পুরোনো কালে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটি কীভাবে সম্ভব হতে পারতো?

পুরোনো কালে শল্যচিকিৎসা!

প্রাচীনকালে সার্জারী একটি ভয়ংকর পেশার নাম ছিলো। অজ্ঞান বা অবশ না করে রুগীকে অপারেশন করাটা হরর সিনেমার মত। ব্যথাহীন ঔষধ বলতে আফিম বা কোকেন দেয়া হতো। রুগী নড়াচড়া করলে অপারেশন কঠিন হয়ে যেতো তাই কয়েকজন শক্তিশালী মানুষ লাগতো রুগীকে চেপে ধরে রাখতে।

খৎনা করাতে গিয়ে দেখেছি, বাচ্চাদের ও অনেক শক্তি ঐ সময়ে। তাহলে বুড়োদের কি হতো কে জানে। হয়তো তারা মেনে নিতো। 'Etherization With Surgical Remarks' উনিশ শতকে Dr. John Warren of Massachusetts General Hospital তাঁর উপরোক্ত বইতে বলে গেছেন, সার্জারী কক্ষে সার্জনের না ছিলো কোন অনুভুতি, না ছিল আবেগ। ভয়ংকরতম চিৎকারগুলো শুনতে হতো জীবনে।
অনেক রূগী এধরণের অপারেশন না করিয়ে বরং বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ও করতো অপারেশনর আগের দিন । আলোচনার সুবিধার্তে আগের দিনের সার্জারীর সময়কালকে তিনভাগে ভাগ করবো।

১, প্রাচীনকালের সার্জারীঃ

তিনহাজার বছর আগে নিউলিথিক যুগে প্রথম মাথার খুলিতে ছিদ্র করে সার্জারী করার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান আছে।
সন্দেহ করা হয়, ভয়ংকর মাথাব্যথা রোগ থেকে বাঁচতে বা মুক্তি পেতে মাথার খুলির ব্যথাময় স্থানে ছিদ্র করা হতো। এমন অনেক খুলি পাওয়া গেছে, যা আরোগ্য লাভ করেছে।
ভয়ংকর দাঁত ব্যথার জন্য উক্ত দাঁত কে পাথরের ঘায়ে উচ্ছেদ করা হতো।
গ্রীকরা সেসময় চামড়া কেটে ভাঙ্গা হাড়েঁর চিকিৎসা করা, রক্তনালীকে চামড়া কেটে লাইগেট করে রক্ত ক্ষরন বন্ধ করা, শরীরে জমে থাকা রক্ত ছিদ্র করে বের করে দেয়া, ফুসফুসের পুঁজকে ফুটো করে বের করে আনার মতো বড় কাজগুলো করতে শিখে গেছে।

প্রাচীন রোমান চিকিৎসক '" গ্যালেন গ্রীস থেকে এসব বিদ্যা অর্জন করেন, তিনি রোমান সাম্রাজ্যের প্রধান সার্জন ও আহত গ্ল্যাডিয়েটরদের চিকিৎসা করতেন।

খৃঃ নবম শতকে ইসলামিক চিকিৎসক  আল জাহরাবি অর্থোপেডিক, মিলিটারি সার্জারী, নাক কানের চিকিৎসার উপরে বই লিখে ফেলেন। তার লিখিত বই ইউরোপে দুশোবছর পাঠ্য ছিলো।

২, মধ্যযুগ ও রেনেসাঁঃ

মধ্যযুগে বর্তমান বাংলাদেশের মতো অবস্থা সৃষ্টি হলো সার্জারী খাতে । প্রচুর হাতুড়ে চিকিৎসক, নাপিত, কসাই সার্জারী করতে শুরু করে দিলো। হয়তো তখন থেকে ডাক্তারকে কসাই বলা শুরু হয়েছে।
রেনেসাঁর আগ পর্যন্ত সনদহীন পল্লী সার্জনের ছড়াছড়ি হলো ইউরোপে। 

১৮০০ শতক পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক সার্জনের পরিবর্তে অনেক নারীরাও এ বিদ্যায় জড়িয়ে গেলো।

এন্ড্রিয়াস ভিসালিস, এনাটমির জনক। তিনি মাথার খুলি ছিদ্র করন, অঙ্গচ্ছেদ, চোখের ছানির অপারেশনও জানতেন।

সেসময় এন্ড্রিয়াস ভিসালিস, যাকে আধুনিক সার্জারী র জনক বলা হয়, হিউম্যান এনাটমি শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয় খোলেন ও লাশের ব্যবচ্ছেদ করে এনাটমি বিষয়ে ছাত্রদের জ্ঞান দিতেন।

১৫৪৩ সালে তিনি অসাধারণ এক এনাটমির বই লিখেন, De Humani Corporis Fabrica Libri Septem, যা রোম ও গ্রীক সার্জনদের সার্জারীকে সহজ করে দেয়। এটা ২০০ বছর এনাটমির পাঠ্যবই ছিলো ইউরোপে।

৩, আধুনিক সার্জারীঃ

এনাটমি সম্পর্কিত বিদ্যা সার্জনদের আরো নিখুঁত সার্জারী করতে সাহস যোগায়। কিন্তু ১৮০০ শতকের আগ পর্যন্ত এনেস্থিসিয়া আবিষ্কার না হওয়ায় তারা বিপর্যস্ত ছিলো। অজ্ঞান বা অবশ করার বিদ্যা সফল হওয়া মাত্র ই বিপুলসংখ্যক মানুষ সেলফ সার্জারীকিন্তু সমস্যা ছিলো এন্টিসেপটিক ও অপারেশন পরবর্তী ইনফেকশন।

সার্জন ও জীবাণুবিদ লিস্টার, লিস্টারিজম তত্ত্ব দেন, যেখানে অস্ত্রপচার যন্ত্র, কার্বোলিক এসিড দ্বারা জীবানুমক্ত করে, গরম জলে ওটি ড্রেস, লিনেন ধুয়ে সার্জারী সম্পন্ন হতো। তখন বিপুল মানুষ সেই সার্জারী দেখতে আসতো, আর তখন থিয়েটারে অপারেশন পরিচালিত হতো।
এভাবেই ধীরে ধীরে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে আধুনিক শল্য চিকিৎসা।

মন্তব্যসমূহ