পশ্চিম তীর বা গাজা থেকে ইসরায়েলি নাগরিকদের বিয়ে করার ফিলিস্তিনিদের স্বাভাবিকীকরণকে অস্বীকার করে ইসরায়েল আইনপ্রণেতারা আইন অনুমোদন করেছেন। |
আন্তর্জাতিক আইনের বিধি অনুসারে একটি রাষ্ট্রের বৈধতা বিষয়ে চারটি মানদণ্ড আছে যা মনটেভিডিও স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে পরিচিত । উপাদানগুলো হল:
- নির্দিষ্ট অঞ্চল,
- একটি স্থায়ী জনসংখ্যা ,
- অঞ্চল ও জনসংখ্যা পরিচালনা করতে সক্ষম সরকার এবং
- বৈদেশিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা।
বেশ কয়েকটি জমি নিয়ে বিরোধ থাকা সত্ত্বেও ইস্রায়েলের একটি ভূখণ্ডের উপর সার্বভৌমত্ব রয়েছে। ইস্রায়েলের জনসংখ্যা ৭০ লক্ষের ও বেশি। একটি সরকার রয়েছে যা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে সরকার গঠিত হয়। ইস্রায়েলের বৈদেশিক সম্পর্ক চালুর সক্ষমতা রয়েছে; ১৬২ টি রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক তাদের এবং তারা জাতিসংঘের সদস্য।
যদিও ইসরাইল 11 মে 1949 সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য হয়েছে, 2020 সাল পর্যন্ত, ৩১ টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় নি। ইসরায়েলের বৈধতার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায় বিশেষত ফিলিস্তিনি, ইরান ও আরব লীগের কিছু দেশ এবং ইসরায়েলের স্বীকৃতি অস্বীকার বা প্রত্যাহার করার জন্য দেশগুলি এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
কেন ইসরায়েল অবৈধ রাষ্ট্র!
ফিলিস্তিনি এলাকায় অনুপ্রবেশ ও ছিনতাই, লুটপাট করা ইসরায়েল সেনাদের বিচার হয়না! |
তিনটি থিমের উপর ভিত্তি করে ইসরায়েলকে অবৈধ রাষ্ট্র বলার প্রচারণা চলছে,
- "ইসরায়েলকে একটি অপরাধী রাষ্ট্র হিসাবে চিত্রিত করা",
- "ইহুদি বিরোধী বা এন্টিসেমিটিজম (তাদের মতে) প্রচারণা" এবং
- " বর্নবিদ্বেষী রাষ্ট্র বলে প্রচারণা" ।
কথা গুলো সত্যি বলে প্রমাণিত হয় যখন ইসরাইল হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় অনুপ্রবেশ করে, পশ্চিম তীরের প্যালেস্টাইনি ঘরবাড়ি ভেঙে ইহুদি বসতি নির্মাণ করে ও তাতে জাতিসংঘের কোন সম্মতি থাকেনা। কারন জাতিসংঘে ইসরাইলের এলাকা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে যা সে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে চলেছে।
আরবদের প্রতি ইসরাইলিদের আচরণ :
ইসরাইলের অভ্যন্তরে আরবদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে দেখা হয় ও ইহুদি কর্তৃক আরবদের প্রতি ফৌজদারি অপরাধের বিচার হয়না। ইহুদি সেনা ফিলিস্তিনি রমণী ধর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলেও তার বিচার হয়না। সেকারনে রাষ্ট্রটি বর্নবিদ্বেষী রাষ্ট্র। এধরনের রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জাতিসংঘের ম্যান্ডেট পাওয়ার অযোগ্য।
বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা অর্জন প্রক্রিয়া কী!
বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু রাষ্ট্র জনগণের বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে। ভারত, কানাডার মতো কিছু দেশ ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব কে প্রত্যাহার করে তৈরি করা হয়েছিল। পূর্ব তিমুরের মতো দেশ জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত বা পরাশক্তিদের সিদ্ধান্তের ফলে তৈরি হয়। কুয়েত, জর্ডানের মতো কয়েকটি দেশ কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি ছাড়াই কিছু অঞ্চল নিয়ে তৈরি হয়েছিল। কুয়েত সৌদি, অটোম্যান কিংবা ইরাক কারো অধীনে ছিলনা। কুয়েত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের পরামর্শে চলত কিন্তু 1938 সালে সেখানে প্রথম তেলক্ষেত্র আবিষ্কার হওয়ার পর ইরাক কুয়েতের মালিকানা দাবি করে। 1923 সালের উপসাগরীয় কনফারেন্স এ সৌদিরা কুয়েতের মানচিত্রের বেশিরভাগ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় । তুরস্ক ও সিরিয়ার মতো দেশ কুর্দিদের বিরোধিতা সত্ত্বেও দখলকৃত অঞ্চল থেকে তৈরি করা হয়েছিল।
এবার আপনিই বলুন ইসরাইল বৈধ নাকি ইরানের খামেনির তত্ব মতে অবৈধ রাষ্ট্র?
বৃহত্তর ইসরায়েল কী জিনিস!
বৃহত্তর ইসরায়েল! |
বৃহত্তর ইসরায়েল বিষয়ে জাতিসংঘ:
1. 2017 সালে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'ইসরায়েল বর্তমানে ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের গুরুতর বঞ্চনা ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে রেখে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিশাল অংশ সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে'।
বৃহত্তর ইসরাইল কেন গ্রহণযোগ্য নয়?
বাস্তবে জাতিসংঘের 1950 সালের মানচিত্র অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিম তীর পর্যন্ত যে ইসরাইল ছিল সেটা 14 মাইল প্রশস্ত একটা ক্রসিং (ছবিতে ক্রস চিহ্নিত )
যেকোন সময় আরবরা সেটা বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে, তাই তারা সেটা বাড়িয়ে সিরিয়ার গোলান মালভূমি পর্যন্ত নিয়ে গেছে। সেজন্য ইসরাইল অবৈধ রাষ্ট্রের চরিত্রে নিজেকে দেখতে চায়। আপনি আমি যায় ভাবিনা কেন, আরবদের সাথে তাদের খাতির করার উদ্দেশ্য লোক দেখানো, সেটা মোটেও বৈধ রাষ্ট্র হওয়ার অভিপ্রায় নয়।
ধন্যবাদ।
মন্তব্যসমূহ