে বন্ধ হয়ে গেলে জাপান হু কে ভ্যাক্সিন উৎপাদন করতে সাহায্যে এগিয়ে আসে। এর অধীনে হু এর বিশ্বব্যাপী দরিদ্র দেশগুলিতে করোনভাইরাস টিকা বিতরণে বাধা সৃষ্টিকারী একটি তহবিল ফাঁক বন্ধ করার লক্ষ্যে মোট $2.4 বিলিয়ন ডলার অনুদানের নেতৃত্ব দিয়েছে জাপান।
সূত্র, রয়েটার,
হেলথ এশিয়া প্যাসিফিক,
ব্লুম্বার্গ,
মন্তব্যসমূহ