অটিজম কি চিকিৎসা করে সারিয়ে তোলা যায়? অটিজমের জন্য কী ধরণের চিকিৎসা করা হয়?
প্রায়ই আমাদের এ ধরনের প্রশ্ন রুগীদের আত্নীয়স্বজন থেকে শুনতে হয়।
এই শব্দটি বলতে অনেকে মানসিক রোগ বুঝলেও এটি মূলত এক ধরণের স্নায়ুবিক বিকাশ-জনিত সমস্যা।
এটি একটি মস্তিষ্কের রোগ যা সাধারণত: একজন ব্যক্তির অন্যদের সাথে কথা বলার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণ সারানো না গেলেও আক্রান্ত ব্যক্তিকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসা যায়। তার প্রতিভাকে বিকশিত করা যায় উপযুক্ত সহযোগিতার মাধ্যমে।
বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে একজন এএসডি বা অটিজমে আক্রান্ত।অটিজম এর বৈশিষ্ট
আত্মসংবৃতি বা আত্মলীনতা (অটিজম নামেও পরিচিত) বলতে একটি মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ততাকে বোঝায়, যা বয়স তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়। আত্মসংবৃত শিশুরা (যাদেরকে আত্মসংবৃত, আত্মলীন বা ইংরেজি পরিভাষায় অটিস্টিক বলা হয়) সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়।
অটিজম রয়েছে এমন শিশুদের ভাষা শিখতে সমস্যা হয়, শব্দ বা স্পর্শের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা বা সংবেদনহীনতা থাকতে পারে, পাশাপাশি কখনো কখনো আচরণের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না, চোখে চোখ রেখে তাকায় না; কারও কারও অটিজমের সঙ্গে অতিচঞ্চল অমনোযোগিতা (এডিএইচডি) বা খিঁচুনি থাকতে পারে।
শিশুরা সাধারণত তার চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। আশেপাশের সব কিছু দেখে ও শুনে তার ভাষার বিকাশ ঘটে। অটিজম আক্রান্ত শিশুটির মধ্যে এখানে সীমাবদ্ধতা থাকে। এক্ষেত্রে শিশু ঠিকমতো সামাজিক যোগাযোগ করতে পারে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এ ধরনের শিশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়।
অটিজমের কারণ:
বিজ্ঞানের এত উন্নতির পরও অটিজম কেন হয়, তা এখনো পরিষ্কারভাবে জানা সম্ভব হয়নি। অটিজমের ঝুকি বৃদ্ধিরও কোন একক কারণ নেই, তবে এটি সাধারণভাবে বলা হয় যে এটি মস্তিষ্কের গঠন বা ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতার কারণে ঘটে। মস্তিষ্ক স্ক্যান করে নিউরোটাইপিকাল শিশুদের তুলনায় অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মস্তিষ্কের আকৃতি এবং গঠনে পার্থক্য দেখা যায়।
- গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল
- কিছু মৃগী রোগের ওষুধ সেবন করলে,
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত স্থূলতা
- ডায়বেটিস রোগ
- রুবেলা
- জেনেটিক এবং
- ননজেনেটিক বা পরিবেশগত প্রভাবের কারনে হয়ে থাকে।
অটিজোমের পরিবেশ গত কারনঃ
অটিজম কি বংশগত রোগ
অটিজম মোটেই একটি বংশগত রোগ নয়। সম্পূর্ণ সুস্থ বাবা মায়েরও অটিস্টিক শিশু হতে পারে। অনেক শিশু জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী অথবা জেদি প্রকৃতির হতে পারে। এতেই কিন্তু বোঝা যায় না যে শিশুটি অটিস্টিক।
- বেশী বয়সে সন্তান ধারন
- গর্ভাবস্থা এবং জন্মগত জটিলতা (প্রিমেচিউর [২৬ সপ্তাহের আগে], কম ওজন নিয়ে জন্ম, একাধিক গর্ভধারণ [যমজ, তিনগুণ, ইত্যাদি])
- এক বছরের কম ব্যবধানে সন্তান ধারন।
- গর্ভবতী মহিলারা যারা কিছু ওষুধ বা রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসেন, যেমন অ্যালকোহল বা জীবাণুনাশক ওষুধ, তাদের অটিস্টিক শিশু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা স্থুলতা।
- কিছু পরিচিত জেনেটিক ডিসঅর্ডার অটিজমের জন্য বাড়তি ঝুঁকির সাথে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ফ্র্যাগাইল এক্স সিনড্রোম (যা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা সৃষ্টি করে) এবং টিউবারাস স্কেলেরোসিস (যা মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে টিউমার বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে)।
অটিজম এর প্রাথমিক লক্ষণ সমূহ |
অটিজমের লক্ষণ সমূহ:
অটিজমের বৈশিষ্ট্য নিয়েই একটা শিশু মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়। অর্থাৎ অটিজম একটা জন্মগত ব্যাপার। তাই শিশুর বয়স একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে এই লক্ষণগুলো। মা-বাবা একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারেন অন্য শিশুদের সঙ্গে তার নিজের বাচ্চার আচরণগত সমস্যা। শিশুদের এক থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যেই অটিজমের লক্ষণ গুলো ধরা যায়।
অটিজমের প্রধান লক্ষণ সমূহ :
- ছয় মাস বা তার বেশি বয়সে স্বতঃস্ফূর্ত হাসি বা যে কোন আবেগ প্রকাশ করতে পারেনা।
- ১২ মাস বয়সের মধ্যে আধো আধো কথা না বলা সেই সঙ্গে ইশারা বা হাত বাড়িয়ে কিছু চাইতে বা ধরতে পারেনা।
- চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারেনা।
- ভীড় এড়িয়ে একা থাকতে পছন্দ করে।
- অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেনা।
- একই নিয়মে চলতে পছন্দ করে। কোন পরিবর্তন এলেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখায়।
- একই শব্দ বারবার বলতে থাকে বা একই আচরণ বারবার করে যেমন: একইভাবে হাত বা মাথা নাড়ানো।
- বিশেষ রং, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ বা স্বাদের প্রতি কম বা বেশি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়।
- কোন বিষয় বা বস্তুর প্রতি অতিমাত্রায় আগ্রহ দেখায়।
সমবয়সীদের সাথে না থাকা
পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ
চোখে চোখ রেখে কথা না বলা
অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা চোখে চোখ রেখে কথা বলবে না। যদি আপনি তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন বা কাজ করার চেষ্টা করেন তাহলে সে আপনার চোখের দিকে তাকাবে না। তার 'আই কন্টাক্ট' থাকবে না।
কথা বলায় জড়তা
কোন কোন শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলায় জড়তা থাকতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যাবে শিশু একেবারে কথায় বলছে না বা একটা বয়স পর্যন্ত কথা বললেও পরে আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছে।
ধৈর্য কম থাকা
এই শিশুদের ধৈর্য কম থাকবে। এমনকি একটা খেলনা দিলে সেই খেলনার প্রতি ধৈর্য নিয়ে এক মিনিট খেলা করাটা তার জন্য কঠিন হবে।
এক-দুই মিনিট পর তার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। তার কোন জিনিসের প্রতি মনোযোগের দুর্বলতা থাকবে।
সামাজিকীকরণ অনুপস্থিত থাকবে
সামাজিকভাবে যেসব আচরণগুলো শিশুদের শেখানো হয় সেগুলোর প্রতি তার চরম অনীহা থাকবে।
পরিবেশ-পরিস্থিতি ভেদে পরিবার-পরিজন বা বড়-ছোটদের সাথে কি আচরণ করতে হয় এটা তারা বুঝে উঠতে পারে না। এক কথায় বলতে গেলে দুই বা তিন বছর বয়সী একটা বাচ্চার যে আচরণ হওয়া উচিত, অটিজমে আক্রান্ত একটা বাচ্চার মধ্যে সেটা থাকবে না। তবে অনেকে অন্তর্মুখী এবং অটিজমে আক্রান্ত বাচ্চার বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য করতে পারেন না।
অটিজম কত প্রকার কি কি?
অটিজম ৫ প্রকার। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের প্রধান প্রকারসমূহ।
Asperger সিনড্রম
যদিও Asperger's syndrome শব্দটি আগে বেশ প্রচলিত ছিল, তবে এই শব্দটি আসলে আর চিকিৎসা পেশাদারদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় না। DSM-5 ডায়াগনস্টিক ম্যানুয়াল দ্বারা এটিকে লেভেল 1 অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার হিসাবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। তবুও, অ্যাসপারজার সিনড্রোম অনানুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে - আসলে, অটিজম সম্প্রদায়গুলি এটি লেভেল 1 স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের চেয়ে প্রায়শই ব্যবহার করে।
লেভেল 1 স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একটি শিশুর গড় বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তিশালী মৌখিক দক্ষতা থাকবে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। সাধারণভাবে, লেভেল 1 অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত একটি শিশু নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি প্রদর্শন করবে:
রেট সিনড্রোম
রেট সিনড্রোম একটি বিরল নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা শৈশবকালে লক্ষ্য করা যায়। ব্যাধিটি বেশিরভাগই মেয়েদের প্রভাবিত করে, যদিও এটি এখনও ছেলেদের মধ্যে নির্ণয় করা যেতে পারে। Rett সিনড্রোম এমন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে যা একটি শিশুর জীবনের প্রায় প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে। ভাল জিনিস হল আপনার সন্তান এখনও উপভোগ করতে পারে এবং সঠিক যত্ন সহ একটি পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। আপনি একসাথে পারিবারিক সময় কাটাতে পারেন এবং শিশুকে যা উপভোগ করে তা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সহায়তা প্রদান করতে পারেন। রেট সিন্ড্রোমের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:
চাইল্ডহুড ডিসইন্টেগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার (CDD)
চাইল্ডহুড ডিসইন্টেগ্রেটিভ ডিসঅর্ডার (সিডিডি), যা হেলার সিনড্রোম বা বিচ্ছিন্ন সাইকোসিস নামেও পরিচিত, এটি একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যা ভাষা, মোটর দক্ষতা, বা সামাজিক ক্রিয়াকলাপের বিকাশগত সমস্যাগুলির বিলম্বিত সূত্রপাত দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের অভিজ্ঞতা হয় শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রগুলিতে তিন বছর বয়সের পরে এবং ১০ বছর বয়স পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত হওয়ার জন্য৷ বিকাশগত ক্ষতি এমন পিতামাতাদের জন্য খুব হৃদয়বিদারক হতে পারে যারা জানেন না যে তাদের সন্তানের অটিজম চ্যালেঞ্জগুলি বরাবরই ছিল৷
CDD এর কারণ অজানা যদিও গবেষকরা এটিকে মস্তিষ্কের নিউরোবায়োলজির সাথে যুক্ত করেছেন। ছেলেদের মধ্যে শৈশব বিচ্ছিন্ন ব্যাধি বেশি দেখা যায়। ডিসঅর্ডারের প্রতি ১০ টি ক্ষেত্রে নয়টি ছেলে হবে এবং শুধুমাত্র একটি মেয়ে হবে।
CDD-তে, ব্যাধি শুরু হওয়ার সময় পর্যন্ত শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ থাকবে এবং তাদের জীবনের দুটিরও বেশি উন্নয়নমূলক দিকে হঠাৎ করেই রিগ্রেশন শুরু হবে। শিশু নিম্নলিখিত দক্ষতা এবং ক্ষমতা হারাতে পারে:
ক্যানার সিনড্রোম
১৯৪৩ সালে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার ক্যানারের সিন্ড্রোম আবিষ্কার করেছিলেন যখন তিনি এটিকে শিশুর অটিজম হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। ডাক্তাররা এই অবস্থাটিকে ক্লাসিক অটিস্টিক ডিসঅর্ডার হিসাবে বর্ণনা করেন। ক্যানার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা এই ব্যাধির অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে আকর্ষণীয়, সতর্ক এবং বুদ্ধিমান দেখাবে যেমন:
ব্যাপক উন্নয়নমূলক ব্যাধি - অন্যথায় নির্দিষ্ট নয় (PDD-NOS)
প্যারাভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার - অন্যথায় নির্দিষ্ট নয় (PDD-NOS) হল একটি হালকা ধরনের অটিজম যা বিভিন্ন উপসর্গ উপস্থাপন করে। সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলি হল সামাজিক এবং ভাষার বিকাশে চ্যালেঞ্জ।
আপনার সন্তানের ভাষা বিকাশ, হাঁটা এবং অন্যান্য মোটর দক্ষতা বিলম্বিত হতে পারে। আপনি শিশুকে পর্যবেক্ষণ করে এবং শিশুটি কোন ক্ষেত্রে ঘাটতি প্রদর্শন করে, যেমন অন্যদের সাথে আলাপচারিতা করে তা লক্ষ্য করে আপনি এই ধরনের অটিজম সনাক্ত করতে পারেন। PDD-NOS কে কখনও কখনও "সাবথ্রেশহোল্ড অটিজম" হিসাবে উল্লেখ করা হয়, কারণ এটি এমন একটি শব্দ যা একজন ব্যক্তির বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যার কিছু কিছু কিন্তু সমস্ত লক্ষণ নেই।অটিজম এর চিকিৎসা কীভাবে হতে পারে!
অটিজম উল্টে দেবার (পরিবর্তন করা) কোনও চিকিৎসা নেই। লভ্য সমস্ত চিকিৎসা পদ্ধতির লক্ষ্য হল তাদের দুর্বলতা কমানো, স্বাবলম্বন এবং সম্ভাবনা বাড়ানো। অটিজম-এর সাথে মৃগীরোগ এবং অস্বাভাবিক সক্রিয়তার নির্দিষ্ট উপসর্গ যাদের থাকে থেরাপিগুলি সচরাচর তাদের জন্য মানানসই করা এবং ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথমেই শিশুকে একটা স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। এরপর একজন শিশুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।
- শিশুর অস্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য শিশুর মা-বাবাকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তাঁরা বাড়িতে শিশুর আচরণের পরিবর্তন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
- স্কুলে ও বাড়িতে শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া ও শিশুকে সামাজিক রীতিনীতি শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। যে কাজটি সে ভালো পারে বা যে বিষয়টিতে তার উৎসাহ আছে, সে বিষয়টির দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হয়।
- শিশুর ভাষাশিক্ষার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে
- প্রয়োজনে রোগলক্ষণ অনুযায়ী কিছু ওষুধ ও থেরাপি (অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি) প্রয়োজন হতে পারে, তবে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
- ওষুধ অটিজমের পরিচর্যার সহায়ক পদ্ধতিমাত্র। মূল পরিচর্যা হল প্রশিক্ষণ, শিক্ষা আর বিভিন্ন থেরাপি। ওষুধ প্রয়োগ করার অর্থ এই নয় যে ওষুধ খেলে শিশুর অটিজমের সব বৈশিষ্ট্য চলে যাবে বা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে কখনো কখনো ওষুধ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে ওঠে। অনেক সময় ওষুধ ছাড়া প্রশিক্ষণ, শিক্ষা বা থেরাপি প্রয়োগই করা যায় না।
অটিজম-এ ওষুধ প্রয়োগ
অটিজম-এর জন্য কোনও প্রেসক্রাইব করা ওষুধ নেই বলা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ কিছু অবস্থার জন্য যেগুলি মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে লক্ষণাত্মক, একজন বিশেষজ্ঞ ওষুধের বিধান দিতে পারেন। অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্টস (অবসাদ-প্রতিরোধী), অ্যান্টিকনভালস্যান্টস (খিঁচুনি বা তড়কা প্রতিরোধী), উদ্বেগ-প্রতিরোধী এবং অস্বাভাবিক সক্রিয়তার জন্য উদ্দীপক ওষুধ হচ্ছে ওষুধ প্রয়োগের কিছু পদ্ধতি যার জন্য পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
অটিজমের সঙ্গে যেকোনো সহযোগী সমস্যা (কোমর্বিডিটি) থাকলে ওষুধ দিতে হয়। যেমন,
- খিঁচুনি,
- অতিচঞ্চলতা,
- বুদ্ধির স্বল্পতা,
- উদ্বিগ্নতা,
- বিষণ্নতা,
- আচরণজনিত সমস্যা,
- আগ্রাসী আচরণ,
- রেগে যাওয়া,
- টিক ডিসঅর্ডার,
- ঘুমের সমস্যা বা
- অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা।
- নিজেকে আঘাত করা,
- মেঝেতে মাথা ঠোকা,
- নিজের হাতে দাঁত দিয়ে আঘাত করা,
- অভিভাবককে আঘাত করা,
- অন্যকে দাঁত দিয়ে আঘাত করা,
- নিজের চুল আগ্রাসীভাবে ছিঁড়ে ফেলা,
- খিটখিটে মেজাজ বা ইরিটেবিলিটি কমানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশনা রয়েছে।
অটিজম এ আচরণগত থেরাপি
এটা একটা পদ্ধতি যা কাঙ্ক্ষিত আচরণ শক্তিশালী করা এবং অবাঞ্ছিত অথবা অগ্রহণযোগ্য আচরণ কমানোর দিকে লক্ষ্য রাখে। বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয় আচরণ টেনে বার করতে এবং শক্তিশালী করতে যার অন্তর্ভুক্ত মূল প্রতিক্রিয়া প্রশিক্ষণ এবং ইতিবাচক আচরণ এবং ভরসা, এগুলো হচ্ছে তালিকার মাত্র কয়েকটি নাম।
অটিজম এ জ্ঞানমূলক আচরণ থেরাপি
অটিজম এ যুগ্ম মনোযোগ থেরাপি
অটিজম এ পেশাগত থেরাপি
অটিজম এ শারীরিক থেরাপি
অটিজম এ সামাজিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ
অটিজম এ কথা ও ভাষা থেরাপি
অটিজম এ পুষ্টি থেরাপি
অটিজম-এর জন্য জীবনধারা সামলানো
১, অটিজম আক্রান্তদের শিক্ষাগত ব্যবস্থাপনা
২, আচরণগত ব্যবস্থাপনা
আত্মমগ্নতা থাকা একজন ব্যক্তির জীবনধারা সামলানো হচ্ছে একটা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। যদি গোড়ার দিকে, সময়মত চিকিৎসা হয়, মানুষগুলি যখন সাবালকত্বে পৌঁছোয় হয়তো স্বাধীন জীবন চালাতে সক্ষম হতে পারে। একটা ইতিবাচক এবং সহায়ক পরিবেশ যোগানোও তাদের আরও বেশি সন্তোষজনক জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে।
- গর্ভাবস্তায়, গর্ভের পূর্বে এবং পরবর্তিতে ফলিক এসিড এর পর্যাপ্ততা রাখা ।
- সুস্থ জীবন যাপন করা ।
- নিয়মিত চেক-আপ করুন, সুষম খাবার নেয়া এবং ব্যায়াম করা ।
- গর্ভাবস্থায় অহেতুক ওষুধ সেবন না করা । কোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তার/ফার্মাসিস্ট কে জিজ্ঞাসা করা ।
- অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা ।
- বিদ্যমান স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হওয়া ।
- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ।
সূত্রঃ ওয়েব এমডি
মন্তব্যসমূহ