পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ানোর উপায়

মনোযোগ

মনোযোগ কী!

"প্রস্তুতিতে ব্যর্থ হওয়া অর্থ, আপনি ব্যর্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন" - বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন।

এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে অনেক অতিথির সামনে জনৈক অভিভাবক ক্লাসে আমার রোল নং জানতে চেয়েছিলেন।


আমি 51কে খুব কৌশলে 1 বলে উচ্চারণ করি। এতে তিনি সাথে সাথে একটি হাতঘড়ি ( সেসময় তা খুব দুর্লভ ছিল) উপহার দেন। তার মেয়েরা আমার কাছে ভাল ছাত্র হওয়ার পরামর্শ খুঁজছে। আমার একটি ঘটনা সেদিন জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় যা পরবর্তী জীবনে 1 হওয়ার চেষ্টায় মনোযোগী ছিলাম।


মনোযোগ হল একটি আচরণগত ও জ্ঞানাত্মক প্রক্রিয়া যা কোনো একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিগত বা বস্তুগত তথ্যের প্রতি মনোনিবেশ করতে এবং সেই বিষয়টি সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য উপেক্ষা করতে সহায়তা করে।


ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ না দিলে শিক্ষকেরা চট করে সেটা ধরে ফেলতে পারেন। তেমনি ঘরের পড়াশোনায় মনোযোগী না হলে পিতামাতা উদ্বিগ্ন হন।


সুতরাং তাদের উদ্বিগ্নতা আপনার মনোযোগ হ্রাসের কারণ সম্পর্কিত। কিন্তু যাদের পিতা মাতা কর্ম জীবনে ব্যস্ত,,, তাদের উপায় কী! এখানেই মনোযোগের শ্রেণী বিন্যাসে যেতে হচ্ছে।

মনোযোগের শ্রেণী বিন্যাস

মনোবিদরা মনোযোগকে দু – ভাগে বিভক্ত করেছেন যথা- 1. ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগ এবং 2. ইচ্ছানিরপেক্ষ মনোযোগ। –


১. ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগ : যে মনোযোগের পিছনে ব্যক্তির ইচ্ছা ক্রিয়াশীল , তাকে ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগ বলে। যেমন -পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ না থাকলেও শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পাঠের প্রতি মনোযোগী হয়।


এই ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- গুপ্ত ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগ এবং ব্যক্ত ইচ্ছাপ্রসূত মনোযোগ।


২. ইচ্ছানিরপেক্ষ মনোযোগ: উদ্দীপক বা পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য যখন আমাদের মনোযোগকে নিয়ন্ত্রণ করে , আমাদের ইচ্ছা – অনিচ্ছা যখন মূল্যহীন , তাকে ইচ্ছানিরপেক্ষ মনোযোগ বলে।


যেমন-পড়ার সময় যদি বাইরে মাইকে কোনো বক্তৃতা হয় তখন আমাদের মনোযোগ সেখানে আকৃষ্ট হয়।


অর্থাৎ বলা যায় ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমরা সেটির প্রতি মনোযোগ দিতে বাধ্য হই।


পড়াশোনার প্রতি সকলের মনোযোগ সমান নাও হতে পারে। কিন্তু ইচ্ছা নিরপেক্ষ মনোযোগ এড়িয়ে কীভাবে মনোনিবেশ করা যায় সেটাই আলোচনা করবো আমরা। আপনি প্রস্তুত তো?



কিশোর কিশোরীদের মনোযোগ হ্রাস বা অধ্যায়ন বিভ্রান্তির কারন


মোবাইল ফোন কিশোর কিশোরীদের স্টাডি ডিস্ট্রাকশোনের অন্যতম কারন।

এই বয়সে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। একে বলে " বয়সন্ধি জনিত স্টাডি ডিস্ট্রাকশন" বা "অধ্যয়ন বিভ্রান্তি "।


আগে অফলাইনে যান: বিভ্রান্তির সবচেয়ে বড় উত্সগুলির মধ্যে কয়েকটি হলো সোশ্যাল মিডিয়া এবং সেল ফোন থেকে আসা মেসেজ।


তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা শুরু করুন: সূর্যের সাথে উঠা আপনাকে একটি খুব পরিকল্পিত দিনের দিকে নিয়ে যাবে।


ক্লান্ত বোধ করলে তবেই ঘুমাতে যান: নিজেকে দিবাস্বপ্ন দেখতে দেবেন না।

খারাপ চিন্তা গুলি সময় ব্যয় করে, উদ্বেগ বাড়ায় এবং আমাদের শক্তি নষ্ট করে।


মাল্টিটাস্কিং, বা পড়াশোনা ব্যাতিত অন্য কিছু আপনার চিন্তা করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে।


কিশোর-কিশোরীদের তাদের মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি ইতিবাচক উপায় হল যখনই তারা সচেতন হয় যে তাদের মন ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের জন্য 'এখন টেবিলে থাকুন' বাক্যাংশটি উচ্চস্বরে ব্যবহার করা।


প্রতিবার বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঢুকে গেলে, বাক্যাংশটি আবার পুনরাবৃত্তি করা যেতে পারে।



কিভাবে কিছু মেয়ে পড়াশোনায় বিভ্রান্ত হয়?


অন্য কাজের সাথে নিজেকে জড়ানো।


আপনার যদি ঘরের কাজ থাকে, অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া শুরু করেন, পড়াশোনায় অতিরিক্ত ঘন্টা ব্যয় করুন।


ঘরের সেরা কর্মী হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন নেই বরং স্কুলে আপনার পড়া এবং আপনার অ্যাসাইনমেন্টগুলিতে নিক্ষেপ করুন।


কি কি বিষয় আপনার মনোযোগ অন্যদিকে নিচ্ছে সেসব কাগজে লিখুন। অতপর সেসবে মনোযোগ দেয়া কমান।


অধ্যয়নের বিভ্রান্তি অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হতে পারে। অভ্যন্তরীণ অধ্যয়নের বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে


শারীরবৃত্তীয় চাহিদা এবং মানসিক চিন্তাভাবনা


বাহ্যিক অধ্যয়নের বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি এবং মানুষ।


আপনি যা শিখছেন তা সম্পূর্ণ করতে এবং বুঝতে আপনার অবশই "বাড়ির কাজে"র উপর মনোযোগ দিতে সক্ষম হতে হবে। এখানে হোম ওয়ার্ক হলো, প্রতিদিন ক্লাসে যা পড়াচ্ছে তা পুনরায় চেক করা।


>সেই পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।

আগে এন্ড্রুয়েড ফোনটি অফ করে আলমারিতে তালা দিয়ে রেখে দিন। যদি না পারেন তবে ইন্টারনেট কানেকশন ব্ন্ধ রাখুন।


আপনার পড়াশোনায় সাফল্য পেতে আপনাকে কী করতে হবে এবং আপনি কীভাবে এটির সাথে মানানসই হতে চলেছেন তার একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা দিয়ে শুরু করুন।


দেখুন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে চিন্তা করার পদ্ধতি শেখায় না। চিন্তা করা সেই জিনিসগুলির মধ্যে একটি যা শেখা যায় কিন্তু শেখানো যায় না।


খারাপ চিন্তা গুলি সময় ব্যয় করে, উদ্বেগ বাড়ায় এবং আমাদের শক্তি নষ্ট করে।


মাল্টিটাস্কিং, বা পড়াশোনা ব্যাতিত অন্য কিছু আপনার চিন্তা করার ক্ষমতাকে দুর্বল করে। চিন্তা করার অর্থ হল একটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মনোযোগ দেওয়া।


প্রশ্নে আটকে থাকা, ধৈর্য ধরে, মনের সমস্ত অংশকে খেলতে দেওয়া, যে একটি আসল ধারণায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। আপনার মস্তিষ্ককে মেলামেশা করার, সংযোগ তৈরি দেওয়ার সুযোগ দিয়ে দেখুন, মন আপনাকে হতাশ করবে না।


মনোযোগের সময়কাল এবং পড়াশোনায় নিজস্ব  সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর শীর্ষ কিছু উপায় :


১.অধ্যয়নের একটি মানচিত্র আছে:

তার সীমানা বড় কিন্তু রাজধানী ছোট। তাই মনকে শক্ত করে তৈরি করার সময়, নিরুৎসাহিত হওয়া এড়াতে ছোট এবং বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যেমনঃ ক্লাস টেস্টে সেরা হওয়ার চেষ্টা করুন।


২. অধ্যয়নের একটি ট্র্যাফিক লাইট সিস্টেম আছে:

"প্রয়োজনিয় কাজ" এর জন্য লাল, "সেখানে যাওয়া" এর জন্য হলুদ, "এটি পেয়েছি" এর জন্য সবুজ।


লাল, হলুদ, সবুজ নোট ব্যবহার করুন এবং পরবর্তী করণীয় তালিকাগুলি তৈরি করুন।


পড়াশোনায় প্রিয় বিষয়ে দ্রুত ফোকাস করতে, আপনার কাজের তালিকাকে  দৃশ্যমান রাখুন। আপনার কম্পিউটারে বা দেয়ালে উজ্জ্বল স্টিকি নোট রাখুন।


৩.সফলতার জন্য প্রস্তুতি নিন

ধ্যান করুন কোন পঠিত বিষয় নিয়ে;

যেমন, নিউটনের জীবনী বা আইনস্টাইনের অপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে।


৪.ওয়ার্ক আউট করুন।

যা পড়েছেন তার পরীক্ষা নিন।

৫.মুখস্থ করুন ছোট কবিতাগুলো।

বিজ্ঞান দাবি করে যে মুখস্তকরণ এবং মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ স্মৃতির ঘনত্বকে উন্নত করতে পারে, কর্মক্ষম এবং স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে , সমস্যা সমাধানের দক্ষতাগুলিকে তীক্ষ্ণ করতে পারে।

৬.অতীত ছাত্রদের প্রকল্প বা নোট উপলব্ধ করুন।

যদি আপনার মননশীলতা এবং স্ব-শৃঙ্খলা থাকে তবে আপনিও সেই দক্ষতাগুলি গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন যা অতীতের ছাত্ররা করেছে।


এবং চাকরি বা পরীক্ষায় আরও ভাল হওয়ার জন্য এগুলি প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।

৭.না বলার ক্ষমতা শিখতে থাকুন।

ওয়ারেন বাফেট বলেন, শীর্ষ অগ্রাধিকার কি তা কাজ , তা যা হোক এবং তারপরে "না" বলার বিষয়ে সাহসী হন যা আপনাকে আপনার শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে না। আপনার শীর্ষ কাজ ভাল রেজাল্ট করা।


৮. নিখুঁত অধ্যয়ন রুটিন

প্রায় প্রতিটি সফল শিক্ষার্থীর পিছনে একটি দুর্দান্ত রুটিন রয়েছে।


>আপনার পরবর্তী সভা বা ক্লাসের বিষয় কি তা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন।


৯.জৈবিক বা বায়োলজিক্যাল প্রাইম টাইম

নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলিং লেখক এবং অতীতের পরীক্ষার স্টাডি এক্সপার্ট গেস্ট ক্রিস বেইলি এটিকে বলেছেন পড়ার প্রধান সময়।


সেটি সকাল, দুপুর, রাত নাকি মধ্যরাত বা ভোর। সেটি জেনে নিন তারপর জোর দিন।


১০.নিজের জন্য সময় ছেড়ে দিন

যদি কোন মননশীলতা অনুশীলন করেন।

ধ্যান করার পাশাপাশি অনুশীলন করতে পারেন। এর অর্থ হ'ল কয়েক মিনিট সময় নেওয়ার জন্য, আপনি যা করছেন তার উপর সম্পূর্ণ ফোকাস করুন এবং আপনি যে সমস্ত শারীরিক এবং মানসিক সংবেদন অনুভব করছেন তা অনুভব করুন।


উপসংহার; উপরের নিয়মগুলো মেনে চলুন , অবশ্যই সফলতা আপনার দরজায় কড়া নাড়বে।


টপার বা ক্লাসের প্রথম হওয়ার রহস্য Next »

« Previous মস্তিষ্কের স্মৃতি সংরক্ষণ তথ্য


ধন্যবাদ।

মন্তব্যসমূহ