এটি একটি লাল মাংস,আমিষ, খনিজতা এবং মিষ্টি স্বাদের স্পর্শ ও উমামী ঘ্রান সহ। বলুনতো কি?
কেন আমেরিকানরা ঘোড়া খায় না?
যদিও স্টিরিওটাইপিক্যালি ফ্রান্সকে ঘোড়ার মাংসের হাব হিসাবে দেখা হয়, ফরাসী বিপ্লবের আগ পর্যন্ত বয়স্ক ঘোড়ার ব্যান্ডওয়াগনের উপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়েনি, যখন এটি বিপ্লবী ও জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য অভিজাতদের ক্ষমতা দখল করার জন্য বিপ্লবীদের উপর ঘোমাংস হালাল করা শুরু হয়েছিল।
ঘোড়া খাওয়া বেশ সাধারণ এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় এর ঐতিহাসিক চাহিদা রয়েছে। উজবেকিস্তান এবং কাজাখস্তানের মতো দেশগুলিতে যাযাবর গোষ্ঠীগুলি মধ্য এশিয়ায় এটি দীর্ঘকাল ধরে সেবন করে আসছে, যেখানে ঘাসযুক্ত স্টেপস বা তৃণভূমি ঘোড়াদের মাংসের স্বাদ উন্নতি করতে দেয়; কাজাকস্থানের একটি ঘোড়া সসেজ, "কাজি", বিশেষভাবে জনপ্রিয়।বিভিন্ন আকারের মাংস সবসময় কাজাখ রন্ধনপ্রণালীর প্রাথমিক উপাদান ছিল এবং ঐতিহ্যবাহী কাজাখ রান্না মশলাসমেত সেদ্ধর উপর ভিত্তি করে। ঘোড়া এবং মাটন মাংসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রূপ এবং প্রায়শই সেদ্ধ করা ঘোড়ার মাংস বড় কাটা টুকরোগুলিতে পরিবেশন করা হয়।
ইউরোপের পৌত্তলিক গোষ্ঠীগুলি এটিতে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু পোপ গ্রেগরি III ৭৩২ সালে এটি খাওয়ার বিরুদ্ধে একটি আদেশ জারি করেছিলেন (স্পষ্টত পৌত্তলিকদের এটি খাওয়া বন্ধ করতে, এখন যেমন ভারতের কিছু রাজ্য আইন করেছে গরু জবাই বন্ধ করতে)। ইহুদিদের জন্য এটি কখনই মেনুতে ছিল না - খুর মানে ঘোড়া, আর সেট্স কোশার নয় - এবং যখন মুসলমানরা এটি খেতে পারে, তাদের মাঝে মাঝে ও এটি করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ঘোড়ার ডিম সরি মাংস খাওয়া নিয়ে ইউরোপ জুড়ে বেশ বিতর্ক চলছে, সাথে খাদ্য নৈতিকতা ও সংস্কৃতির যাবতীয় বুলির যুদ্ধও চলছে। এ যুদ্ধে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। যদিও এই সমস্যা টা অনেক আগেই হয়েছিল, কিন্তু উত্তরটা হতে হয়ে গেলো। আমার চিন্তায় গাড়ীঘোড়া নেই, রিকশা ই ভরসা।
যুক্তরাষ্ট্রে ঘোড়ার মাংস নিষিদ্ধ কেন!
কিন্তু আমরা যে কারণে আশা করি , তার জন্য নয় যুক্তরাষ্ট্রে ঘোড়ার মাংসের নিষেধাজ্ঞাটি একটি মোটামুটি সাম্প্রতিক অধ্যাদেশে এসেছে এবং এটি ঐ কারণে নয় যা আমরা ভাবি : 2016 আইন খাদ্য নিরাপত্তা এবং পরিদর্শন পরিষেবা বিভাগ কে ঘোড়াগুলি পরিদর্শন করতে বাধা দেয়: তাই কোনও পরিদর্শন নেই, ঘোড়ার মাংস ও নেই৷
দেখতে গরুর মাংসের মত, কিন্তু গাঢ়, মোটা আঁশ এবং হলুদ চর্বি। কিন্তু ঘোড়ার মাংস সবসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের ছায়ায় লুকিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের ঘোড়া!
ঘোড়ার মাংসের পুষ্টি
খাদ্যমান হিসেবে ঘোড়ার মাংস আর দশটা গৃহপালিত তৃণভোজী প্রাণীর মতোই খুব মজাদার, মিষ্ট স্বাদের এবং আরো বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। ফ্যাট বা কোলেস্টেরল, বীফ এর চেয়ে কম , আমিষ ও ক্যালরি বীফ এর কাছাকাছি কিন্তু আয়রন অনেক বেশি এতে আর আছে গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা ৩ ফ্যাট এসিড, যা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী।পোষ্য, খাদ্য বনাম ধর্মীয় সংস্কৃতি
আসলে, একজনের পোষা প্রাণী অন্যের প্রিয় খাদ্য হলে যাবতীয় সমস্যা হয়। সম্প্রতি বাংলা নাটকের সুঅভিনেতা পরাণ এর প্রাণপ্রিয় পোষা কুকুরটিকে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর চীনারা নাকি ধরে খেয়ে ফেলেছিলো, তারপর এই নিয়ে বিস্তর হাঙ্গামা হয় ।ইংরেজদের কাছে ঘোড়া ও কুকুর প্রিয় পোষ্য হলেও ফরাসীদের কাছে ঘোড়ার মাংস ও কোরীয়ানদের কাছে কুকুরের মাংস জনপ্রিয়। একই কারনে হিন্দুদের কাছে গরু পবিত্র প্রানী , আর মুসলিমদের কাছে মজাদার। ইহুদিদের কাছে উট ও ঘোড়ার মাংস হারাম হলেও মুসলিমদের কাছে হালাল। আবার ইহুদি, মুসলিমদের নিকট পর্ক হারাম হলেও খৃষ্টান ,বৌদ্ধ ও হিন্দুদের নিকট রসালো।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে প্রায় কোন মাংসই খৃষ্টানদের জন্য নিষিদ্ধ নয় । কেবল পোষ্য সংস্কৃতির জন্য ঘোড়ার বা কুকুরের মাংস খাওয়া নিয়ে হৈচৈ করে তারা ।
বীর ফরাসী সেনাপতি নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ওয়াটার ল্যু'র যুদ্ধে ক্ষুধার্ত সৈন্যদের ঘোড়ার মাংস খেতে উৎসাহ দেন। সেটাই কালচার হয়েছে ফ্রান্স, রাশিয়াতে।
মোহাম্মদ সাঃ খাইবার এর যুদ্ধে ঘোড়ার মাংস খেতে ক্ষুধার্ত সাহাবীদের উৎসাহ দেন । যাইহোক, কুরআনে এমন কোন আয়াত নেই যা প্রধানত ঘোড়ার মাংসের উল্লেখ করে। কিন্তু পোষ্য কালচার এর জন্য মাংস খাদক আরবে ঘোড়ার মাংস জনপ্রিয় নয়।
তবে হর্সমিট ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, জাপানে খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী নয়।
ইটালিয়ান শেফরা অনেক চেষ্টা তদ্বির চালিয়েছে, মার্কিন মুলুকে পিৎজার মতো করে ঘোড়ার মাংসের আইটেম চালাতে , তবে সরাসরি না বলে দিয়েছেন মার্কিনীরা । এটা সহজলভ্য না হওয়ার জন্য দায়ী মূলত ইংরেজ সংস্কৃতি। ইংরেজ আমেরিকানদের কাছে পর্ক ই জনপ্রিয়তায় সেরা।
একটা বিপদ আছে বটে, সাপের বিষ থেকে শুরু করে অনেক ঔষধ ও ভ্যাকসিনের পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয় ঘোড়ার উপর। লোভী ব্যবসায়ীরা ওসব ঘোড়ার মাংস মানুষকে খাইয়ে দেয় কিনা সে আতংক অমুলক নয় । চীনে সাম্প্রতিক করোনা মহামারীর জন্য সাপ খাওয়া নাকি দায়ী। করোনা আক্রান্ত বাদুড় খেয়েছে সাপে, সে সাপকে খেয়েছে মানুষ, অতঃপর ভাইরাসের ডিএনএ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।
উপসংহার : শেষে ঘোড়ার ডিম এর প্রসঙ্গে আসি। রেসিং ঘোড়াকে শক্তির জন্য প্রচুর কাঁচা ডিম খাওয়ানো হয়, রেসে জিততে হলে ঘোড়ার জন্য ডিম লাগবেই । ঘোড়ার ডিম অলীক বস্তু হলেও ওটার ব্যবহার নেহাৎ কম নয়। তাই আমিষের বৈচিত্র্য আনতে নিরাপদ "ঘো- মাংস " উৎপাদনে লাস ভেগাসে ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক সম্মেলনে "আন্তর্জাতিক হর্সমিট এক্সপোর্টারস এসোষিয়েশন" অনেক আর্জি জানিয়েছেন। ইংরেজরা ঘোড়ার মাংস না খেলে তাদের ব্যবসা গোটাতে হবে হয়তো। যুক্তরাষ্ট্রে কোন ব্যবসা না চলার অর্থ সেটির গ্রহণযোগ্যতা কম।
ধন্যবাদ।
মন্তব্যসমূহ