নারী ও মানবজন্ম
ছেলেরা নাকি মেয়েরা প্রথমে হাঁটা শুরু করে? # উভয়ই ভুল: শৈশবকালে হাঁটার দক্ষতার ক্ষেত্রে গবেষণা গুলি ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কোনও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখায় না। উভয়ই সাধারণত ১ বছর বয়সের পর স্বাধীনভাবে হাঁটা শুরু করে, প্রায়ই ১৪ মাসের কাছাকাছি। তবুও, কিছু বাবা-মা বিশ্বাস করেন যে ছেলেরা তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করে!
যেসব মায়েরা তুলনামূলক অপরিপক্ব সন্তান জন্ম দিতেন, তারা তখন বেশি বেঁচে থাকা শুরু করেন।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী মানব শিশু তখন থেকে অপরিপক্ব অবস্থায়ই জন্মাতে শুরু করে।
ফলে কাজ বেড়ে যায় মায়েদের অপরিপক্ক শিশুটিকে বাঁচাতে ।এজন্যই দেখবেন একটি মুরগীর বাচ্চা যেখানে জন্মানোর দু’সপ্তাহ পর স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখে যায়, সেখানে বছরের পর বছর ধরে যত্ন ও শিক্ষার দরকার হয় একটি মানব শিশুর।
পরিবার,সমাজ ও দেশ গঠনে নারী:
এর ফলে আরেকটি বিষয় ঘটেছে- সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে মায়েরা গড়ে তুলেছে পরিবার, সেই পরিবার থেকে এসেছে সমাজ।
পরিবারে নারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা মা, স্ত্রী হলেও সমাজে বিভিন্ন ভূমিকা হল নেত্রী, প্রশাসক, পারিবারিক পুষ্টির ব্যবস্থাপক এবং সর্বশেষ দেশের দায়িত্বে তারা সফল রাষ্ট্র নায়ক ।নারীর আবেগ:
একজন নারীর মাসের প্রতিটি দিবস আলাদা, সব নারী বুঝুক বা না বুঝুক। নারীর হরমোন লেভেল প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তনশীল আর তাই দৃষ্টিভঙ্গি, শরীরের শক্তি, স্পর্শকাতরতা এক একদিন একেক রকম হয় তাদের।
মাসিকের পর হতে দশ দিন খুব প্রাণবন্ত থাকবে, পরের তিনচার দিন খুব আকর্ষণীয় ও যৌনাত্বক পোশাকে সাজবে । ওভুলেশন হওয়ার পর প্রজেস্টেরন হরমোন বাড়বে শরীরে । এই সপ্তাহে সে হঠাৎ ঘরকুনো হবে, প্রিয়জনের জন্য চা কফি বানাবে, বিছানায় গড়াগড়ি দেবে তার সাথে। ঠিক এরপরেই সে ছিঁচকাঁদুনি হবে, খিটখিটে হবে । মাসিকের ১২-২৪ ঘন্টা আগে ভয়ংকর বদরাগী হবে।
যমজ বাচ্চার মহিলাদের গর্ভাবস্থার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণেরও বেশি। মাতৃ মৃত্যুহারও বেশি, শুধু ডেলিভারি খরচ কম (এক খরচায় দুটি)।
মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (mt DNA): মায়ের বংশ তালিকা।
আপনারা জানেন নিউক্লিয়াসের ডিএনএ পিতামাতা উভয়ের থেকে রিকম্বিনেশন হয়ে সন্তানের ডিএনএ তৈরি হয়। কিন্তু মাইটোকন্ড্রিয়ার
নিজস্ব ডিএনএ আছে যা কেবল মায়েদের থেকেই আসে এবং অক্ষত থাকে। ফলে এটা ট্র্যাকিং করে মায়েদের সমস্ত পূর্বমহিলা ( পূর্বপুরুষ) সনাক্ত করা সম্ভব।একজন স্কটিশ, জাপানিজ ও ভারতীয় মহিলার mtDNA এত বেশি মিল , যে তিনটি শিম্পাঞ্জির mtDNA এ তে যোজন পার্থক্য।
হোমো স্যাপিয়েন্স দের mtDNA গবেষকরা বলছেন, বর্তমান মানুষদের সব মা একজন ই , এবং তিনি ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে আফ্রিকা থেকেই এসেছেন।
সুতরাং আপনি আমার মায়ের দিকের আত্নীয় হন।
প্রথম নারী বা ঈভ:
ইতিমধ্যে mtDNA এর মাধ্যমে আমরা জেনেছি , বর্তমান হোমো সেপিয়েন্সদের উৎপত্তি একজন নারী থেকেই , যার জন্ম আফ্রিকায়। তাঁর উত্তরসূরিরা আফ্রিকা থেকে বের হয়ে লোহিত সাগরের তীর হয়ে ভারতের দক্ষিণ উপকূল হয়ে জাভা দ্বীপ পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে একদল অস্ট্রেলিয়া (১০হাজার বছর পর) ও ওপর দল সাইবেরিয়া হয়ে বেরিং প্রণালী দিয়ে আলাস্কা পৌঁছে।
কাল্পনিক প্রথম নারী বা ইভ!
উর্বরতাই হল আকর্ষন:
মেয়েদের দৃষ্টিশক্তিঃ
মেয়েদের ফিল্ড অব ভিশন ছেলেদের থেকে বেশ চওড়া। ছেলেদের পেরিফেরাল ভিশন (ফোকাস পয়েন্ট বাদ দিয়ে আশেপাশের বস্তু দেখার ক্ষমতা) মেয়েদের তুলনায় অনেক কম। ছেলেদের দৃষ্টি অনেকটা টানেল ভিশন এর মত। কৃষি বিপ্লব এর আগে যখন মানুষ শিকারী ছিলো তখন ছেলেদের টানেল ভিশন শিকারের উপরে ফোকাস করতে সাহায্য করতো আর মেয়েদের চওড়া পেরিফেরাল ভিশন ফলমূল ইত্যাদি খুঁজে পেতে সাহায্য করতো। এই বৈশিষ্ট্য এখনও আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে।
এই কারণেই দেখা যায় ছেলেরা সহজে কিছু খুঁজে পায় না যেখানে মা/ বৌ এসে খোঁজামাত্র তা খুঁজে পায়। একই ভাবে কোন ছেলে একটা মেয়েকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলেও মেয়েটা বুঝতে পারে সেটা, ছেলেদের টানেল ভিশন এর কারণে সোজাসুজি মেয়েটার দিকে তাকাতে হয়। কিন্তু মেয়েরা যদি একটা ছেলেকে দেখে, চওড়া পেরিফেরাল ভিশন এর জন্যে ঠিক সোজাসুজি না তাকিয়েও দেখতে পারে, যার জন্যে ছেলেদের বুঝার কোন উপায় থাকেনা মেয়েটা আসলে কী দেখছে।
বডি ল্যান্গুয়েজঃ
প্রাকৃতিকভাবেই মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অন্যের শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) পড়তে বেশি সক্ষম। ছেলেরা অনেক চেস্টা করেও হয়তো না বলা কথাগুলো বুঝতে পারেনা, আর মেয়েরা এগুলো অনেকটা যেন না চাইতেই বুঝে যায়।
আমাদের ভাষা প্রকৃতপক্ষে দুইটা, একটা হচ্ছে আমরা মুখে যা বলি সেটা আর অন্যটা হচ্ছে শরীর দিয়ে যেটা বুঝাই সেটা। কথা বলার সময়ে কীভাবে হাত নাড়ছি, চোখ কেমন করছি, কোন দিকে তাকাচ্ছি এসব প্রতিটি বিষয়ই অনেক না বলা কথা বলে দেয় আর সেটাকেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলে। মেয়েদের জন্যে যেন এটা প্রকৃতির একটা গিফট, তাদের পক্ষে এগুলো বুঝতে পারা কোন ব্যাপার ই না। নবজাতক সন্তান মুখে কিছু বলতে পারেনা। তাই মায়েদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বুঝতে হয় বাচ্চা আসলে কী চাচ্ছে। এছাড়াও কোন পুরুষ তাকে নিয়ে কী ভাবছে আসলে- সেটা বুঝতে পারাও মেয়েদের নিরাপত্তার জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়। আর এসবের কারণেই মেয়েরা এদিক থেকে এত এক্সপার্ট।
নিরাপত্তা সর্বাগ্রে:
আমরা অনেকেই বলি, অমুক লোক বিয়ের পর বেশ মোটা হয়ে গিয়েছেন। বিবর্তন বলছে এটিও নারীর কীর্তি। গভীর প্রেম বা সম্পর্কে থাকলে স্ত্রী তার স্বামীকে বেশি খাবার খাওয়াতে চায়। এতে স্বামীটি বলশালী হলে সংসার ও সন্তানদের জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে সে। ওপরদিকে অন্য মেয়েরা মোটা মানুষ অপছন্দের কারনে দূরে সরে থাকে।
মেয়েরা ছেলেদের আগে বড় হয়! :
বিবর্তনে যাই বলা হোক না কেন এর জন্য দায়ী বিজ্ঞান মতে নারীর ওভারি বা ডিম্বাশয়। ওভারি নিঃসৃত ইস্ট্রোজেন হরমোন মানুষের হাড়ের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে যার প্রভাবে হাড়ের গ্রোথ প্লেট আবির্ভুত হয় , হাড় আর বাড়ে না। পুরুষের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন লেভেল peak এ পৌঁছায় আরো দেরিতে ফলে পুরুষ এর হাড়ের গ্রোথ প্লেট আরো কিছু সময় পরে আবির্ভুত হয়।
মেয়েদের ঘাড়ঃ
মেয়েদের ঘাড়ের পেশী অর্থাৎ নেক ছেলেদের ঘাড়ের তুলনায় সাড়ে চার গুন বেশি নমনীয় বা ফ্লেক্সিবল। ছেলেদের এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। ইউনিভার্সাল মেডিকেল কেয়ার রিসার্চ সেন্টারের একটি সমীক্ষার দ্বারা জানা যায় যে ঘাড়ের সমস্যা জাতীয় রোগে ছেলেদের চেয়ে ১.৩৮ শতাংশ বেশী মেয়েরা আক্রান্ত হয়। কারন মেয়েরা তাদের সম্পূর্ণ জীবনে দৈনন্দিন কাজে ও অফিসে নিজেদের ঘাড় বেশি ব্যাবহার করে,যা একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের থেকে ৩৭.৯ গুন বেশি।
শ্রবনশক্তিঃ
জটিলতা:
মেকআপ:
মেনোপজ
আমরা দেখেছি নাতি নাতনিদের জন্য দাদি বা নানীর কত দরদ। এই দরদ ই মেনোপজ হবার কারন বলে মনে করা হয়। সাধারণত পুরুষের বাবা হবার ক্ষমতা শতবছর হলেও নারীরা গড়ে ৪৫ এর পরে আর মা হতে পারেন না। এর কারণ ওই বয়সে তারা অনেকেই দাদি নানী হন।এমতাবস্থায় দাদিনানীর নিজেদের সন্তান হলে নাতিদের দেখভালে সমস্যা হয়। উপরন্তু নাতি পুতির মাধ্যমে তার নিজস্ব জিন ই বিকশিত হয়।
সেজন্য অনেক নাতনি দেখতে হুবহু দাদির মতন হয় আর দাদিও নাতনির ভেতরে নিজের ছায়া খুঁজে পান। সেকারনে তার ডিম্বাশয়ের পূর্বনির্ধারিত প্রাকৃতিক ইনভলিউশন ঘটে। এটাই প্রাকৃতিক মেনোপজ।ধন্যবাদ ।
মন্তব্যসমূহ