লুঙ্গি
লুঙ্গি এশিয়ার অনেক দেশে বহুল ব্যবহৃত পোশাক। অফিসিয়াল পোশাক না হলেও ঘরে ব্যবহৃত পোশাক হিসেবে এটা আমাদের প্রথম পছন্দ।
গরমকালে ত এর তুলনায় হয়না। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পাখি যদি মশা হত, রাষ্ট্রীয় পোশাকও লুঙ্গি হত।
লুঙ্গি আবিষ্কারের পরে আর বিকশিত হতে পারে নি- এটি তার বিবর্তনের শীর্ষে রয়েছে। অথচ লুঙ্গির বোন স্কার্ট বিবর্তিত হতে হতে মিনি থেকে মাইক্রো স্কার্ট হয়ে গেছে।
লুঙ্গি ব্যবহারে সুবিধাগুলো
- লুঙ্গি পোশাকটি উলটো, সোজা এবং ভিতরে, বাহিরে একইভাবে পরা যেতে পারে।
- লুঙ্গিই একমাত্র পোশাক যার ওপরে হাফ হাতা, ফুলহাতা শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি বা কিছুই না পড়ে থাকা যেতে পারে।
- লুঙ্গির সাথে জুতা, চপ্পল, স্যান্ডেল বা খালি পা সবই মানানসই।
- লুঙ্গি সারা দিন আপনার গোপনাঙ্গকে বায়ুযুক্ত রাখে। এটি অপ্রয়োজনীয় ফান্গাস জাতীয় চর্মরোগকে দূরে রাখে। এটি অত্যধিক ঘামযুক্ত এলাকায় ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবের কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে না।
তবে লুঙ্গির একমাত্র অসুবিধা হল ( যে অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল) কুকুর দৌড়ানো দিলে খবর আছে। এছাড়া বেশি 'বড়লোক' পরিবারের মেয়েরা লুঙ্গি পরিহিত ছেলে দেখলে নাক সিটকোয়। কিন্তু
থামি (সেও এক প্রকার লুঙ্গি! ) পড়া মেয়েদেরকে ছেলেদের ভালোই লাগে। এদিক দিয়ে ছেলেরা বেশ উদার।
লুঙ্গির উৎপত্তি
যদিও লুঙ্গির উৎপত্তি তামিলনাড়ুতে, দঃ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, ব্রুনাই, ইয়েমেন, সোমালিয়াতে এটা ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশের পার্বত্য এলাকা, মিয়ানমার ও দঃ ভারতে মহিলারা লুঙ্গির মত থামি পরিধান করেন। এটি সেলাইবিহীন, তাই সুবিধা অনেক।
লুঙ্গি ও মায়ানমার
চীন জাপানে কিমোনো, বা আও দাই ইত্যাদি, এগুলি কেবল ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে আছে এবং শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।
তবে মিয়ানমারে ভিন্ন। Longyi -কে মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বলা হয়, তা এখনও আশ্চর্যজনকভাবে সর্বব্যাপী।
মায়ানমারের সংস্কৃতির সাথে লুঙ্গির নিশ্চয়ই এমন দৃঢ় বন্ধন ছিল যে এটি পশ্চিমা পোশাক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় নি।
লুঙ্গি বার্মিজ জনগণের কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এমনকি দরিদ্ররাও লং লুঙ্গি কেনার জন্য সঞ্চয় করে।
বার্মিজ পোশাকের এই অনন্য অংশটি অবশ্যই মিয়ানমারের আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত কাপড়।
এটি বায়ু সঞ্চালন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় তাপে পরিধানকারীকে ঠান্ডা রাখে। তাই সেখানে জাতীয় পোশাক Longyi।
Longyi বার্মিজদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক পোশাক এবং দৈনন্দিন পরিধান উভয়ই।
গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে, যেমন বিবাহ, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, সম্মেলন বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পুরুষদের তাদের সাদা গোল-কলার শার্টের উপরে একটি মোটা জ্যাকেট পরতে হয়।
বার্মার ঐতিহ্যবাহী পোষাক চটপটে ক্রিয়াকলাপ, এমনকি খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই ক্ষেত্রে, আপনি ড্রেসের মাঝখানে পোষাকের সামনের অংশটিকে পিছনের দিকে টেনে আনতে পারেন, তারপরে এটি আপনার পিছনের কোমরে টেনে নিতে পারেন।
কৃষিকাজ বা অন্যান্য শ্রমের কাজ করার সময় বার্মিজ পুরুষরা এভাবেই পরতেন। প্রাচীনকালে সৈন্যরাও এইভাবে পরতেন।
এটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিফর্ম।
যদিও কিছু বাচ্চা আধুনিক পশ্চিমা পোশাক পরতে পছন্দ করে, তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও স্কুলে আনন্দের সাথে লংগি পরে। তারা বলেছে যে "কারণ লংগি মায়ানমারের অনন্য সংস্কৃতির অংশ"।
দক্ষিণ ভারতে লুঙ্গি
মুসলিম দেশের সাথে লুঙ্গির সম্পৃক্ততা নেই বরং এটি দঃ এশিয়ার প্রচলিত পোষাকের অংশ, যেমনটা চীন, জাপানের কিমোনো।
ধুতির সাথে লুঙ্গির পার্থক্য
একটি ধুতি কখনও সেলাই করা হয় না; এটি এমন একটি কাপড় যা লম্বা এবং সেলাই নেই, শাড়ির মতো উপরের প্রান্ত ভাজ করতে হয়।
একটি লুঙ্গি উল্লম্বভাবে সেলাই করা হয় যাতে উভয় প্রান্ত একত্রিত হয়।
ধুতির একপ্রান্ত উল্লম্বভাবে মুক্ত হলেও অপর প্রান্ত পশ্চাৎদ্দেশে গুঁজে দেয়া হয়ে।
লুঙ্গির ফাঁপা অংশ ব্যবহারকারীকে এটিতে প্রবেশ করতে দেয় এবং এটি কেবল কোমর জুড়ে বেঁধে দেয়।
ধুতি সাধারণত সাদা রঙের এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য একটি আদর্শ। যেখানে লুঙ্গি রঙিন প্রিন্টের হয় ।
উপসংহার
অনেক স্থানে কোমরে পেচিয়ে সেলাই হীন লুঙ্গি পরা হয়। ভারতে শাড়ী বা ধুতির প্রচলন আছে সেলাইবিহীন পোশাক হিসেবে। প্রাচীনকালে জোড়া দেয়া পোশাককে অমঙ্গল মনে করা হতো। সে হিসেবে সেলাইবিহীন লুঙ্গিকে মঙ্গলময় পোশাকও বলা যায়।
কোন দেশের পোশাক সেদেশের লোকজ প্রথা মাফিক সাথে ধর্মীয় সমর্থন থাকলে, সেটা সর্বজন গ্রাহ্য হয়।
পোষাক আমাদের লোকজ ঐতিহ্য, ধর্মীয় সমর্থন ও উপযোগিতার মিথস্ক্রিয়া মাত্র ।
সেজন্য জয়তু লুঙ্গি।
মন্তব্যসমূহ