গেমিং ডিসঅর্ডার
চিত্র,ইন্টারনেট গেমিং ডিসঅর্ডার হল একটি রোগ যা অনলাইন গেমিংয়ের উপর মানসিক নির্ভরতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
গেমিং ডিসঅর্ডার হল জীবন থেকে পালানোর জন্য ইন্টারনেট গেমস এবং ভিডিও গেমগুলির আবেশী এবং বাধ্যতামূলক অত্যধিক ব্যবহার, যার ফলে দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং আগ্রহের উপর গেমিংকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং নেতিবাচক পরিণতিগুলি ঘটতে থাকা সত্ত্বেও গেমিং চালিয়ে যাওয়া।
যখন সিডিসি গেমিং ডিসঅর্ডারকে একটি রোগ হিসাবে তালিকাভুক্ত করে, তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার আন্তর্জাতিক রোগতালিকায় একে ব্যবহারগত অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অসুখের উপসর্গগুলিও উল্লেখ করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেসICD 11 এর 11 তম রিভিশনে গেমিং ডিসঅর্ডারকে গেমিং আচরণের একটি প্যাটার্ন ("ডিজিটাল-গেমিং" বা "ভিডিও-গেমিং") হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যা গেমিংয়ের উপর প্রতিবন্ধী নিয়ন্ত্রণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, গেমিংকে দেওয়া অগ্রাধিকার বৃদ্ধি করে। অন্যান্য ক্রিয়াকলাপের তুলনায় গেমিং যে পরিমাণে লাগে তা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ব্যাহত করছে ।
চিত্র, খেলা কমাতে অক্ষমতা, গেমিং ছেড়ে দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা, দুটো ই খারাপ লক্ষণ।
তাহলে সত্যিই একটি 'নতুন অসুখ’ এসে গিয়েছে পৃথিবীতে, যার নাম ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার আন্তর্জাতিক রোগতালিকায় একে ব্যবহারগত অসুখ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গেমিং ডিসঅর্ডার অসুখের উপসর্গগুলি।
- মাথাধরা,
- বমি ভাব,
- অনিদ্রা,
- মেজাজ খারাপ,
- ধৈর্য ও মনোযোগের অভাব,
- দৃষ্টিশক্তির সমস্যা ইত্যাদি।
নেশারই সমতুল্য বলে বর্ণনা করা হয়েছে এই অসুস্থতাকে। এর থেকে ক্রমে মেরুদণ্ডের অসুখও হওয়া স্বাভাবিক, আশঙ্কা আছে ।
মানসিক যে অসুখগুলি নির্ণীত হয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় যে, এই ‘অসুখ’ কেবল শরীর-মনেই আটকে থাকার নয়, জীবনেও ছড়িয়ে পড়ার বিপুল সম্ভাবনা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে ‘অসুস্থ’ শিশু বা কিশোরের অনেক সঙ্কট হওয়ার কথা।
স্বাভাবিক ভাবেই তার থেকে কেরিয়ার ও জীবনপথও পাল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা। অর্থাৎ, এখন আমরা যাকে কেবল সাময়িক বিনোদন হিসেবে দেখছি, হয়তো তা-ই হয়ে দাঁড়াতে পারে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ-নির্ধারক সঙ্কট।
দুর্ভাগ্য যে, যেহেতু এখনও হয়তো মাত্র এক গেমিং-প্রজন্মই বয়ঃপ্রাপ্ত হয়েছে, সকলের কাছে এই ভয়ানক উদ্বেগজনক বিষয়টি তেমন ভাবে বোধগম্য হচ্ছে না। শিশুদের হাতে এখনও অভিভাবকরা অকাতরে তুলে দিচ্ছেন গেমিং-এর সম্ভার, নিশ্চিন্ত থাকছেন তাদের সময় কাটানোর বিনোদন নিয়ে। বিশ্বময় ডাক্তার এবং প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তিত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট প্রমাণ করছে, তাঁদের উদ্বেগ মোটেই অকারণ নয়।
এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে দশ বছরের পরীক্ষণ-সাপেক্ষে— কথাটি অতীব উল্লেখযোগ্য। বুঝতে অসুবিধা নেই, কোভিড-সঙ্কট এখানেও এক বিরাট কুপ্রভাব রেখে গিয়েছে। কোভিডের সময় অনলাইন শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন বিনোদন ছাড়াও শিশুজীবন বা কিশোরজীবনের গত্যন্তর থাকেনি। অভিভাবকদের সেই বিপদ আটকানোর পথটিও দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। বিগত ২০১৯ সালে হু-নির্দেশিত সেই ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ তাই এখন রীতিমতো মহারোগের আকার ধারণ করেছে। বাস্তবিক, অবস্থাগতিকে এই ‘ডিসঅর্ডার’টির বিরাট বিস্তৃতির কারণেই এখন আবার নতুন করে হু-র সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি যে আর হেলাফেলার নয়, সমস্ত দুনিয়াকেই তা স্বীকার করতে হবে।
গেমিং ডিসঅর্ডার’ এর বিস্তার
অবশ্যই এক এক দেশে এই অসুখের এক এক রকম বিস্তার। ব্রিটেনে নাকি ভিডিয়ো-গেমাররা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করে। অতিমারির সময়ে বহু পরিবার থেকে এই গেমিং-নেশার কথা ডাক্তারদের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।ন্যাশনাল সেন্টার ফর গেমিং ডিসঅর্ডার শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে, এখন তার চিকিৎসার চাহিদা তুঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতেও এই অসুখের বিস্তার খুব কম নয়। প্রসঙ্গত এই খেলা যেহেতু অফলাইনেও সম্ভব, ভারতের মতো দেশে যেখানে নেট সংযোগের সমস্যা বিস্তর, সেখানেও গেমিং অসুখের প্রাদুর্ভাবের কমতি নেই। তামিলনাড়ুতে গেমিং-এর কারণে ছোটদের ডিমেনশিয়ার খবর ইতিমধ্যেই প্রচারমাধ্যমে উঠে এসেছে।
ঢাকার সমাজের উচ্চ-মধ্যম এবং উচ্চ আয়ের স্তরের অভিভাবকদের জন্য তাদের সন্তানদের ভিডিও গেমিং কনসোল এবং অন্যান্য গেমিং ডিভাইস কেনার জন্য এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। তাদের কারণগুলি সহজ: বাইরে গিয়ে খেলাধুলা এবং অপরিচিতদের সাথে যোগাযোগ করার চেয়ে শিশুটি তাদের অবসর সময় বাড়ির ভিতরে কাটানো ভাল। মাদকাসক্তি ও অপরাধসহ সব ধরনের সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে অভিভাবকরা তাদের উদ্বুদ্ধ করতে আগ্রহী। 2016 সাল থেকে এই তালিকায় জঙ্গিবাদের ভয়ও যোগ হয়েছে। কিন্তু তাদের সন্তানদের একটি গেমিং ডিভাইস বা কনসোল কিনে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারেন।
গত 18 জুন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আনুষ্ঠানিকভাবে গেমিং ডিসঅর্ডারকে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে, নতুন শর্তটি ডাব্লুএইচও-এর ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অফ ডিজিজেসের (ICD-11) আপডেটের 2017 খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ডব্লিউএইচওর স্বীকৃতি এখন চিকিৎসা পেশাদারদের এই ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নির্ণয় করতে এবং তাদের চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেবে।
চিত্র, যারা দিনে ৪-৭ ঘন্টা নেটে বা অফনেটে থাকে।
গেমিং ডিসঅর্ডারে বয়স্কদের জটিলতা :
- গভীর শিরা থ্রম্বোসিস,
- হার্ট ফেইলিওর,
- তীব্র ক্লান্তি এবং
- ডিহাইড্রেশন এবং
- হাঁপানি
গেমিং ডিসঅর্ডারে অসামাজিক হওয়া :
চিত্র,অসভ্যতা যখন অসামাজিকতা কে ছাড়িয়ে যায়
তরুণ গেমারদের ঝুঁকিগুলি;
- ওজন হ্রাস,
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী,
- ভিটামিন ডি-এর অভাব,
- ক্লাস্টার মাথাব্যথা,
- পায়ে ব্যথা এবং
- এমনকি যৌনতা ও স্থূলতার মতো শারীরিক অসুস্থতাও শেষ করে।
মন্তব্যসমূহ