চায়ের জনপ্রিয়তা

তুর্কিরা সবচেয়ে বেশি চা পান করে, দিনে গড়ে দশ কাপ।
বাঙালির শরীর তুর্কিদের তুলনায় দুর্বল। বয়স ও শরীরের সহ্য ক্ষমতার উপর নির্ভর করে চায়ের চাহিদা।
যৌবনে আমি পাঁচ কাপ খেতাম , এখন সকাল বিকাল দুকাপ। তিনকাপ হলেই ঘুমের বিঘ্ন ঘটে, চার কাপে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বাড়ে।
একবার ঈদের ছুটিতে ট্রেনের টিকেট ছাড়া উঠে পড়লাম, টিকেট ট্রেকারের চোখ ফাঁকি দিতে বুফে কারে আশ্রয় নিলাম। ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা নেই।
পকেটে টাকাও বেশি নেই তাই শুধু চা অর্ডার করলাম কিছুক্ষন পর পর। নতুবা ওখানে এমনি বসে থাকতে দেবেনা।
জার্নি শেষে গুনে দেখলাম পনের কাপ চাপান করেছি। সেটা সহ্য ও হয়ে গিয়েছিল। কারন রাত জেগে পড়াশোনার জন্য ফ্লাস্ক ভরে চা খেতাম। এখন হলে হয়ত মরেই যাব। যদিও চা খেয়ে কেউ মারা গেছে বলে শুনি নাই।
তুরস্কের লোকেরা কেন এত চা পান করে?

চা তুর্কি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং দেশের কফি খাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত গরম পানীয়। অতিথিদের চা দেওয়া তুর্কি আতিথেয়তার অংশ।
চা প্রায়শই গৃহস্থালি, দোকানে এবং কিরাথানে - পুরুষদের সামাজিক সমাবেশে খাওয়া হয়।
চা বিশ্বের অন্যতম প্রিয় পানীয়।
চায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় জাতগুলি হল সবুজ চা, কালো এবং মসলা চা। এগুলি সবই ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস নামক উদ্ভিদের পাতা থেকে তৈরি যা চা গাছ থেকে আসে।
শীতের সকালে এক কাপ গরম চা পান করার মতো কোন কিছুই এত তৃপ্তিদায়ক হতে পারেনা। তবে এই পানীয়টির গুণাবলী কিন্তু সেখানেই শেষ নয়।
চা খাওয়ার নিয়ম কি
চা পানের আবার নিয়ম লাগে!

আপনার দেহে যদি আয়রনের পরিমাণ কম থাকে কিন্তু তারপরও চা পান করা উপভোগ করেন, তবে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে খাবারের পাশাপাশি আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার কথা বিবেচনা করুন
চা শত শত বছর ধরে ঐতিহ্যগত ওষুধ হিসেবে এর নিরাময় বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গবেষণা পরামর্শ দেয় যে চায়ের উদ্ভিজ্ব যৌগগুলি ক্যান্সার, স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুরের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে চা পানকারীরা চা পান নাকারীদের তুলনায় স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের অধিকারী।
চায়ে রয়েছে ক্যাফেইন এবং এল-থানাইন যা মস্তিষ্কের সতর্কতা এবং ফোকাস বাড়ায়। চা পাতায় ৩.৫% ক্যাফেইন থাকে, যেখানে কফি বিন মাত্র ১.৫%।

যদিও চায়ের অনেক ভালো গুন আছে কিন্তু চায়ের প্রতি বেশি ভালোবাসা ভাল নয়।
চা অনেক ভিটামিন ও ওষুধের হজম প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। বেশি চা অনেক এন্টিবায়োটিক এর ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলসহ ডিপ্রেশন জনিত ওষুধের ক্রিয়া কমিয়েও দেয়।
চায়ের উপকারিতা
🫖খাঁটি চায়ে- প্রাকৃতিকভাবে হালকা পরিমাণে ক্যাফিন থাকে, যা আপনার ব্যস্ত দিন থেকে বিরতি নেওয়ার সময় আপনাকে প্রাকৃতিক উত্তোলন দিয়ে শক্তি বৃদ্ধিকারী হিসাবে কাজ করে।
🫖ভাল চায়ে থেনাইনও রয়েছে, চায়ের জন্য অনন্য একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা শরীরের উপর শান্ত এবং পুনরুদ্ধারকারী প্রভাব বলে পরিচিত।
কেউ যদি চা আসক্ত হন তবে মাসিক চিনির মাত্রা এবং কতটা চা পান করছেন তা পরীক্ষা করে দেখুন আলাদা চিনি ও চা পাতার বাক্স রেখে।
🫖'সবুজ চা' বা অন্যথায় চা'কে কফির স্বাস্থ্যকর বিকল্প এবং সোডার চেয়ে বেশি প্রশংসা করা হয়।
🫖 চায়ে পলিফেনল আকারে ভালো পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
🫖কফির তুলনায়, চায়ে কম ক্যাফেইন থাকে এবং এটি একজন ব্যক্তির মেজাজকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এতে ভিটামিন এ এবং কে বৈশিষ্ট্যও রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
🫖চা মুখের PH ঠিক রাখে। মিষ্টি নয় এমন চা খাওয়া দাঁতের যত্নে সাহায্য করতে পারে।
🫖তুলসী পাতার মতো ভেষজ যোগ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির জন্য চা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও পরিচিত।
এটি একটি অ্যান্টি-স্পাসমোডিক হিসেবেও কাজ করে।
🫖মস্তিস্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়াতে চায়ের ভালো ভূমিকা রয়েছে কারণ এটি ক্যাফেইনের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ককে সতর্ক করে।
🫖যদিও মাঝারি চা খাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর পছন্দ।
কিন্তু প্রতিদিন ৩-৪ কাপ ছাড়িয়ে গেলে কিছু নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন কেউ যদি চা আসক্ত হন তবে চিনির মাত্রা এবং কতটা চা পান করছেন তা পরীক্ষা করে দেখুন।
চিত্র , চায়ের নিচের ক্যাফেইন ও উপরের ট্যানিনের উপস্থিতি প্রমান করে প্রকৃতি ভারসাম্য রাখতে জানে, যখন আমরা মাত্রা ছাড়িয়ে যাই।
প্রতিদিন চা খেলে কি হয়?

চা সতর্কতা বাড়ায়!চঞ্চল রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। ...
- ভালো থাকে হার্ট হার্ট ভালো রাখার জন্য খাবারের তালিকায় নজর রাখতে হবে। ...
- ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ...
- মাইগ্রেন কমায় ...
- নার্ভ শান্ত করে ...
- ব্যথা কমায়।
দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

দুধ দিয়ে চা,কফি খাওয়া আদতে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধ দেওয়া এক কাপ চা আমাদের শরীরে অ্যান্টি অনফ্লেমেটরি (Anti Inflammatory) উপাদান তৈরি করে। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচায়। চিনির পরিবর্তে দুধ দিন।
দুধ চা বলতে বহু সংস্কৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন ধরনের পানীয়কে বোঝায়, যা চা ও দুধের সংমিশ্রণ ধারণ করে।
এই মূল উপাদানগুলির প্রতিটির পরিমাণ, প্রস্তুতির পদ্ধতি ও অন্যান্য উপাদানের অন্তর্ভুক্তির উপর ভিত্তি করে পানীয় পরিবর্তিত হয়। তাত্ক্ষণিক দুধ চা গুঁড়া একটি গণ-উত্পাদিত পণ্য যা আমরা দুধ চা বলতে যা বুঝি তা নয়।
কাঁচা চা পাতা কি খাওয়া যায়?

উত্তর হল হ্যাঁ, আপনি খেতে পারেন।
এগুলি কাঁচা এবং শুকনো উভয় ক্ষেত্রেই ভোজ্য। তাছাড়া , বর্তমানে এগুলি খাওয়া নিষিদ্ধ নয় এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হিসাবে বিবেচিত হয় না।
তাই আপনার যদি চা পাতা খাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে এগিয়ে যান, তবে এটি শুকনো হয়ে যাওয়ার পরে এটি করার পরামর্শ দেওয়া দিচ্ছি।
চা খাওয়ার সঠিক সময় কখন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমনোর অন্তত ১০ ঘণ্টা আগে চা পান করলে ভাল ঘুম হয়৷
আসলে, ভিটামিন এ-এর অংশসহ বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে, যা গরম জলে বানানোর সময় নস্ট হয়ে যায়।
যাইহোক, সচেতন থাকুন যে অনেক চা পাতায় কফি বিনের চেয়েও বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। ক্যাফেইন এর প্রভাব সম্পর্কে জেনে নিলে ভালো হয়।
চা পাতায় 3.5% ক্যাফেইন থাকে, যেখানে কফি বিন মাত্র 1.5%। সুতরাং এভাবে শুকনো চা পাতা খেলে ক্যাফেইনের একটি জোর ধাক্কা খাবেন। গ্যাস্ট্রিক থাকলে দ্বিগুন হয়ে যেতে পারে। সবাই ক্যাফেইনের প্রতি সমান সেনসিটিভ নয়।
চা পানের কুফল বা ক্ষতিকর দিক কি ⁉️▶️
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
সূত্রঃ হেলথলাইন/ nutrition
সায়েন্স ডিরেক্ট
মন্তব্যসমূহ