স্ট্রোক কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়!

স্ট্রোক কি

স্ট্রোক প্রতিরোধ


স্ট্রোকের মুখের উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে ঝুলে পড়া, পেশী দুর্বলতা এবং পক্ষাঘাত।

একজন ব্যক্তির চোখের পাতা, গাল বা মুখ এক বা উভয় দিকে ঝুলে যেতে পারে এবং তাদের একটি অনিচ্ছাকৃত হাসি থাকতে পারে বা ইচ্ছাকৃতভাবে হাসতে অক্ষম হতে পারে।


ঝুঁকে পড়ার কারণে কথা বলতেও অসুবিধা হতে পারে।²


আপনি কি জানেন বেশিরভাগ স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য এবং যেগুলি ঘটে তার একটি বৃহৎ শতাংশ সঠিক যত্নের সাথে এখনই চিকিত্সাযোগ্য?


বলা হয়, স্ট্রোক বৃদ্ধ বয়সের অসুখ। তবে স্ট্রোক তরুণদের হবে না সেটি নয়, বয়স্ক লোকদের বেশি হয়।


স্ট্রোক সব সময় একটি জরুরি বিষয়। এটা কতটুকু হলো বা কত অল্প হলো বিষয়টি তা নয়। এটা বেড়ে যেতে পারে। সাধারণত স্ট্রোকের সঙ্গে একটি শব্দ চলে আসে- ট্রানজিয়ান ইসকেমিক অ্যাটাক।


এখানে ২০ থেকে ৩০ মিনিটে হয়তো রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যখন অ্যাকিউট স্ট্রোক পাচ্ছেন, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে না, আমি বলব হাসপাতালে যেতে হবে।


অ্যাকিউট ব্যবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ব্যবস্থাপনাটি আসেনি।


স্ট্রোকের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে, তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগী চিকিৎসা নিতে চলে আসলে ভালো হয়।


চিকিৎসকের কাছে আসার পর যদি লক্ষণগুলো আমরা পাই এবং যদি সিটি স্ক্যান করে নির্ণয় করতে পারি স্ট্রোক হয়েছে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। স্ট্রোক হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে।


স্ট্রোক হলো হঠাৎ করে হওয়া স্নায়ুবৈকল্য, যার স্থায়িত্বকাল হবে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা। এই স্নায়ুবৈকল্যটি প্রকাশ পায় একপাশ অবশ হয়ে, কথার জড়তা হয়ে বা পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে।


স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জটিলতা দেখা দেয় ও হঠাৎ করে মস্তিষ্কের একাংশ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।


স্ট্রোক হলে হঠাৎ করে তার কথাটা জড়িয়ে গেল, হঠাৎ করে তার কোনো পাশ অবশ হয়ে গেল-এ রকম হবে।


এই জিনিসগুলো যখন আসছে, তখন বুঝতে হবে স্নায়ুবৈকল্য হচ্ছে। এই পর্যায়টাকে আমরা বলি অ্যাকিউট। তখনই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।


স্ট্রোকের প্রধান কারণ কী?

স্ট্রোকের ২টি প্রধান প্রকার রয়েছে:

  1. -ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং
  2. -হেমোরেজিক স্ট্রোক।

তারা বিভিন্ন উপায়ে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।

ইস্কেমিক স্ট্রোক

এটা হল সবচেয়ে বেশি সংঘটিত স্ট্রোক। রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেনের প্রবাহ বন্ধ হলে এগুলি ঘটে।


ইসকেমিক স্ট্রোক, যেখানে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়, এটি শতকরা ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে হয়।


এই রক্ত জমাট বাঁধা সাধারণত এমন জায়গায় হয় যেখানে ধমনীগুলি সময়ের সাথে সংকীর্ণ বা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে যা প্লেক নামে পরিচিত চর্বিযুক্ত জমা হয়ে । এই প্রক্রিয়াটি এথেরোস্ক্লেরোসিস নামে পরিচিত।


বয়স বাড়ার সাথে সাথে ধমনীগুলি স্বাভাবিকভাবেই সংকীর্ণ হতে পারে, তবে কিছু জিনিস রয়েছে যা বিপজ্জনকভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে ত্বরান্বিত করে।


এর মধ্যে রয়েছে:

  • ধূমপান
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • স্থূলতা
  • উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা
  • ডায়াবেটিস
  • অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণ

ইস্কেমিক স্ট্রোকের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হল এক ধরনের অনিয়মিত হৃদস্পন্দন যাকে বলা হয় অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন।


এটি হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে যা ভেঙে যায় এবং মস্তিষ্কে সরবরাহকারী রক্তনালীতে শেষ হয়।

হেমোরেজিক/ রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক

রক্তনালি ফেটে গিয়ে হয়-হেমোরোজিক স্ট্রোক, এটি শতকরা ১৫ ভাগ হয়। এর প্রধান কারণ হল-


উচ্চ রক্তচাপ, যা মস্তিষ্কের ধমনীগুলিকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং তাদের বিভক্ত বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি করে তোলে।


উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায় এমন জিনিসগুলির মধ্যে রয়েছে:


  • অতিরিক্ত ওজন।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা
  • ধূমপান
  • ব্যায়ামের অভাব
  • উদ্বেগ বা চাপ
  • রক্তনালীর বেলুনের মতো প্রসারণ (মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম) বা
  • মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে গঠিত রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণেও হেমোরেজিক স্ট্রোক হতে পারে।


স্ট্রোকের লক্ষন

BE-FAST উপসর্গ কী

Balance/ভারসাম্য, Eye/চোখ, Face/মুখ, Arm/বাহু, Speech/কথা, Time/,সময় নির্দেশ করে; যে কারো স্ট্রোক হতে যাচ্ছে কিনা।


FAST অ্যালগরিদম (মুখ, বাহু, কথা, সময়) তীব্র স্ট্রোকযুক্ত ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে সহায়তা করে। FAST দ্বারা ক্যাপচার করা তীব্র ইস্কেমিক স্ট্রোকের রোগীদের সনাক্ত করা হয়।¹

হঠাৎ করে শরীরের একাংশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া অথবা কথা জড়িয়ে যাওয়া বা একেবারেই কথা বলতে না পারা।


স্ট্রোক হলে মাথা ঝিমঝিম করে, প্রচণ্ড মাথাব্যথার সঙ্গে ঘাড়, মুখ ও দুই চোখের মাঝখান পর্যন্ত ব্যথা হয়।


হাঁটতে বা চলাফেরা করতে এবং শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হয়। কথাবার্তা জড়িয়ে যায়, অস্পষ্ট শোনায়। শরীরের একপাশ দুর্বল, অসাড় হয়।


যদি আপনার স্ট্রোকটি আপনার মস্তিষ্কের ডানদিকে প্রভাবিত করে তবে আপনার শরীরের বাম দিকে আপনার গতিবিধি এবং সংবেদন নষ্ট হতে পারে।


যদি আপনার স্ট্রোকটি আপনার মস্তিষ্কের বাম দিকের মস্তিষ্কের টিস্যুগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তবে আপনার শরীরের ডানদিকে আপনার চলাচল এবং সংবেদন প্রভাবিত হতে পারে।


আপনার মস্তিষ্কের বাম দিকে মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণে কথা এবং ভাষার ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে।

স্ট্রোকের ধরন

স্ট্রোক দুই ধরনের হয় যা এর কারনে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্ট্রোক কাদের হয়!

বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে,যদি পুরুষ হন তবে আশঙ্কা রয়েছে, নারীর বেলায় কম হয়।

  • হৃদরোগী,
  • উচ্চরক্তচাপ,
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী,
  • কোলেস্টেরল হলে ,
  • স্থূল হলে,
  • ধূমপান করলে,
  • জীবন-যাপনে যদি অ্যাকটিভ না হন,
  • বসে কাজ করা হয়,
  • তারা স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন।

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন এই চারটি বিষয় যার আছে, তার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

  1. হৃদরোগী,
  2. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী,
  3. উচ্চরক্তচাপের রোগী ও
  4. ধূমপায়ীরা।


স্ট্রোক প্রতিরোধ

লিঙ্গ, পারিবারিক ইতিহাস, যেগুলো পরিবর্তন করতে পারব না সেগুলো সে রকমই থাকবে। কিন্তু যেগুলো পরিবর্তন করতে পারব সেগুলোর ক্ষেত্রে,


  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা ,
  • সচল জীবনযাপন করা ,
  • মোটা না হওয়া ,
  • ডায়াবেটিস থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণ রাখা ,
  • ধূমপানের মতো বাজে অভ্যাস ছেড়ে দেয়া ,
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ,
  • কোলেস্টেরল থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখা । পাশাপাশি নিয়মিত চেকআপ করানো

প্রতিরোধের অন্যান্য নিয়ম:

নিয়ম মেনে চললে স্ট্রোক অনেকাংশেই প্রতিরোধযোগ্য। যেমন

  1. অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার না খাওয়া এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা,
  2. নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা,
  3. প্রতিদিন কিছু শারীরিক পরিশ্রম করা বা সময় করে হাঁটা,
  4. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা,
  5. শাকসবজি, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি মাছ, দুধ, ভুসিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

স্ট্রোক প্রতিরোধে সবচেয়ে ভাল উপায় হ'ল স্বাস্থ্যকর ডায়েট খাওয়া, নিয়মিত অনুশীলন করা এবং ধূমপান না করা। এই জীবনযাত্রা আপনার সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করতে


একজন সাধারন মানুষকে স্ট্রোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে কী ধরনের জীবনধারা মেনে চলা আবশ্যক হতে পারে যেমন:


রক্তের ধমনীগুলি যদি ফ্যাটযুক্ত পদার্থ (এথেরোস্ক্লেরোসিস) দ্বারা আটকে না থাকে ও উচ্চরক্তচাপ মুক্ত থাকা যায় তবে স্ট্রোকের ঝুঁকি একেবারে কমে যাবে।


আরো বিস্তারিত বলি, প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কাপ ফল ও শাকসব্জী খান, সপ্তাহে দু'বার বা তিনবার মাছ খান এবং পুরো শস্য এবং স্বল্প ফ্যাটযুক্ত দুধের খাবার দৈনিক পরিবেশন করুন।


সাথে ব্যায়াম করুন - দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করুন। লবন পরিহার করুন, উচ্চ লবনাক্ত খাবার বাদ দিন। ধূমপান ছেড়ে দিন।


উচ্চ লবনাক্ত খাবার কোনগুলো? Next »


«Previous স্ট্রোক হওয়ার তাৎক্ষণিক লক্ষণ ও করণীয়



সূত্র, জন হোপকিনস হাসপাতাল, মায়ো ক্লিনিক।
1-https://www.ahajournals.org/doi/10.1161/STROKEAHA.116.015169#:~:text=BE%2DFAST%20indicates%20Balance%2C%20Eyes,Institutes%20of%20Health%20Stroke%20Scale.
2-Stroke face droop and paralysis: What stroke looks like - Medical News Today

মন্তব্যসমূহ