শিশু কিভাবে প্রথম শ্বাস নেয়?

শিশুর প্রথম শ্বাস
শিশু যতদিন মায়ের গর্ভে থাকে গর্ভফুলের মাধ্যমে শিশু শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়। শিশুর জন্য পুষ্টি, অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড প্রবাহিত হয় মায়ের গর্ভফুলের দুটি রক্তনালী দ্বারা যা শিশুর নাভীর মাধ্যমে শরীরে যায় । শিশুর ফুসফুস কে এড়িয়ে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত সরাসরি তার বাম হৃদপিন্ডে যায় কারন তার ফুসফুস তখন জ্বলিয় দ্রবণে পূর্ন থাকে। হৃদপিন্ড হতে রক্ত শিশুর সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু বাচ্চার ফুসফুস তরলে পূর্ন থাকে সেটা বাতাসে স্ফীত হতে পারেনা।
একটি সুস্থ শিশুর জন্মের সময় সাদা থেকে "গোলাপী" হতে প্রায় ৫ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু রূপান্তর এক নিঃশ্বাসে ঘটে এবং এটি একটি খুব জাদুকরী মুহূর্ত।

ফুসফুসের যাত্রা হল শুরু

প্রসবের প্রায় ১০ সেকেন্ডের মধ্যে শিশুটি প্রথম শ্বাস নেয়। নবজাতকের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র তাপমাত্রা এবং পরিবেশের আকস্মিক পরিবর্তনের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখায় এই শ্বাসটি হাঁফের মতো শোনায়।

কিভাবে একটি ক্ষুদ্র মানুষ জন্মের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রথম শ্বাস নেয়?

হ্যাঁ, জন্মের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই, একটি শিশু প্রথমবারের মতো বাতাস হতে তার নিজের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণ করতে সক্ষম হয়।


শিশুর ফুসফুস এবং হৃদপিন্ড - মায়ের জরায়ুতে কিভাবে কাজ করে? গর্ভাবস্থায় ফুসফুস ভ্রূণকে অক্সিজেন সরবরাহ করে না। ফুসফুস তরলে ভরা থাকে। শিশুটি মায়ের গর্ভফুল বা প্ল্যাসেন্টা থেকে তার নাভির দুটি রক্তনালীর মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। শিশুর নাভির কর্ড থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরাসরি শিশুর হৃদপিণ্ডের ডান অলিন্দ থেকে বাম অলিন্দে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে রক্ত হৃদপিন্ডের ডান অলিন্দ হতে ফুসফুস হয়ে বাম অলিন্দে যায় অতঃপর ধমনীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে শরীরে।  গর্ভস্থ শিশুর ক্ষেত্রে ডাক্টাস আর্টেরিওসাস নামক এক নালী শিশুর শরীরের প্রধান ধমনী এবং প্রধান ফুসফুসের ধমনীকে সংযুক্ত করে, যার ফলে গর্ভফুল হতে আসা ভ্রূণের অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ​​ফুসফুসে না গিয়ে নীচের শরীরের দিকে যেতে পারে।

একটি শিশু জন্ম নিয়ে শ্বাস না নিলে কি হবে?

সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে, অ্যাসফিক্সিয়া বা শ্বাসকষ্ট হল অঙ্গ ব্যর্থতা এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ। জন্মগত শ্বাসকষ্ট দুটি পর্যায়ে ঘটতে পারে: মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কম হলে এবং কোষগুলি পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে। প্রথম পর্যায়টি কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটে। দ্বিতীয় পর্যায়টিকে "রিপারফিউশন ইনজুরি" বলা হয়। এটি কয়েক দিন বা এমনকি সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

প্রথম প্রশ্বাস:


শিশুর প্রথম প্রশ্বাস এতই শক্তিশালী এবং নাটকীয় হয় যে, এটি  নবজাতকের ফুসফুসে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে। স্বাভাবিক প্রসবের সময় নবজাতকের দেহ প্রচন্ড চাপের মাধ্যমে মাতৃজঠর থেকে বের হয়ে আসে। শিশুর দেহে চাপের সময় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত প্রবাহ সীমিত হয়ে যায় এবং মাথার খুলির হাড়গুলির ফাঁকা জায়গাগুলি সঙ্কুচিত হয়। শিশুর মুখ এবং নাক থেকে জমে থাকা শ্লেষ্মা সরে যাওয়ার  পরেই শিশু প্রথম প্রশ্বাসের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।  প্রথমত, জরায়ুর সংকোচন নাভির রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করলে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত ​​​​প্রবাহ হ্রাস করে এবং রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়।  উচ্চ কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নবজাতকের দেহে অ্যাসিডোসিস সৃষ্টি করে এবং মস্তিষ্কের শ্বাসযন্ত্রের কেন্দ্রকে উদ্দীপিত করে, নবজাতককে শ্বাস নিতে ট্রিগার করে।

জন্মের পর প্রথম শ্বাস নেওয়া নবজাতকের জন্য  সবচেয়ে কঠিন কাজ কারণ এই প্রথমবার তার ফুসফুস ব্যবহার করা হচ্ছে ।  দু-এক নিঃশ্বাসের মধ্যেই শিশুর ফুসফুস ফুলে উঠে বাতাসে পূর্ণ হয়ে যায় এবং  ভিতরের তরল বের করে দেয়।

বেশ কয়েকটি কারণ নবজাতকদের জন্মের সময় তাদের প্রথম শ্বাস নিতে উদ্দীপিত করে। 

বাচ্চা প্রথম শ্বাস নেয় তার জন্মের ১০ সেকেন্ডের মধ্যে। ফুসফুস জ্বলে পূর্ন থাকায় তার প্রথম শ্বাস গ্রহণটি হয় অনেকটা জলে "খাবি " খাওয়ার মত বেশ জোরে আওয়াজ দিয়ে। কারন পরিবেশের তাপমাত্রা ও  বায়ুচাপ পরিবর্তনের দরুন এ  সময় শিশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র হঠাৎ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

প্রথম শ্বাস নেয়ার সাথে সাথে শিশুর শ্বাস ও রক্ত পরিবহন তন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে। যেমন,

শ্বাস নেয়ার ফলে ফুসফুস অক্সিজেনে পূর্ন হলে, সেখানে রক্ত প্রবাহে বাধা কমে যায়। ফুসফুসের এই প্রথম স্ফীতি নাটকীয়ভাবে ফুসফুসে রক্ত ​​প্রবাহের চাপ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। দেহের রক্ত সংবহন তন্ত্রে  প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফুসফুসের জ্বলিয় দ্রবণ শ্বাস তন্ত্রে শোষিত হয়ে যায়।

প্রথম নিঃশ্বাস:


ফুসফুস স্ফীত হয়ে রক্তে অক্সিজেন প্রবাহ  শুরু হয় ও কার্বন ডাই অক্সাইড ফুসফুস হতে বেরিয়ে যায় দেহ হতে।

ফুসফুসের অ্যামনিওটিক তরল নিষ্কাশন বা শোষিত হওয়ার পর ফুসফুস অবিলম্বে প্ল্যাসেন্টা বা গর্ভফুলের কাজটি গ্রহণ করে, শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেনের জন্য কার্বন ডাই অক্সাইড বিনিময় করে।


শিশুর নাভির রক্ত নালী বা আম্বিলিকাল কর্ড ক্ল্যাম্পিং এবং কাটার পর  নাভির রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায়।  মাতৃগর্ভের উষ্ণতার অনুপস্থিতিতে, জন্মের 20 মিনিটের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নাভি রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।


কেন শিশুরা তাদের প্রথম শ্বাসের পরে কাঁদে?

শিশুরা জন্মের পর সরাসরি কাঁদে। এই কান্না শিশুর ফুসফুস প্রসারিত করবে এবং অ্যামনিওটিক তরল এবং শ্লেষ্মা বের করে দেবে। শিশুর প্রথম আনুষ্ঠানিক কান্না দেখায় যে ফুসফুস সঠিকভাবে কাজ করছে।

একটি শিশু জন্মের পর শ্বাস না নিয়ে কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে?

সাধারণত, শ্বাস ছাড়া মাত্র ৩ থেকে ৫ মিনিটের পরে মস্তিষ্কের ক্ষতি সম্ভব হয়। ১০ মিনিটের পরে, একটি শিশুর মস্তিষ্কের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। অক্সিজেনের অভাবের কারণে মৃত্যুর একটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি রয়েছে।


নবজাতক শান্ত করণ




সন্তান প্রসব তারিখ কোন টি


মন্তব্যসমূহ