অটিজম চিকিৎসায় অগ্রগতি



অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) একটি উন্নয়নমূলক অবস্থা যা প্রভাবিত করে কিভাবে কেউ তার চারপাশের জগতকে কীভাবে চিন্তা করে, অনুভব করে এবং দেখে। এটি যোগাযোগ, সামাজিক দক্ষতা এবং পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণে অসুবিধা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। একে স্পেকট্রাম বলা হয়, কারণ প্রতিটি অটিস্টিক ব্যক্তির বিভিন্ন শক্তি, লক্ষ্য এবং নির্দিষ্ট সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।



অটিজম কি চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যায়? অটিজমের জন্য কী ধরণের চিকিৎসা করা হয়?

প্রায়ই আমাদের এ ধরনের প্রশ্ন রুগীদের আত্নীয়স্বজন থেকে শুনতে হয়। 

এই শব্দটি বলতে অনেকে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি মূলত এক ধরণের স্নায়ুবিক বিকাশ-জনিত সমস্যা। 

এটি একটি মস্তিষ্কের রোগ যা সাধারণত: একজন ব্যক্তির অন্যদের সাথে কথা বলার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। 

চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসা যায়। তার প্রতিভাকে বিকশিত করা যায় উপযুক্ত সহযোগিতার মাধ্যমে।  

বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে একজন এএসডি বা অটিজমে আক্রান্ত। 

অটিজম এর বৈশিষ্ট

আত্মসংবৃতি বা আত্মলীনতা (অটিজম নামেও পরিচিত) বলতে একটি মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ততাকে বোঝায়, যা বয়স তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। আত্মসংবৃত শিশুরা (যাদেরকে আত্মসংবৃত, আত্মলীন বা ইংরেজি পরিভাষায় অটিস্টিক বলা হয়) সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়।

অটিজম রয়েছে এমন শিশুদের ভাষা শিখতে সমস্যা হয়, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা বা সংবেদনহীনতা থাকতে পারে, পাশাপাশি কখনো কখনো আচরণের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না, চোখে চোখ রেখে তাকায় না; কারও কারও অটিজমের সঙ্গে অতিচঞ্চল অমনোযোগিতা (এডিএইচডি) বা খিঁচুনি থাকতে পারে।


আমাদের না জানার কারনে, যথেস্ট প্রতিভা থাকার পরও এই রোগের ক্ষেত্রে শিশুর সামাজিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। এ ধরনের শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলো করতে পারে না। অন্যদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতেও পারে না। এরা একা একা থাকতে ভালবাসে। 

শিশুরা সাধারণত তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। আশেপাশের সব কিছু দেখে ও শুনে তার ভাষার বিকাশ ঘটে। অটিজম আক্রান্ত শিশুটির মধ্যে এখানে সীমাবদ্ধতা থাকে। এক্ষেত্রে শিশু ঠিকমতো সামাজিক যোগাযোগ করতে পারে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এ ধরনের শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।


অটিজমের কারণ: 


বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরও অটিজম কেন হয়, তা এখনো পরিষ্কারভাবে জানা সম্ভব হয়নি। 
অটিজমের ঝুকি বৃদ্ধিরও কোন একক কারণ নেই, তবে এটি সাধারণভাবে বলা হয় যে এটি মস্তিষ্কের গঠন বা ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতার কারণে ঘটে। মস্তিষ্ক স্ক্যান করে নিউরোটাইপিকাল শিশুদের তুলনায় অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের আকৃতি এবং গঠনে পার্থক্য দেখা যায়। 
তবে ধারণা করা হয় যে, কিছু জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণে অটিজম দেখা দিতে পারে। তন্মধ্যে, মায়ের গর্ভাবস্থায় শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে নিম্ন লিখিত কারনসমূহ,


  1. গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল
  2. কিছু মৃগী রোগের ওষুধ সেবন করলে, 
  3. গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত স্থূলতা
  4. ডায়বেটিস রোগ
  5. রুবেলা 


এই প্রভাবগুলি একটি শিশুর অটিজমের কারন হয়ে থাকে, কিন্তু এই প্রভাবগ্রস্ত শিশুরা সবাই অটিজমে আক্রান্ত হবে ব্যাপারটা তাও নয়।


গবেষণায় দেখা গেছে যে, অটিজম, 
  1. জেনেটিক এবং 
  2. ননজেনেটিক বা পরিবেশগত প্রভাবের কারনে হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু জিন পরিবর্তন হয়েছে এমন ব্যক্তিদের পাওয়া যেতে পারে যাদের এই ব্যাধি নেই। একইভাবে, অটিজমের জন্য পরিবেশগত ঝুঁকির কারণের মুখোমুখি প্রত্যেকেই এই ব্যাধি বিকাশ করবে না।

অটিজোমের পরিবেশ গত কারনঃ


গবেষনায় দেখা গেছে পরিবেশগত কারনে অটিজমের ঝুকি বাড়তে পারে আবার কমতেও পারে।

অটিজম কি বংশগত রোগ

অটিজম মোটেই একটি বংশগত রোগ নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ বাবা মায়েরও অটিস্টিক শিশু হতে পারে। অনেক শিশু জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে। এতেই কিন্তু বোঝা যায় না যে শিশুটি অটিস্টিক।


অটিজমের ঝুঁকি বৃদ্ধির কারনসমূহ -

  • বেশী বয়সে সন্তান ধারন
  • গর্ভাবস্থা এবং জন্মগত জটিলতা (প্রিমেচিউর [২৬ সপ্তাহের আগে], কম ওজন নিয়ে জন্ম, একাধিক গর্ভধারণ [যমজ, তিনগুণ, ইত্যাদি])
  • এক বছরের কম ব্যবধানে সন্তান ধারন।
  • গর্ভবতী মহিলারা যারা কিছু ওষুধ বা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন, যেমন অ্যালকোহল বা জীবাণুনাশক ওষুধ, তাদের অটিস্টিক শিশু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা স্থুলতা।
  • কিছু পরিচিত জেনেটিক ডিসঅর্ডার অটিজমের জন্য বাড়তি ঝুঁকির সাথে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ফ্র্যাগাইল এক্স সিনড্রোম (যা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা সৃষ্টি করে) এবং টিউবারাস স্কেলেরোসিস (যা মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে টিউমার বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে)।


অটিজম এর প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ 

অটিজমের লক্ষণ সমূহ: 



অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটা শিশু মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়।  
অর্থাৎ অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। তাই শিশুর বয়স একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে এই লক্ষণগুলো। মা-বাবা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারেন অন্য শিশুদের সঙ্গে তার নিজের বাচ্চার আচরণগত সমস্যা।   শিশুদের এক থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই অটিজমের লক্ষণ গুলো ধরা যায়। 

অটিজমের প্রধান লক্ষণ সমূহ : 

  1. ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।
  2. ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেই সঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারেনা। 
  3. চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারেনা।
  4.  ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।
  5. অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেনা।
  6. একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোন পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
  7. একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।
  8. বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।
  9. কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।

সমবয়সীদের সাথে না থাকা

অটিস্টিক শিশুরা কখনই তার সমবয়সী শিশুদের সাথে মিশবে না। তাদের সাথে খেলা করা, গল্প করা বা তাদের সঙ্গ তার ভালো লাগবে না। কোন আগ্রহ থাকবে না তার সমবয়সীদের সাথে। সে সব সময় একা একা থাকার চেষ্টা করবে। ঘরের একটা নির্দিষ্ট স্থানে নিজের মত থাকার চেষ্টা করবে।

পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ

এই ধরণটা হবে তার আচরণের অনেক কিছুই সে বার বার করবে। যেমন তাকে একটা খেলনা দিলে সেটা সে এক ভাবে খেলবে। তাকে আবার অন্য একটা খেলনা দিলে সেটাও সে ঐ একই ভাবে খেলবে। অর্থাৎ তার সব খেলনা নিয়ে খেলার প্যাটার্ন একই থাকবে। যদিও আপনি তাকে ভিন্ন নিয়মে খেলার দুটি খেলনা তাকে দিয়েছেন। বা তাকে একটা গ্লাসে পানি আনতে বললে একই ভাবে সে বার বার পানি আনবে। 

চোখে চোখ রেখে কথা না বলা

অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না। যদি আপনি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন বা কাজ করার চেষ্টা করেন তাহলে সে আপনার চোখের দিকে তাকাবে না। তার 'আই কন্টাক্ট' থাকবে না।

কথা বলায় জড়তা

কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলায় জড়তা থাকতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাবে শিশু একেবারে কথায় বলছে না বা একটা বয়স পর্যন্ত কথা বললেও পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে।

ধৈর্য কম থাকা

ধৈর্য কম থাকবে

এই শিশুদের ধৈর্য কম থাকবে। এমনকি একটা খেলনা দিলে সেই খেলনার প্রতি ধৈর্য নিয়ে এক মিনিট খেলা করাটা তার জন্য কঠিন হবে।

এক-দুই মিনিট পর তার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। তার কোন জিনিসের প্রতি মনোযোগের দুর্বলতা থাকবে।

সামাজিকীকরণ অনুপস্থিত থাকবে

সামাজিকভাবে যেসব আচরণগুলো শিশুদের শেখানো হয় সেগুলোর প্রতি তার চরম অনীহা থাকবে।

পরিবেশ-পরিস্থিতি ভেদে পরিবার-পরিজন বা বড়-ছোটদের সাথে কি আচরণ করতে হয় এটা তারা বুঝে উঠতে পারে না। এক কথায় বলতে গেলে দুই বা তিন বছর বয়সী একটা বাচ্চার যে আচরণ হওয়া উচিত, অটিজমে আক্রান্ত একটা বাচ্চার মধ্যে সেটা থাকবে না। তবে অনেকে অন্তর্মুখী এবং অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চার বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য করতে পারেন না। 

অটিজম কত প্রকার কি কি?

অটিজম ৫ প্রকার। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের প্রধান প্রকারসমূহ।

Asperger সিনড্রম

যদিও Asperger's syndrome শব্দটি আগে বেশ প্রচলিত ছিল, তবে এই শব্দটি আসলে আর চিকিৎসা পেশাদারদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় না। DSM-5 ডায়াগনস্টিক ম্যানুয়াল দ্বারা এটিকে লেভেল 1 অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার হিসাবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তবুও, অ্যাসপারজার সিনড্রোম অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে - আসলে, অটিজম সম্প্রদায়গুলি এটি লেভেল 1 স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের চেয়ে প্রায়শই ব্যবহার করে।

লেভেল 1 স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একটি শিশুর গড় বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তিশালী মৌখিক দক্ষতা থাকবে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সাধারণভাবে, লেভেল 1 অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একটি শিশু নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি প্রদর্শন করবে:

  • চিন্তা ও আচরণে অনমনীয়তা
  • ক্রিয়াকলাপগুলির মধ্যে স্যুইচ করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ
  • কার্যনির্বাহী কার্যকারিতা সমস্যা
  • ফ্ল্যাট একঘেয়ে বক্তৃতা, তাদের বক্তৃতায় অনুভূতি প্রকাশ করতে অক্ষমতা, বা তাদের তাত্ক্ষণিক পরিবেশের সাথে মানানসই তাদের পিচ পরিবর্তন
  • স্কুল বা বাড়িতে সমবয়সীদের সাথে যোগাযোগ করতে অসুবিধা
  • রেট সিনড্রোম

    রেট সিনড্রোম একটি বিরল নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা শৈশবকালে লক্ষ্য করা যায়। ব্যাধিটি বেশিরভাগই মেয়েদের প্রভাবিত করে, যদিও এটি এখনও ছেলেদের মধ্যে নির্ণয় করা যেতে পারে। Rett সিনড্রোম এমন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে যা একটি শিশুর জীবনের প্রায় প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে। ভাল জিনিস হল আপনার সন্তান এখনও উপভোগ করতে পারে এবং সঠিক যত্ন সহ একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। আপনি একসাথে পারিবারিক সময় কাটাতে পারেন এবং শিশুকে যা উপভোগ করে তা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সহায়তা প্রদান করতে পারেন। রেট সিন্ড্রোমের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • মনের উঠানামা এবং সমন্বয়ের অভাব
  • যোগাযোগ এবং বক্তৃতা সঙ্গে চ্যালেঞ্জ
  • কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট
  • চাইল্ডহুড ডিসইন্টেগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার (CDD)

    চাইল্ডহুড ডিসইন্টেগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার (সিডিডি), যা হেলার সিনড্রোম বা বিচ্ছিন্ন সাইকোসিস নামেও পরিচিত, এটি একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা ভাষা, মোটর দক্ষতা, বা সামাজিক ক্রিয়াকলাপের বিকাশগত সমস্যাগুলির বিলম্বিত সূত্রপাত দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের অভিজ্ঞতা হয় শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রগুলিতে তিন বছর বয়সের পরে এবং ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত হওয়ার জন্য৷ বিকাশগত ক্ষতি এমন পিতামাতাদের জন্য খুব হৃদয়বিদারক হতে পারে যারা জানেন না যে তাদের সন্তানের অটিজম চ্যালেঞ্জগুলি বরাবরই ছিল৷

    CDD এর কারণ অজানা যদিও গবেষকরা এটিকে মস্তিষ্কের নিউরোবায়োলজির সাথে যুক্ত করেছেন। ছেলেদের মধ্যে শৈশব বিচ্ছিন্ন ব্যাধি বেশি দেখা যায়। ডিসঅর্ডারের প্রতি ১০ টি ক্ষেত্রে নয়টি ছেলে হবে এবং শুধুমাত্র একটি মেয়ে হবে।

    CDD-তে, ব্যাধি শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ থাকবে এবং তাদের জীবনের দুটিরও বেশি উন্নয়নমূলক দিকে হঠাৎ করেই রিগ্রেশন শুরু হবে। শিশু নিম্নলিখিত দক্ষতা এবং ক্ষমতা হারাতে পারে:

  • পায়খানা করার দক্ষতা যদি তারা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে
  • অর্জিত ভাষা বা শব্দভান্ডার
  • সামাজিক দক্ষতা এবং অভিযোজিত আচরণ
  • কিছু মোটর দক্ষতা
  • ক্যানার সিনড্রোম

    ১৯৪৩ সালে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার ক্যানারের সিন্ড্রোম আবিষ্কার করেছিলেন যখন তিনি এটিকে শিশুর অটিজম হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। ডাক্তাররা এই অবস্থাটিকে ক্লাসিক অটিস্টিক ডিসঅর্ডার হিসাবে বর্ণনা করেন। ক্যানার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা এই ব্যাধির অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে আকর্ষণীয়, সতর্ক এবং বুদ্ধিমান দেখাবে যেমন:

  • অন্যদের সাথে মানসিক সংযুক্তির অভাব
  • যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়া চ্যালেঞ্জ
  • অনিয়ন্ত্রিত বক্তৃতা
  • বস্তু হ্যান্ডলিং সঙ্গে আবেশ
  • অন্যান্য ক্ষেত্রে শেখার বড় অসুবিধা সহ উচ্চ মাত্রার রোট মেমরি এবং ভিসুস্পেশিয়াল দক্ষতা
  • ব্যাপক উন্নয়নমূলক ব্যাধি - অন্যথায় নির্দিষ্ট নয় (PDD-NOS)

    প্যারাভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার - অন্যথায় নির্দিষ্ট নয় (PDD-NOS) হল একটি হালকা ধরনের অটিজম যা বিভিন্ন উপসর্গ উপস্থাপন করে। সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলি হল সামাজিক এবং ভাষার বিকাশে চ্যালেঞ্জ।

    আপনার সন্তানের ভাষা বিকাশ, হাঁটা এবং অন্যান্য মোটর দক্ষতা বিলম্বিত হতে পারে। আপনি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে এবং শিশুটি কোন ক্ষেত্রে ঘাটতি প্রদর্শন করে, যেমন অন্যদের সাথে আলাপচারিতা করে তা লক্ষ্য করে আপনি এই ধরনের অটিজম সনাক্ত করতে পারেন। PDD-NOS কে কখনও কখনও "সাবথ্রেশহোল্ড অটিজম" হিসাবে উল্লেখ করা হয়, কারণ এটি এমন একটি শব্দ যা একজন ব্যক্তির বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যার কিছু কিছু কিন্তু সমস্ত লক্ষণ নেই।

    অটিজম এর চিকিৎসা কীভাবে হতে পারে!


    অটিজম উল্টে দেবার (পরিবর্তন করা) কোনও চিকিৎসা নেই। লভ্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতির লক্ষ্য হল তাদের দুর্বলতা কমানো, স্বাবলম্বন এবং সম্ভাবনা বাড়ানো। অটিজম-এর সাথে মৃগীরোগ এবং অস্বাভাবিক সক্রিয়তার নির্দিষ্ট উপসর্গ যাদের থাকে থেরাপিগুলি সচরাচর তাদের জন্য মানানসই করা এবং ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই শিশুকে একটা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। এরপর একজন শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।


    1. শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য শিশুর মা-বাবাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তাঁরা বাড়িতে শিশুর আচরণের পরিবর্তন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
    2. স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া ও শিশুকে সামাজিক রীতিনীতি শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যে কাজটি সে ভালো পারে বা যে বিষয়টিতে তার উৎসাহ আছে, সে বিষয়টির দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হয়।
    3. শিশুর ভাষাশিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে
    4. প্রয়োজনে রোগলক্ষণ অনুযায়ী কিছু ওষুধ ও থেরাপি (অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি) প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। 
    5. ওষুধ অটিজমের পরিচর্যার সহায়ক পদ্ধতিমাত্র। মূল পরিচর্যা হল প্রশিক্ষণ, শিক্ষা আর বিভিন্ন থেরাপি। ওষুধ প্রয়োগ করার অর্থ এই নয় যে ওষুধ খেলে শিশুর অটিজমের সব বৈশিষ্ট্য চলে যাবে বা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে কখনো কখনো ওষুধ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। অনেক সময় ওষুধ ছাড়া প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা থেরাপি প্রয়োগই করা যায় না।


    অটিজম-এ ওষুধ প্রয়োগ 

    অটিজম-এর জন্য কোনও প্রেসক্রাইব করা ওষুধ নেই বলা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ কিছু অবস্থার জন্য যেগুলি মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণাত্মক, একজন বিশেষজ্ঞ ওষুধের বিধান দিতে পারেন। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস (অবসাদ-প্রতিরোধী), অ্যান্টিকনভালস্যান্টস (খিঁচুনি বা তড়কা প্রতিরোধী), উদ্বেগ-প্রতিরোধী এবং অস্বাভাবিক সক্রিয়তার জন্য উদ্দীপক ওষুধ হচ্ছে ওষুধ প্রয়োগের কিছু পদ্ধতি যার জন্য পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।

    অটিজমের সঙ্গে যেকোনো সহযোগী সমস্যা (কোমর্বিডিটি) থাকলে ওষুধ দিতে হয়। যেমন, 

    • খিঁচুনি,
    • অতিচঞ্চলতা,
    • বুদ্ধির স্বল্পতা,
    • উদ্বিগ্নতা,
    • বিষণ্নতা,
    • আচরণজনিত সমস্যা,
    • আগ্রাসী আচরণ,
    • রেগে যাওয়া,
    • টিক ডিসঅর্ডার,
    • ঘুমের সমস্যা বা
    • অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা।

    অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর এমন কোনো আচরণ, যা সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, যাকে বলে চ্যালেঞ্জিং বিহেভিয়ার। যেমন,
    • নিজেকে আঘাত করা,
    • মেঝেতে মাথা ঠোকা,
    • নিজের হাতে দাঁত দিয়ে আঘাত করা,
    • অভিভাবককে আঘাত করা,
    • অন্যকে দাঁত দিয়ে আঘাত করা,
    • নিজের চুল আগ্রাসীভাবে ছিঁড়ে ফেলা, 
    • খিটখিটে মেজাজ বা ইরিটেবিলিটি কমানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশনা রয়েছে।

    অটিজমের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একজন শিশু বা ব্যক্তি যখন তার আচরণগত সমস্যার জন্য নির্ধারিত প্রশিক্ষণ বা থেরাপি নিতে অপারগ বা নিজের দৈনন্দিন কাজগুলো করতেই পারছে না, তখন ওষুধ প্রয়োগ করে তাকে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হয়, নিজের কাজগুলো করার জন্য সক্ষম করার চেষ্টা করা হয়।

    অটিজম এ আচরণগত থেরাপি


    এটা একটা পদ্ধতি যা কাঙ্ক্ষিত আচরণ শক্তিশালী করা এবং অবাঞ্ছিত অথবা অগ্রহণযোগ্য আচরণ কমানোর দিকে লক্ষ্য রাখে। বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় আচরণ টেনে বার করতে এবং শক্তিশালী করতে যার অন্তর্ভুক্ত মূল প্রতিক্রিয়া প্রশিক্ষণ এবং ইতিবাচক আচরণ এবং ভরসা, এগুলো হচ্ছে তালিকার মাত্র কয়েকটি নাম।      
     

    অটিজম এ জ্ঞানমূলক আচরণ থেরাপি

    থেরাপির এই রীতি ব্যবহার, চিন্তা এবং অনুভূতিগুলির উপর নজর দেয় এবং ব্যক্তিকে চিন্তা এবং ব্যবহার যা সমস্যামূলক পরিস্থিতি বা অনুভূতিগুলির দিকে চালিত করে সেগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। এটা তাঁদের অনুভূতিগুলি চেনাতে এবং উদ্বেগের পরিস্থিতিগুলির সাথে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে।

    অটিজম এ যুগ্ম মনোযোগ থেরাপি

    এটা থেরাপির একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক যেহেতু এটা আন্তঃব্যক্তিগত মেলামেশা এবং পারস্পরিক ক্রিয়ার উপর মনোযোগ দেয়। থেরাপির এই পদ্ধতির দীর্ঘস্থায়ী ফল থাকে, যা এটাকে অত্যন্ত কার্যকর করে। দিকগুলি যেগুলির উপর মনোযোগ দেয় সেগুলির মধ্যে আছে যোগাযোগ এবং ভাষা এবং ভাগ করা মনোযোগ। ধারণাগুলি যেগুলির উপর প্রয়োগ করা হয় তার মধ্যে আছে মানুষ এবং বস্তুগুলির মধ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং সরানো।
     

    অটিজম এ পেশাগত থেরাপি

    পেশাগত থেরাপি শিশুদের নিয়মিত কাজ এবং রোজকার রুটিন সম্বন্ধে ক্ষমতা ও চাহিদাগুলি খোঁজা এবং সম্পাদন করার উপরে মনোযোগ দেয়। থেরাপিস্ট বা বিশেষজ্ঞরা কতগুলি দিকের উপর কাজ করেন যেমন শিশুটির স্বাধীনভাবে পোশাক পরতে এবং খাবার খেতে, ব্যক্তিগত তদারক এবং যোগাযোগ, এবং অন্যান্য শারীরিক কাজকর্ম করতে সক্ষম হওয়া।    
     

    অটিজম এ শারীরিক থেরাপি

    অটিজম (আত্মমগ্নতা) পরিসরে যাঁরা থাকেন যেহেতু চলাফেরা হচ্ছে তাঁদের মুখোমুখি হওয়া একটা সাধারণ সমস্যা, বেশির ভাগ ব্যক্তি শারীরিক থেরাপি গ্রহণ করেন। এই পদ্ধতি শক্তি গড়ে তুলতে এবং দেহভঙ্গী উন্নত করতে, এবং পেশীগত দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। যাই হোক, কোনও অকাট্য প্রমাণ নেই যা প্রমাণ করতে পারে যে এই থেরাপি চলাফেরায় কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আনতে পারে কিনা। 
     

    অটিজম এ সামাজিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ

    সামাজিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ জোর দেয় শিশুদের ব্যবহার গড়ে তোলা এবং আরও বেশি সর্বব্যাপী পারস্পরিক ক্রিয়া অনুভব করতে তাদের সক্ষম করা। এটা কাঙ্ক্ষিত ধরণের উপর জোর দেয় এবং সেগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে। কিছু দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত কথাবার্তার উদ্যোগ নেওয়া, জ্বালাতন (বিদ্রূপ) সামলানো এবং খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব দেখানো।  

    অটিজম এ কথা ও ভাষা থেরাপি

    এই থেরাপি স্বাভাবিক আদানপ্রদান অনুভব করতে সক্ষম হওয়ার জন্য মৌখিক বা বাচনিক এবং অ-মৌখিক যোগাযোগ উভয়ের উপর নজর দেয়। উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিদের তাদের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা, বস্তুগুলির নাম বলা, অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করা এবং কণ্ঠস্বরের মাত্রার ওঠা-নামা আরও ভালোভাবে করতে সাহায্য করা। এটা আরও বেশি চোখের সংযোগ এবং ভাবভঙ্গী অনুমোদন করা এবং বার্তা জানাতে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতে সক্ষম হওয়াও অন্তর্ভুক্ত করে।   

    অটিজম এ পুষ্টি থেরাপি

    যেসমস্ত ব্যক্তির অটিজম (আত্মমগ্নতা/মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব) আছে তাঁদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে পুষ্টিবিধানগত পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলির মধ্যে কয়েকটির পিছনে সত্যিই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সমর্থন আছে। লক্ষ্যটা হল নিশ্চিত করা যে অটিজম থাকা মানুষ যেন একটা স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খান এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি পান। অটিজম থাকা ব্যক্তিদের কয়েক ধরণের খাদ্যের প্রতি বিতৃষ্ণা থাকতে পারে (উদাহরণস্বরূপ, নরম এবং মণ্ডের মত খাবার)। প্রায়ই, অটিজমযুক্ত মানুষদের খাবারের সাথে মানসিক সংযোগ থাকার প্রবণতা থাকে – সেগুলিকে বমি, বমিভাব এবং ব্যথার সাথে জড়িত করে। কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে অটিজমযুক্ত মানুষদের অপেক্ষাকৃত পাতলা হাড় থাকার প্রবণতা থাকে। এইধরণের সমস্যাগুলি সামলাতে নিশ্চিত করা যে কোনও পুষ্টিগত অভাব নেই সেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। 


    বৈচিত্র্যযুক্ত অন্যান্য থেরাপিগুলি মেলানো হয় এবং সময়ের চাহিদার সঙ্গে মানানসই করতে সামান্য বদল করা হয়। পাঠক্রম-সংক্রান্ত ঘাটতির জন্য স্কুল-ভিত্তিক থেরাপি, বাবা-মা-মধ্যস্থতা করা থেরাপি এবং যুগ্ম মনোযোগ থেরাপি হচ্ছে এগুলির মধ্যে কয়েকটা। যাই হোক, প্রাথমিক দক্ষতাগুচ্ছ এবং আচরণগত সমস্যা যেগুলির সাথে মোকাবিলা করা হয়, মূলতঃ একই রকম থাকে।     

    অটিজম-এর জন্য জীবনধারা সামলানো

    গোড়ার দিকের বৎসরগুলিতে অটিজম বা মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব সামলানো একটা শ্রমসাধ্য কাজ হতে পারে, ব্যক্তি এবং পরিবার উভয়ের জন্য। অবস্থাটার নতুনত্ব এবং এর প্রভাবের কারণে, অভিজ্ঞতার প্রকৃতি এবং এর চাহিদাগুলি এবং যেধরণের সহায়তা দরকার, এটা শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবে ক্ষতি করতে পারে। যাই হোক, একেবারে গোড়ার পর্যায়গুলিতে আক্রমণাত্মক হওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসার সঠিক প্রকার, এবং পরিমাণ যোগান দেওয়ার মধ্যে মূল সমাধান থাকে।
    অটিজম সামলানোয়, নিম্নরূপ ব্যবস্থাপনার দুটো প্রধান পদ্ধতি থাকেঃ

    ১, অটিজম আক্রান্তদের শিক্ষাগত ব্যবস্থাপনা 

    যেসমস্ত ব্যক্তি মানসিক প্রতিবন্ধিত্বের অবস্থানে সীমারেখায় কিংবা অত্যন্ত কম মাত্রায় পড়েন, মূল ধারার স্কুলশিক্ষা একটা সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে। এটা একটা শেখার কৌশল হিসাবে সামাজিক পারস্পরিক ক্রিয়া এবং অনুকরণ করা সহ শেখার অন্যান্য পদ্ধতিগুলির আরও বড় সুযোগগুলির প্রতি শিশুদের প্রভাবের আওতায় আসায় সাহায্য করে। যাই হোক, তীব্র অটিজম (আত্মমগ্নতা) থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, একটা বিশেষ স্কুল যা এই ধরণের শিশুদের সামলানোর জন্য প্রস্তুত এবং তুলনামূলকভাবে স্বাধীন জীবনযাপন করতে এবং তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছোতে ছাঁচে ঢালে, বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। অটিজম থাকা শিশুদের সাথে আলাদাভাবে কাজ করা শুধুমাত্র তাদের ধারণাগুলির বিষয়ে কাজ করতে সাহায্য করে তাই নয় কিন্তু তাদের শক্তির উপরে জোর দেওয়ার ব্যাপারেও প্রস্তুত করে এবং তাদের উপায়ের সন্ধান দেয় যেখানে তারা সম্ভাব্য বিষয় অনুসন্ধান করতে পারে এবং সম্ভবতঃ তাদের ভবিষ্যতের একটা পথ খুঁজে দিতে পারে।

    ২, আচরণগত ব্যবস্থাপনা

    আত্মমগ্ন শিশুরা প্রত্যাশিত উপায়ে বেড়ে ওঠে। একটা কাঠামোবদ্ধ শিক্ষাদান পদ্ধতি, সেজন্য, তাদের সঙ্গে সাধারণতঃ প্রযুক্ত করা হয়। এই শিক্ষা পদ্ধতি ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং পরিবেশ একই সঙ্গে গড়ে তুলতে কাজ করে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তিদের পরিকল্পনা, সংগঠন এবং তাদের কাজকর্মের অনুক্রম আরও ভাল করে পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে। পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করা, কাজের সময়সূচী পরিকল্পনা করা এবং বিকাশের কৌশলগুলি যা ব্যক্তির পক্ষে কাজ করে, সেগুলি হল আচরণগত ব্যবস্থাপনার কয়েকটি প্রধান উদ্দেশ্য।   

    আত্মমগ্নতা থাকা একজন ব্যক্তির জীবনধারা সামলানো হচ্ছে একটা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। যদি গোড়ার দিকে, সময়মত চিকিৎসা হয়, মানুষগুলি যখন সাবালকত্বে পৌঁছোয় হয়তো স্বাধীন জীবন চালাতে সক্ষম হতে পারে। একটা ইতিবাচক এবং সহায়ক পরিবেশ যোগানোও তাদের আরও বেশি সন্তোষজনক জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে। 

    অটিজম এর ঝুঁকি কমানোর উপায়-

    • গর্ভাবস্তায়, গর্ভের পূর্বে এবং পরবর্তিতে ফলিক এসিড এর পর্যাপ্ততা রাখা ।
    • সুস্থ জীবন যাপন করা ।
    • নিয়মিত চেক-আপ করুন, সুষম খাবার নেয়া এবং ব্যায়াম করা ।
    • গর্ভাবস্থায় অহেতুক ওষুধ সেবন না করা । কোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তার/ফার্মাসিস্ট কে জিজ্ঞাসা করা ।
    • অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা ।
    • বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া ।
    • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ।

    সূত্রঃ ওয়েব এমডি

    মন্তব্যসমূহ