তখন সদ্য তরুণ। চিকেন শর্মা খাবারটি কোথায় জানি প্রথম অর্ধেক খেয়েছিলাম, সেটুকুই দেয়া হয়েছিল। প্রথম স্বাদ, বেশ ভাল লেগেছিল। বাকি অর্ধেক ত আর চেয়ে খাওয়া যায় না। তাই ইচ্ছা টা রয়ে গিয়েছিল।
প্রবর্তক মোড়ের এক হাসপাতালে রুগী দেখতে গিয়ে বেলা তিনটা বেজে গেল। পেটে দুপুরের ক্ষুধা। মেলা জ্যাম রাস্তায়, কোন খালি সিটের গাড়ি নেই। সামনের এক নামকরা 'মিলানো' রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলাম। আশেপাশের টেবিলে বড়লোকের স্মার্ট ছেলেপুলেরা, খাওয়ার চেয়ে খিকখিক হাসি তামাশায় মগ্ন।
আমার চেয়েও দেখতে স্মার্ট সুন্দর এক ওয়েটার আসলো, এপ্রিলের এই গরমে সে ওয়েস্ট কিট পড়ে আছে দেখে আমার দমবন্ধ লাগছে, যদিও এসি ছিল সেখানে। বললাম একটা কোল্ড ড্রিংকস দাও, তারপর চিন্তা করি কি খাবো। ভাত খাওয়া যাবে না বুঝতে পারলাম, পকেটের সর্বনাশ হয়ে যাবে।
হঠাৎ সেদিনের অর্ধেক শর্মার কথা মনে পড়লো। জিজ্ঞেস করতে সে খুব জোরে মাথা নেড়ে সায় দিল, হবে সেটা। অর্ডার দিয়ে ফ্রেস হতে বাথরুমে গেলাম।
এসে টেবিলে বসে দেখি বড় এক বনরুটি সমেত আইটেম সাজানো। বনের উপরেরটা তুলতে দেখলাম এক বস্তা শশার কুঁচি সাথে চিকেনের কিছু চিকপিস।
ওয়েটার হতে হলে কি স্মার্ট সুদর্শন হতে হবে?
না, রেস্তোরাঁয় ওয়েটার হিসেবে কাজ করার জন্য আপনাকে দেখতে সুন্দর হতে হবে না। আসলে, এটি আপনাকে বেশী টিপস পেতে সাহায্য করতে পারে। সেজন্য অনেক স্মার্ট ছেলেরা এই পেশায়,,,!
কল্পনায় চোখের সামনে ভেসে উঠল গোল রোল শর্মার ছবি। জলন্ত বার্নারের সামনে থেকে গ্রিল্ড চিকেন পাতলা করে কেটে নিয়ে রুটির ভেতরে চিজ সমেত পুরে যত্ন করে পাতলা ফয়েল পেপারে রোল করে দেয়া।
যেমনটা মা ছোটবেলায় রুটির ভেতর ডিম মামলেট দিয়ে রোল করে টিফিন বক্সে ভরে স্কুলব্যাগে চালান করে দিতেন।
কিন্তু এটা চোখের সামনে কি দেখছি! বিরক্তিকর বনরুটির ভেতর চিকেন উইথ শশার বস্তা। ওয়েটারকে ডেকে বুঝিয়ে বলতে সে পাল্টা আমাকে বুঝিয়ে দিল এটাই নাকি স্পেশ্যাল শর্মা।
আমি যে শর্মার কথা বলছি, সেটা এখানে হয় না, তার দাম বড়জোর আশি টাকা কিন্তু এটা তাদের স্পেশ্যাল আইটেম, এর দাম আড়াই শত টাকা।
বুঝলাম ঘরে গিয়ে ডাল ভাত খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতে হবে। এই বনরুটি শুকনো গলা দিয়ে ভর দুপুরে নামবে না, লাঠি দিয়ে গলায় ঠেলে দিলেও না। তাকে বললাম এসব আমি খাবো না, কিন্তু সে অপারগ, কোন চেঞ্জ হবে না বলল। কথা বাড়ালাম না আর।
ভদ্র ঘরের ছেলে আমি। বললাম , এটা খেতে আসিনি, বিল দেন , চলে যাব। তিনি বিল আনতে পেইড করে উঠে দাঁড়ালাম। দেখলাম সে টিপসের জন্য তাকিয়ে আছে। জানতাম এদের বেতনের চেয়ে টিপস বেশি, অনেক সুন্দর ওয়েটারের নাকি বেতনই নেই, টিপসই বেতন।
আমি রাগে কুড়ি টাকার নোট রেখে হাঁটা ধরলাম। কিছু না খেয়ে তার বিল দিলাম , তার আবার টিপস! জীবনে কোন ওয়েটারকে টিপস হীন করিনি,এ আর বাদ যাবে কেন!
বাইরে ততক্ষনে জ্যাম কেটে গেছে , সিএনজি নিয়ে বাসায় আসতে আসতে ভাবলাম, এটা কাউকে বলা যাবেনা।
শুধু আজ শেয়ার করলাম আমার ব্লগে। ধন্যবাদ, গালি দিয়েন না , আমি তখন কিছুটা বোকা ই ছিলাম, এখনও তেমন আছি।
অনুরোধ করবো, প্রথমতঃ ভাল করে না দেখে, কোন দামি খাবার অর্ডার করবেন না। দ্বিতীয়ত: বাসায় কোন খাবার বা ফল আনতে চাইলে , যত যত্ন করে প্যাকেট করুক, হাতে নেয়ার আগে পুনরায় খুলে দেখবেন। তৃতীয়ত: বুফে সিস্টেমের রেস্টুরেন্টে দামি খাবারগুলো শেষের দিকে থাকে, যখন প্লেটে আর নেয়ার জায়গা থাকে না।
রেস্তোরাঁর প্রতারণা ও ফাঁদ সমুহ
আপনি সম্ভবত মনে করেন যে ভাল একটি রেস্তোরাঁয় বন্ধের দিনে পরিবার নিয়ে যাওয়া দারুন এক জিনিস, যা আপনাকে কম দামে একটি দুর্দান্ত খাবার দেওয়ার দাবি করে, এটি আপনার সাম্প্রতিক পাওয়া সেরা ধোঁকা।
আপনি সম্ভবত জানেন না যে বেশিরভাগ রেস্তোরাঁরা খাবারের পুনর্ব্যবহার করার জন্য ব্রাঞ্চ এবং বুফে ব্যবহার করে যা সেই সপ্তাহে অর্ডার করা হয়নি।
তারা চারপাশে পড়ে থাকা জিনিসগুলি ব্যবহার করে এবং একই উপাদান দিয়ে বেকড খাবার তৈরি করে যাতে আপনি বলতে না পারেন যে এটি বাসি নাকি তাজা।
বেশিরভাগ সময় কোন হোটেলের কিছু ব্রাঞ্চ এবং বুফেগুলি অনলাইন ডিলের ডিসকাউন্টের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। যা রেস্তোরাঁর সাধারণ মানুষের জন্য বোধগম্য নয়, বা তার গ্রাহকদের নাগালের মধ্যে থাকে না।
বড় প্লেটে ছোট পরিবেশনঃ
এটি রেস্টুরেন্টের জন্য আরেকটি পুরানো কৌশল। এটি একটি নতুন স্টাইল যে আপনি একটি বিশাল প্লেটের কেন্দ্রে বিদেশী চেহারার খাবারের ছোট একটি পরিবেশন পান।
প্রকৃতপক্ষে আপনি একটি অতিরিক্ত মুল্যহারের জন্য একটি ক্ষুদ্র সাহায্য পাচ্ছেন! যেন দয়া করে দিয়েছে!
সস্তা জিনিস দিয়ে দামী আইটেম প্রতিস্থাপনঃ
আপনি মাশরুম বা স্যুপের মতো দামি কিছু অর্ডার করেছেন। আপনি আসলে যা পাবেন তা হল কাটা মাশরুম যা আপনি আপনার মুদি দোকানে পেতে পারেন। পার্থক্য স্বাদ করতে সক্ষম হবেন কোন উপায় নেই!
কিন্তু আপনি দামী খাবারের জন্য অর্থ প্রদান করছেন। বার্গারের পেটিগুলো দোকানের ছুটা মাংস ও পিজার মাংসের সসেজগুলো আলু ময়দার আধিক্য। বরং স্টেক গুলো দাম দিয়ে খেলেও তা কিছুটা সলিড পান।
স্যুপ এবং রুটির ঝুড়িঃ
বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ আপনাকে বার্গার বা স্যান্ডউইচের একটি বড় রুটির অফার করবে এবং আপনি মনে করেন যে এটি একটি দুর্দান্ত পরিষেবা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, রেস্তোরাঁটি আপনাকে ঠেলে দিচ্ছে যাতে আপনি ছোট অংশগুলি দেখতে না পান।
রুটির আড়ালে তারা প্রধান কোর্সে পরিবেশন করবে সাধারণ মানের খাবার! কারণ আপনি রুটির ঝুড়ি খেয়ে পূর্ণ হবেন!
বিনামূল্যে পানি / পানীয়?
রেস্তোরাঁ ব্যবসায় বিনামূল্যে লাঞ্চ বলে কিছু নেই এবং সস্তায় পানীয় বলে কিছু নেই। যেই পানীয় টি খাচ্ছেন, তার হয়তো মেয়াদ নেই।
উদাহরণ স্বরূপ ধরুন যে দামী পানীয়টি আপনি অর্ডার করেছিলেন এটা ভেবে যে এটি একটি ভাল ব্র্যান্ডের, যখন বারটেন্ডার সম্ভবত ও-ই ব্রান্ডের বোতল থেকে দেখতে একই অন্য ড্রিংক ঢেলে দিচ্ছে!
অন্যান্য পানীয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা। কোকের বোতলে মোজো ঢেলে দিলে তা কজন জানবে? বিশেষ করে যখন আপনি ককটেল অর্ডার করেন, তখন কেউ বলতে পারে না এতে কী ঢুকে গেছে। কিন্তু আপনি ঐ পানীয়র জন্য অতিরিক্ত ভ্যাট এবং ট্যাক্সের জন্য অর্থপ্রদান করছেন যা বাইরে বেশ কম দামের।
ডিপ ফ্রাই
আপনি যখন মাংসগুলিকে ডিপ ফ্রাই হিসেবে পান, তখন খাবারের আসল স্বাদটি ছদ্মবেশী হয়।
বেশিরভাগ সময় রেস্তোরাঁ একই তেলে মাংস এবং শাকসবজি ইত্যাদি ডিপ ফ্রাই করে। তাই আপনি যদি নিরামিষ হন বা তাজাখাবার ভক্ত হন তবে আপনি সবই হারাবেন।
পচা মাংস পরিবেশন করা
এটি সেইসব রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে সত্য যেগুলি আমিষ খাবার পরিবেশন করে৷ কখনও কখনও তরকারিতে ব্যবহার করা হয় তার সময় পেরিয়ে যাওয়া মাংস।
ঘন মশলাদার তরকারিগুলি পচা মাংসের স্বাদকে ছদ্মবেশ দেয়। আপনি কেবল পরের দিন সকালে এটি সম্পর্কে জানতে পারবেন যখন পেট ডাকবে!
নিরামিষাশীরা সাবধান!
আপনি যদি নিরামিষাশী হন, তাহলে এই পয়েন্টটি আপনার জন্য।
বেশিরভাগ সময় শেফ একই পাত্র ব্যবহার করে আমিষ খাবার তৈরি করে।
এমনকি বেশিরভাগ তরকারির ভিত্তিও একই। তাই আপনি একটি বিশুদ্ধ নিরামিষ রেস্টুরেন্টের নিশ্চয়তা পাবেন না।
তাই পরের বার যখন রেস্তোরাঁয় আপনি খাবার খাবেন, কিছু স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন এবং আপনি আপনার অর্থের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন! প্রয়োজনে প্রতিবাদ করুন।
মন্তব্যসমূহ