গরু ও মহিষের মাংস
আমার বন্ধু প্রতি কোরবানি ঈদের সময় গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বিরাট এক মহিষ কিনতো। তাদের অনেক ভাইবোন, আত্মীয় স্বজন। ফলে তুলনামূলক ধর্মীয় বিলি বন্টন, দান খয়রাত করে ও নিজের জন্য ভালোই কিছু মাংস টেনে আনতো শহরে। কিন্তু শহরে একই দামের গরু কোরবানি দিয়ে বিলি বন্টনের পর আমার প্ৰিয় সল্ট বী স্টাইলের "বিফ স্টেক" বানানোর জন্য দুটো ভাল মাংসের টুকরো পাওয়া যেত না।
অধমের দুর্বোদ্ধ অর্থনীতির কথা বলি যদি অনুমতি দেন। আমার চাচা শ্বশুর ও তার ছেলে দুজনেই আমার চেয়ে সচ্ছল, তারা গত কোরবানি ঈদে ত্রিশ হাজার টাকায় বেশ ভাল মহিষ কোরবানি দিলেন, সমান আকৃতির গরুর জন্য আমার খরচ হলো প্রায় এক লক্ষ টাকা।
বিকেলে তারা কিছু পরিমান মাংস নিয়ে বেড়াতে আসলেন, বললাম এসেছেন খুব খুশি হলাম কিন্তু এই অধমতো কোরবানি দিয়েছিই ( বা হয়েছি), তাই মাংস টা আমার পরিবর্তে কোন গরিবকে দিলে ভালো হতো।
আমার কথা শুনে স্ত্রী খুব রাগ করলো চাচাকে সম্মান দিতে , তবে খাওয়া দাওয়ার পর স্ত্রী ও তাদের যাবার সময় প্রায় সমপরিমান মাংস দিলো তাদের।
বাঙালির বিনিময় প্রথা আর কি!
রাতে খেতে বসে আমি দুষ্টামি করে স্ত্রীকে বললাম, ত্রিশ হাজার টাকার মহিশের মাংস কি দেড় লক্ষ টাকার গরুর মাংসের সমান হয়!
স্ত্রীর রাগ দেখে ভয়ে হাড্ডি চিবুনোতে মন দিলাম (অনেকটা সারমেয়র মতো আমার হাড্ডি খাওয়ার ধরণ, স্ত্রী রাগ করলে বলি ক্যালসিয়াম খাচ্ছি )।
যাইহোক, প্রাণী হিসেবে কিনতে গেলে গরুর চেয়ে মহিশের দাম বেশ কম। কিন্তু কসাই ভাইদের (ভাই বললাম কারন পেশা ত এক! ) দোকানে গেলে গরু ও মহিশের মাংসের দাম সমান হয় এদেশে। ভাই অবশ্য আমাকে ঠকায় না, সংকেতে মহিশের মাংসকে "কালো গরু " বলে বোঝায়। আসলে সবই ত বিফ! ধন্যবাদ, বিফ নিয়ে বিরক্তিকর এক লেকচার শুনতে চাইলে নিচের লিংকটি দেখতে পারেন।
🐮বিফ ও মাটন এর ইতিবৃত্ত কী ⁉️👉
একজন হিন্দু কি মহিষের মাংস খেতে পারেন?
সারা ভারতে মহিষের মাংস খাওয়া বৈধ এবং এমনকি কিছু হিন্দু, যাদের কাছে গরু পবিত্র, তারাও এটি খায়।
গরু বলে মহিষের মাংস বিক্রির অভিযোগ বহু দিনের পুরনো। গরু ও মহিষের মাংস আলাদা করে কীভাবে চেনা যায় এবং এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণে কী পার্থক্য রয়েছে তা অনেকেই জানতে চান।
গরুর মাংস কিনতে গেলে আমার পরিচিত মান্নান কসাই এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। মাংসের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। অন্য কোথাও সন্দেহ হলে বলতাম। কিন্তু সে বলতো কালা গরু অর্থাৎ মহিষের মাংস, নিয়ে যান দাম কিছু কম দিয়েন। ফলে এসব দেখতে দেখতে অভ্যাস হয়ে গেছে বাংলাদেশে।
গরুর নামে মহিষ,খাসির নামে ভেড়ার মাংস বিক্রি চলছে। পাকিস্তান গেলে দেখা যায়, সেখানে গরুর মাংসের মাঝে একাধিক স্থানে চামড়া থাকে, সেখানে করপোরেশনের সিল দেয়া থাকে। ফলে তাদের ওখানে মিক্সিং কম হয়।
যাহোক, দুটির পার্থক্য ও অন্যান্য মাংস থেকে গরুর মাংস চেনার উপায় সকল বাজারকারী পুরুষ মানুষের জানা উচিত। কারন রান্না ও খাদ্য স্বাদের মত বিষয় এতে জড়িত।
১. মহিষের মাংসের চর্বি দুধের সাদা মত হলেও গরু বা ষাঁড়ের মাংসের চর্বি হলদে সাদা।
গরুর মাংসের হলুদ-সাদা চর্বির তুলনায় মহিষের মাংসে চর্বি কম থাকে এবং এর চর্বি দুধযুক্ত সাদা। মহিষের মাংসের রং গাঢ় হয় এবং মহিষের আকার বড় হওয়ায় গরুর চেয়ে হাড় শক্ত হয়।
মহিষের মাংসের পেশীর পিএইচ 5.6±0.4 কম যেখানে গরুর মাংসের পেশীর পিএইচ 6.4±0.7 অর্থাৎ মহিষের মাংস এসিডিটি সামান্য বেশি।
২. মোষের মাংস গরু / ষাঁড়ের মাংসের চেয়ে দ্রুত রান্না হবে
কারণ এর পরিমাণ কম ফ্যাটযুক্ত। আপনি যদি দ্রুত রান্না করতে চান মোষের মাংস কার্যকর একটি বিকল্প। সেকারণে হোটেল ওয়ালাদের প্রিয় মোষের মাংস।
৩. গরুর মাংসের চেয়ে মহিষের মাংস কালচে দেখাবে এর অধিক আয়রনের জন্য।
৪. গরুর মাংসের হাড়গুলি মহিষের মাংসের চেয়ে নরম। কারন বড় প্রানির হাড় শক্ত বেশি হবে।
৫. গরুর মাংসের মধ্যে সাদা চর্বিযুক্ত একটি সাদা রেখা থাকবে, তবে খাসির মাংস এমন নয়।
৬. গরুর মাংসের তুলনায় ছাগলের মাংসের বিশেষ গন্ধ আছে।
৭. গরুর মাংসে চর্বি বেশি, মহিষের মাংসে কম হয়।
৮. মহিষের মাংস কালচে লাল ও আঁশ বেশি। গরুর মাংসের লাল রংটা কম, কিছুটা সাদাটে এবং আঁশ কম।
৯. মহিষের চাইতে গরুর মাংসের স্বাদ বেশি।
মহিষের মাংসের ক্রেতাদের বেশির ভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কালো ভুনা তৈরি হয় মহিষের মাংস দিয়ে। গরুর মাংস বেশি সময় ধরে জ্বাল (গরম) দিলে গলে যায়, কিন্তু মহিষের মাংস তুলনামূলক বেশি জ্বাল সইতে পারে।
গরু ও মহিষের মাংস পুষ্টি পার্থক্য
সমস্ত কাট জুড়ে, গরুর মাংসের তুলনায় মহিষের মাংসে ক্যালোরি ও চর্বি কম এবং প্রোটিন বেশি। বাইসন রিবায়ের পাঁজরের তিন থেকে চার আউন্স পরিবেশনে ১৭৭ ক্যালোরি, ৬ গ্রাম চর্বি এবং ৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকে একটি সাধারণ গরুর মাংসের রিবায়ের তুলনায়, যার মধ্যে ২৬৫ ক্যালোরি, ১৭ গ্রাম চর্বি এবং ২৭ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
পুষ্টিগত পার্থক্য এর মধ্যে গরুর মাংসে চর্বি বেশি হয়। অন্যান্য খাদ্যগুণ প্রায় কাছাকাছি।
মন্তব্যসমূহ