বুফেতে খাওয়ার মুলনীতি কি

বুফেতে খাওয়ার মুলনীতি কি

 বুফে


বুফে একটি সাইডবোর্ড লাগানো খাবার পরিবেশনের একটি সিস্টেম, যেখানে খাবার একটি পাবলিক এলাকায় রাখা হয় যেখানে ডিনাররা নিজেদের পরিবেশন করে। এর একবচন বুফেট। অনেক উচ্চশিক্ষিত লোক বুফে না খেয়ে 'বাফেট' খেতে আমন্ত্রণ জানান!

এক সময় বুফে ছিল ; যে ট্রেনের কাউন্টারে খাদ্য ও পানীয় ক্রয় ও ভোগ করা যায়, যেমন রেলস্টেশন কিংবা রেলগাড়িতে (buffer car); যে টেবিল থেকে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হয়, যেমন হোটেলে: cold buffer, buffer supper, বুফে ভোজ, যে ভোজে অতিথিরা উপবিষ্ট না-হয়ে খাদ্য গ্রহণ করেন। সমাগত অতিথিদের স্বয়ং-পরিবেশন ভোজ; হল বুফে। আজকাল অনেক বিয়ে ও জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ও " বুফে " খাবারের আয়োজন করা হয়! 

পুরাকালে নানান হোটেলে যে 'পেট চুক্তি' খাওয়ার ব্যাপার ছিল, তারই আধুনিক  সংস্করণ বুফে। পেট চুক্তির ব্যাপারটা আপনি ইচ্ছেমত খাবার খাবেন, পেট ভরা পর্যন্ত। দাম আগে থেকেই ফিক্সড। খালি পেটচুক্তিতে নানা বিধিনিষেধ থাকত, ডাল আর ভাত অফুরন্ত নিতে পারলেও, মাছ পাবেন একটুকরো, বা ঐ রকম কিছু, বুফেতে সে নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু কোন রেস্তোরাঁ সারা সপ্তাহের বাসি খাবার যদি শুক্রবার বুফেতে অফার (buffer offer) করে আর আপনি সেখানে পেট পুরে খেয়ে আসেন, সেটা আপনার ব্যাপার। ভুক্তভোগী হিসেবে আমার দায়িত্ব আপনার মনোযোগ।



বুফে এবং ইভেন্টে খাওয়ার রিস্ক 



বুফে সুবিধা আছে এমন রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। টাকা পে করার আগে মেনু দেখে নিতে হবে। যেসকল খাবার আছে, সেগুলোর মধ্যে কোনগুলো আপনি পছন্দ করেন।
৮০ টা খাবার থাকলে তার মধ্যে ২০ টা মিস্টি খাবার থাকবেই। আর, ২০ টা চাইনিজ আইটেম থাকলে সে গুলোর মধ্যে চিনি পরিমাণ মতো থাকবে।

দুপুরে বুফে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে সকালে শুধু টক দইয়ের সালাদ খেতে পারেন।

বুফেতে যতটা পারবেন, মিস্টি খাবার সব খাবারের আগে খাবেন না।

প্রথমবার বুফে খেতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম ওটা সবার জন্য নয় বিশেষতঃ যারা নিজেদের পেটুক ভাবেন তারাও ধোঁকা খাবেন। 

শুরুতেই দেখবেন একরাশ লোভনীয় আচার ও সালাদ জাতীয় খাবার। তারপর রুটি, নান রুটি,পরোটা , সাদা ভাত, পোলাও, খিঁচুড়ি, বিরিয়ানি সব আছে। একটুকরো করে রুটি, সালাদ আর এক চামচ করে রাইস বা খিচুড়ি নিলেও  প্লেট ভরে যাবে।

 
আপনার পেট আপত্তি করলেও, সেটায় কান দেবেন না সেদিন।

এখান থেকে জেনে আপনি একটা প্ল্যান নিয়ে খেতে যাবেন। এর মূলনীতি হল - যত পয়সা আপনি দিচ্ছেন, অন্তত তার তিনগুণ উশুল করে বেরোতে হবে। পাঁচশ টাকার বুফেতে গিয়ে দেড়হাজার টাকার খানা খেয়ে বেরোতে হবে!!

কাজেই আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন স্লিম থাকতে চান, বুফে বাদ দিন। আপনি যদি জিমগামী হয়ে থাকেন, তাহলেও বাদ দিন। অত ক্যালরি আপনার জন্য নয়।

একমাত্র খাদ্য রসিক গর্বিত মানুষই বুফে খেতে আসবেন। তিনি ব্যায়ামবীর কিংবা ভুড়ি বিশিস্ট যায় হোন। 

বুফে খাওয়ার মূলনীতি

মূলনীতি বা ফার্স্ট প্রিন্সিপল হল ওই একই।


যাবার আগেও কিছু স্টেপ রয়েছে। 
পেটের উপরে চাপ কমানোর টাইট  বেল্ট অতটা ফ্লেক্সিবল নয়।  মহিলারা শাড়িও পরতে পারেন, পেটের সাথে পায়জামা আর শাড়ির সম্পর্ক একই রকম স্থিতিস্থাপক।

প্রথমে ফ্রীতে  সফট ড্রিংক অফার করা হলে সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করুন। আপনি পানভোজনে আসেন নি, এসেছেন পেটভোজনে।

বুফের শুরুতে যে সমস্ত স্যালাড ইত্যাদি সাজিয়ে রাখে, খবরদার ওদিকে যাবেন না! ওগুলো খাদ্য নয়, ওগুলো পরিত্যাজ্য। আর হ্যাঁ কৌতুহলবশতঃ চীজ-পনীর ইত্যাদি চেখে দেখতে পারেন, কিন্তু ভুলেও বেশি পেটে দেবেন না। নিরিমিষও তথৈবচ। চেখে দেখতে পারেন। মাছ আর চিংড়ী কে অনেকে সেদিন খুব মুল্য দেয়,  প্লেট  ভরিয়ে ফেলে। কিন্তু যতই স্বাদু হোক প্লেট বোঝাই করার আগে ভাবুন সেসব তাজা মাছ নয়।

অল্প অল্প করে ১০ থেকে ১৫ টি আইটেম খেতে পারেন। একবারে সব খাবার নেয়া ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাংলাদেশে কোথাও আমি অল্প করে নিতে দেখি নি। বরং বেশি নিয়ে ফেলে দিতে দেখেছি।


বুফেতে যা কোন ভাবেই খাবেন নাঃ


ভাজা খাবার

বুফেতে তৈরি করতে হয় প্রচুর পরিমাণের ভাজা খাবার। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাবার ভাজার জন্যও এক তেল বারবার ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা যায়। শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর বাসি তেলে ভাজা খাবার। তাই বুফেতে ভাজা খাবার এড়ানোই ভালো।


মেয়োনেজ দেয়া সালাদ

সালাদে স্বাদ দ্বিগুণ হয় মেয়োনেজ দিলে। তাই অনেকে মেয়োনেজ দেয়া সালাদ প্লেটে নিয়ে খেতে বসেন বুফেতে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ রেখে দেয়ার ফলে মেয়োনেজযুক্ত এসব খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এগুলো খেলে হতে পারে ফুড পয়জনিং।

ফলের জুস

বুফেতে গেলে অনেকেই ভালোবাসেন প্রচুর ফলের রস পান করতে। কিন্তু বুফের এসব ফলের জুসে প্রচুর চিনি মেশানো হয়। তাই অতিরিক্ত চিনিযুক্ত এসব ফলের রস পান না করে চিনি ছাড়া চা বা কফি বেছে নিতে পারেন বেভারেজ হিসেবে।



খাসি বা গরুর মাংস পেলে হাতিয়ে নিন। সাবধানে, চর্বি বাদ দিয়ে বাকি মাংস নেবেন রুচি অনুসারে হাড়গোড় নিতে পারেন। বেশী তেলানো  মাংস খেলে হজমে সমস্যা হবে। ঝোল-ফোলের দিকে মোটেও যাবেন না। সলিড মাংস বেছে তুলে নিন।

ভাত-রুটি ওসব জঞ্জাল সেদিন পেটে ঢুকলে  সমস্যা।  ভাত না খেলেও মাছ-চিংড়ী-মুর্গী-মাটন-বিফ ঠেসে খান। পেট না ভরে যায় কোথায় যাবে।
তারপর  বাইরে বের হয়ে বুঝে নিন কত টাকার বুফে কত টাকায় খেয়েছেন। 


বুফে খাওয়ার  রিস্ক সমূহ:


সাধারণ ব্যাকটেরিয়া যা বুফে খাবারের মধ্যে বা পরিবেশন এলাকায় পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে:

 -ই. কোলাই (এটি আপনার লেটুস বা নরম পনিরের ভিতরে লুকিয়ে থাকতে পারে)।
 -সালমোনেলা (সাধারণত কম রান্না করা মুরগি বা ডিমে)।
 -লিস্টেরিয়া (এটি প্রি-প্যাকড খাবার যেমন স্যান্ডউইচ বা ব্যাগড স্যালাডে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে এবং ডেলি মাংসে এটি সাধারণ। 

4 C- যেগুলি সম্পর্কে আপনাকে ভাল স্তরের খাদ্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে চিন্তা করতে হবে:

  1.  রাঁধা cooking ।
  2.  বাঁধা cooling ।
  3.  ঠান্ডা করণ chilling 
  4.  ছোঁয়া লাগানো cross-contaminetion ।

আমার বুফে খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা জানতে লিংকটি দেখতে পারেন।

বুফে খাওয়ার প্রথম অভিজ্ঞতা 

 
ধন্যবাদ।

মন্তব্যসমূহ