অবচেতন মনের শক্তি
অবচেতন মনের শক্তি কী চেতনার চেয়ে শক্তিশালী? আপনি যখন অবচেতন মন সম্পর্কে গুগল করবেন তখন আপনি নিচের ফলাফলগুলি পাবেন।
সফল হওয়ার জন্য অবচেতন মনের শক্তি কীভাবে ব্যবহার করবেন! ইত্যাদি।
আমাদের অবচেতন মন হল আমাদের মনের একটি অংশ যা আমাদের আচরণ প্রভাবিত করতে পারে, যদিও আমরা এটি সম্পর্কে সচেতন নই ।
আসলে অবচেতন মন আমাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে এমনকি আমরা এটি সম্পর্কে সচেতন না হলেও।
এবার গুগল বাদ দিয়ে আমি অবচেতন মন নিয়ে নিয়ে আলোচনা করব।
নৃত্বত্ত বিশেষজ্ঞদের মতে মানবজাতির ইতিহাসে সর্বদা বিদ্যমান এবং এখনও সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হল "বিশ্বাস"।
জীবনের নিয়মই হল বিশ্বাসের নিয়ম
আমাদের বিশ্বাসগুলি হয় জেলখানা হতে পারে, আমাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আচরণে আটকে রাখতে পারে, অথবা তারা ক্ষমতাবান হতে পারে এবং সাহসী পদক্ষেপ এবং নতুন সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যেতে পারে। (গৌতম বুদ্ধ )
কম সফল মানুষেরা বিশ্বাস করেন না যে কাজটি সম্ভব কারণ তাদের কাছে সেই লক্ষ্য সমর্থন করে এমন সহজাত বিশ্বাস বা অভ্যাস ফাইল নেই।
যদি আমাদের বিশ্বাস না থাকে যে আমরা অনেক মানুষের সেবা দিতে পারি বা একজন কোটিপতি হতে যা লাগে তা আমাদের কাছে নেই, আমরা তা করতে পারবনা, তা পরিস্থিতি যায় হোক না কেন।
আমাদের মন একটি কম্পিউটারের মতন। এটির মধ্যে সংরক্ষিত রয়েছে অসংখ্য ফাইল সহ একটি অপারেটিং সিস্টেম।
আমরা সেটা সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছি এবং সচেতন ফাইল আমাদের সচেতন মনের অংশ। আমাদের মনের এই অংশটি খুব যৌক্তিক এবং এটি যুক্তির কণ্ঠস্বর। আমাদের সচেতন মন আমাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে এমন সমস্ত লোকের কাছ থেকে আমরা যে তথ্য শিখেছি এবং অভিজ্ঞতা পেয়েছি তা দ্বারা তৈরি হয়েছে এসব ফাইল। এই ফাইলগুলি নির্ধারণ করে আমরা কীভাবে দেখব, আমরা কী করব এবং কী করব না।
আমরা যদি কিছু অর্জন করতে চাই কিন্তু আমরা সেটিকে বাস্তবে পরিণত করতে যখন পারি না তখন বুঝতে হবে, এটি অর্জন করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে প্রয়োজনিয় ফাইল নেই৷
খেলোয়াড়েরা যে ফলাফল করে তা হল তাদের অভিভাবক, কোচ, ম্যানেজার, সহকর্মী ইত্যাদি যারা তাদের খেলায় প্রভাবিত করেছে তাদেরই প্রত্যক্ষ ফলাফল।
তারা যদি তাদের সঠিক জ্ঞান ও তথ্য প্রদান করে থাকেন, তাহলে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা তাদের কাছে থাকবে। তারা অবচেতন মনে সেগুলো প্রয়োগ করে ফলাফল আয়ত্ত্বে নেবে।
আমাদের আবেগ, বিশ্বাস এবং স্মৃতি আমাদের অবচেতন মনে সঞ্চিত হয়। আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে এমন সমস্ত লোকের কাছ থেকে আমরা যে তথ্য শিখেছি এবং অভিজ্ঞতা পেয়েছি তা দ্বারা তৈরি হয় অবচেতন মন৷
যদি আমাদের অবচেতন মন কোন সাফল্যের জন্য লালায়িত না থাকে, তবে ফলাফল পরিবর্তন করার জন্য প্রথম অপরিহার্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনা।
আবার দেখুন আমরা আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারে যে তথ্য এবং ফাইলগুলি সংরক্ষণ করেছি কিন্তু ব্যবহার হচ্ছে না তা আমাদের অবচেতন মনে রয়েছে।
অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে আমাদের অবচেতন মন আমরা যা করি এবং কীভাবে করি তার ৯০% এর বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক মানুষ মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন , তারপর ও বেশিরভাগ মানুষ স্বীকার করে না যে তাদের অবচেতন মন খেলা করছে।
সত্য হল এটি সচেতন মনের চেয়ে মিলিয়ন গুণ বেশি শক্তিশালী এবং আমরা আমাদের জীবনের ৯৫ থেকে ৯৯ শতাংশ অবচেতন প্রোগ্রামগুলি থেকে পরিচালনা করি নিজেকে।
আমাদের অবচেতন মন আমাদের অনিচ্ছাকৃত ক্রিয়াগুলির জন্য দায়ী যেমন সচেতন না হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া আসা এবং এমনকি এসব সাধারণ ভ্রমণের কথা মনে না রাখা।
আমাদের অবচেতন মন বিষয়ভিত্তিক এবং এটি দেওয়া নির্দেশাবলী অনুসরণ করে মাত্র।
অবচেতন মন আমাদের অভ্যাস এবং পুনরাবৃত্তির একটি প্রাণীমাত্র।
আমাদের অবচেতন মনের শক্তি আয়ত্ত করার জন্য দুটি অপরিহার্য ফাইল
এই গুণের কারণেই আমরা মানুষ হিসেবে ভালো চরিত্রের অধিকারি হয়ে থাকি। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে ভালো-মন্দ, ঠিক-ভুল সম্পর্কে সমাজের মানুষের যেই ধারনা তাকেই মূলত মূল্যবোধ বলা হয়।
মূল্যবোধ এর সৃষ্টি হয়ে থাকে কিছু আচরনের উপর ভিত্তি করে।
- আমাদের অভ্যাস এবং
- আমাদের মূল্যবোধ ( যা বিশ্বাস এবং আত্মসম্মানের বিষয়)।
অভ্যাস (অথবা অভ্যস্ততা) হচ্ছে আচরণের একটি নিত্যকর্মসূচি যা প্রতিদিন পুনরায় করা হয় এবং অবচেতন ভাবে ঘটে যায়।
যার আত্মসম্মান নেই তার অবচেতন মন ভয়ে পূর্ন।
আমাদের সমস্ত সাফল্যের ফাইল হল অভ্যাস, মূল্যবোধ, যোগাযোগ দক্ষতা, জ্ঞান ইত্যাদির প্রয়োগ।
সাফল্য অর্জনের জন্য নিজে চেষ্টা না করে, অনেক উদ্যোক্তা তাদের মূল্যবান সময় নির্দিষ্ট বেতনের নির্দিষ্ট দৈনিক কার্যক্রমে ব্যয় করেন যা তাদের সময়কে আটকে রাখে গৎবাঁধা চাকরিসমূহে।
কারণ তারা এমনকি সচেতনও নয় যে সমস্যাটি তাদের মস্তিষ্কের ফাইলিং সিস্টেমে।
তারা কখনো এমন প্রশিক্ষক বা পরামর্শদাতাদের সন্ধানও করেন না যারা তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি প্রদানের জন্য যোগ্য৷
কারন তারা অবচেতন মনেও কখনো ভাবেন না যে তারা এমন একটি কোম্পানি খুলতে পারেন যা তারা চালাচ্ছেন। কারন ছোটবেলা থেকে চাকরিই তাদের ধ্যান জ্ঞান।
এগুলো করতে গিয়ে আমরা যে ফলাফল পাই তা হল আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক, ব্যবস্থাপক, সহকর্মী ইত্যাদি যারা আমাদের প্রভাবিত করেছে তাদেরই প্রত্যক্ষ ফলাফল। তারা যদি আমাদের সঠিক তথ্য প্রদান করে থাকেন, তাহলে আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ফাইলগুলি আমাদের কাছে থাকবে।
যদি তা না হয়, আমাদের প্রয়োজনীয় জটিল ফাইলগুলি অনুপস্থিত বা এমনকি দূষিত হতে পারে (যেমন আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস পাওয়া যায়)। এভাবেই অপরাধী বা সন্ত্রাসী তৈরি হয় অবচেতন মনে।
যদি আপনার অবচেতন 'ব্লুপ্রিন্ট' সাফল্যের জন্য 'সেট' করা না থাকে, আপনি যা শিখেন নি, আপনি যা জানেন নি এবং আপনি যা করেন নি, তা অনেক পার্থক্য তৈরি করবে।
উদাহরণস্বরূপ,
কোটিপতিদের মস্তিষ্কে তাদের আলাদা ফাইল রয়েছে৷ তাদের মনের মধ্যে রয়েছে অ্যাকশন ফাইল যা তাদের এমন পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যায় যা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজন তৈরি করে। শেষ পর্যন্ত তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায়।
নতুন তথ্য আপনি কোথায় পাচ্ছেন তা নির্ধারণ করা শুরু করার প্রথম স্থান।
আপনার পরামর্শদাতা, ব্যবস্থাপক এবং সহকর্মীরা কি বুঝতে পারেন যে কীভাবে মস্তিষ্ক কাজ করে সেইসাথে কীভাবে ফাইল তৈরি করতে হয়, ট্যাপ করতে হয় এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নিতে হয়? যদি হ্যাঁ, তাহলে দারুণ।
যদি না হয়, তাহলে হয় আপনাকে আপনার ফলাফল গ্রহণ করতে হবে অথবা আপনাকে সাহায্য করার জন্য আরও ভালোভাবে সজ্জিত কাউকে খুঁজে বের করতে হবে।
ততক্ষণ পর্যন্ত, আপনার কম্পিউটারে যে ফাইলগুলি আপগ্রেড করতে বা পরিবর্তন করতে হবে তা চিহ্নিত করুন যাতে আপনি আপনার পছন্দসই ফলাফল পেতে পারেন।
কেন আমাদের অবচেতন মন শক্তিশালী!
বিশ্বাসের সাথে পারফর্ম করা যেকোনো কিছুতে সাফল্য অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একটি পুরানো কথা আছে যে আপনি যদি আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন তবে আপনার মানসিক অবস্থা পরিবর্তিত হবে এবং শেষ পর্যন্ত এটি আপনার জীবনে পরিবর্তন এনে দেবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে আসলে মস্তিষ্ক শেখার মাধ্যমে পরিবর্তন করা বন্ধ করে না।
প্লাস্টিসিটি হল মস্তিষ্কের শেখার সাথে পরিবর্তন করার ক্ষমতা। শেখার সাথে সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলি বেশিরভাগই নিউরনের মধ্যে সংযোগের স্তরে ঘটে: নতুন সংযোগ গঠন এবং বিদ্যমান সিন্যাপসের অভ্যন্তরীণ কাঠামো পরিবর্তিত হয়।
যখন আমরা একটি নতুন জিনিস শিখি তখন আমাদের মস্তিষ্কে নতুন সংযোগ তৈরি হয় এবং তাই চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি হয়। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা এক ধরণের কল্পনা এবং কল্পনা হল এক ধরণের কাজ যা আমাদের মস্তিষ্ককে সম্পাদন করতে হয়, সেক্ষেত্রে, সেই কাজটি সম্পন্ন করতে আমাদের মস্তিষ্ককে অনেক নতুন সংযোগ তৈরি করতে হয়।
তাই সমস্ত শিক্ষাকে ইতিবাচক চিন্তার সাথে প্রতিস্থাপন করা গেলে আমি অথবা আপনি উভয়ই একসাথে একে ব্যবহার করতে পারি। এভাবেই ইতিবাচক সমাজে পরিবর্তন সাধিত হয়। আমাদের সমাজে প্রচলিত বাল্য বিবাহ কিংবা বহু বিবাহকে এভাবে অপ্রচলিত করে দেয়া সম্ভব।
আমরা সকলেই জানি যে শার্প ব্রেন হল দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এবং এর জন্য আপনাকে ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে।
• আমি আগেই বলেছি যে আমাদের চিন্তাভাবনা অনুসারে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনে নতুন সংযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং আমাদের মনে যা আছে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচরণে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে।
• দ্বিতীয় স্তবকটিতে বলা হয়েছে যে যদি ডেটা সঞ্চয় এবং পুনরুদ্ধার করা হয়, সেখানে একটি পুরানো প্রবাদ আছে "যেমন বপন করো তেমন ফসল কাটবে",এই ধারণাটি এখানে প্রযোজ্য।
এবং পরবর্তী লাইনের একই স্তবকে এটি বলে যে এটি ঠিক যেভাবে এটি প্রোগ্রাম করা হয়েছিল সেভাবে কাজ করে। Her by Programmed মানে আমাদের আচরণ এবং অনেক ফর্ম।
• প্রযুক্তিগতভাবে
যদিও এটি ঠিক প্রযুক্তিগত নয় আমি শুধু একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
তাই একইভাবে, আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি স্টোর হাউস রয়েছে যেখান থেকে আমরা গৌরবময়, আনন্দের সাথে এবং প্রচুরভাবে জীবনযাপন করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছু বের করতে পারি।
আমাদের মধ্যে অসীমতার একটি ভান্ডার রয়েছে এবং এর জন্য আমাদের মানসিক চোখ খুলতে হবে। আর অবচেতন মন হল মানসিক চোখ খোলার পথ।
লোহার সাথে চুম্বকের পার্থক্য হল, চুম্বকশক্তি সম্পন্ন লোহা তার চেয়ে প্রায় বারো গুণ ওজন তুলতে পারে যা সাধারণ লোহা পারেনা।
যে আত্মবিশ্বাস একজন ব্যক্তি কল্পনা দ্বারা অর্জন করতে পারে, প্রতিবার কল্পনা করা প্রযুক্তিগতভাবে আপনার মস্তিষ্কে এটি ফিট করবে যে আপনি এই জিনিসটি করতে সক্ষম, আপনি এটিও করতে পারেন।
আমি কিছুতেই ভয় পাই না, এবং সেই সময় আমরা অসীম বুদ্ধিমত্তার দরজায় পৌঁছতে পারি।
আপনার অবচেতনে একটি অলৌকিক নিরাময় শক্তি রয়েছে যা অস্থির মনকে বা ভাঙা হৃদয় নিরাময় করতে পারে।
আপনার অবচেতন মনকে কীভাবে ব্যবহার করবেন তা আপনাকে জানতে হবে।
আপনার অবচেতন মনের মধ্যে আপনি প্রতিটি সমস্যার সমাধান এবং প্রতিটি প্রভাবের কারণ খুঁজে পাবেন।
সূত্র, একটি নিউইয়র্ক টাইমসের বেস্টসেলার 'সিক্রেটস অফ দ্য মিলিয়নেয়ার মাইন্ড'-এর লেখক হার্ভ একার ও ডঃ জে. মারফির "আপনার অবচেতন মনের শক্তি"।
মন্তব্যসমূহ