মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়ায় পান্তাভাত আলু ভর্তা রেসিপি

মাস্টার শেফ


মুখরোচক হওয়ার রহস্য হল ভর্তা করার সময় আলুর সমস্ত পুষ্টি ও পাইরাজিন বের হয়ে ভাঁজা পেঁয়াজের সাথে বিক্রিয়ায় মাতে।

মাস্টার শেফ বা শেফ ডি কুইজিন ( ফরাসী ভাষায়), একটি রেস্তোরাঁর প্রধান শেফের পেশাগত শিরোনাম৷


তবে MasterChef হল একটি প্রতিযোগিতামূলক রান্নার অনুষ্ঠান যা টেলিভিশন বিন্যাসে ১৯৯০ সালে যুক্তরাজ্যে উদ্ভূত হয়েছিল। ২০০৫ সালে বিবিসিতে প্রচার হলে অনুষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত হয় ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।


পুনরুজ্জীবিত ফরম্যাটটি আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রি শুরু হলে এটির প্রথম আন্তর্জাতিক অভিযোজন ছিল মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া, যেটি ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল।


শো এর বিন্যাস একই মাস্টারশেফ লোগোর অধীনে সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়েছে, এবং এখন ৪০ টিরও বেশি দেশে প্রযোজিত হয় এবং ২০০ টিরও বেশি অঞ্চলে প্রচারিত হচ্ছে।


ফরম্যাটটি প্রায়শই চারটি প্রধান সংস্করণে উপস্থিত হয়েছে:


  1. মাস্টারশেফ সিরিজ,
  2. পেশাদার মাস্টারশেফ ,পেশাদার কর্মরত শেফদের জন্য,
  3. সেলিব্রিটি মাস্টারশেফ, প্রতিযোগী হিসাবে সুপরিচিত সেলিব্রিটিদের নিয়ে,
  4. জুনিয়র মাস্টারশেফ, শিশুদের জন্য তৈরি, যা ১৯৯৪ সালে প্রথম হয়েছিল এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্যান্য দেশেও প্রসারিত হয়েছে।


মাস্টার শেফ অস্ট্রেলিয়া



মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া হল একটি অস্ট্রেলিয়ান প্রতিযোগিতামূলক রান্নার রিয়েলিটি শো যা মূল ব্রিটিশ মাস্টারশেফের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।


এই সিরিজের অন্যতম জনপ্রিয় শো এর সংস্করণ এটি যেখানে সেরা শেফ খেতাব অর্জনের জন্য মাস্টারশেফ কিচেনে কয়েক ডজন হোম শেফ লড়াই করে যা শীর্ষস্থানীয় অস্ট্রেলিয়ান শেফদের দ্বারা বিচার করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ৪৪% নাগরিক এই শো এর নিয়মিত দর্শক।


চারটি প্রধান সংস্করণ থাকা সত্ত্বেও, ২০১২ সালে, অস্ট্রেলিয়া দাতব্যের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে প্রাক্তন প্রতিযোগীদের নিয়ে মাস্টারশেফ অল-স্টারস নামে পঞ্চম সংস্করণ তৈরি করেছিল যা এখনো বিভিন্ন দাতব্য কাজের সাথে জড়িত।



পান্তাভাত আলু ভর্তা রেসিপি

মাস্টার শেফ কিশোয়ার চৌধুরী ও তার বিখ্যাত পান্তা ভাত -আলু ভর্তার রেসিপি

এই রেসিপি পৃথিবীর কোন রেস্তরাঁয় পাবেন না"

বিচারকদের সামনে অত্যন্ত বলিষ্ঠ কন্ঠে তাঁর পান্তা ভাত ও আলু ভর্তা কে উপস্থাপন করার সময় বলেছিলেন কিশোয়ার চৌধুরী।


সাথে কড়া করে সার্ডিন মাছ ভাজাও ছিল। তাতে বিচারকদের মত আমিও অভিভূত হয়েছিলাম। চীনা বংশোদ্ভূত মহিলা বিচারকটি তার অন্য সহকর্মীদের বললেন, এটি অত্যন্ত শক্তিশালী রেসিপি।


আমিও বলি, কিশোয়ার একজন শক্তিশালী বাংগালী, কেননা দুই বাংলার মেলবন্ধন সন্তান তিনি। তাঁর বাবা একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা ও মা কলকাতার সম্ভ্রান্ত বংশের।


একসময় লন্ডন কিংবা আমেরিকায় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো ভারতীয় হিসেবে অনেকদিন ব্যবসা করত । কেননা তখন পর্যন্ত বাংলাদেশি রেস্তরাঁগুলো বিখ্যাত হয়নি স্বল্প পরিচিত দেশ হিসেবে।


কিন্তু ইউরোপীয় পুরুষদের মধ্যে ভারতীয় সেই হোটেলগুলো সম্পর্কে এমন একটা মিথ ছিল যে, বাংলাদেশি কারি খাইয়ে বান্ধবীকে " i want to marry you " বলে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা নাকি ব্যর্থ হয়না!


মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া অনুষ্ঠানটি দেখেছিলাম ইউটিউবে। কিশোয়ার চৌধুরী সরাসরি বাংলাদেশী রেসিপি হিসেবেই তার অসম্ভব মজাদার ডিশগুলো পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন।


আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কাঁচা আম দিয়ে রুই মাছের কারি কিংবা খাসির মাংসের রেজালা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাঙালী রান্নার সেরা উপস্থাপনা সম্ভবতঃ এটাই।


এ প্রসঙ্গে পান্তা ভাত নিয়ে আমার একটি গল্প মনে পড়ে গেল। অনেকদিন আগে এক স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম সাত সকালে।


তিনি পান্তাভাত খাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে দ্রুত সেটি সরিয়ে ফেললেন। পান্তা আমারও খুব প্রিয় খাবার।


তবুও অন্যদের সামনে পান্তা ভাত খেতে বাঙালির একটা জড়তা ছিল এতদিন। সেদিন কিশোয়ার এর অনুষ্ঠানে এত সুন্দর পান্তা আলু ভর্তা দেখে জিভে জল এসে গেল।


স্ত্রী কে বললাম, খুব গরম পড়ছে, কাল থেকে অফিস যাওয়ার আগে পান্তা ভাতই খেয়ে যাব। তোমাকে কষ্ট করে রুটি বানাতে হবে না।



পান্তা ভাতের ইংরেজি নিয়ে বাংলায় আরো একটি উত্তর ছিল আমার। সবশেষে কিশোয়ারের মত সকল বাঙালি রাঁধুনিদের অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাই।

মন্তব্যসমূহ