বেওয়ারিশ কুকুর
ঘেউ ঘেউ (প্লিজ আমাদের নিধন করবেন না)। বর্তমান পৃথিবীতে ২০০ এরও অধিক প্রজাতি আছে আমাদের, যা একটি মাত্র নেকড়ে গণ থেকে এসেছি। আমাদের এত প্রজাতি কেবল মানুষের ইচ্ছাতেই হয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায়। একেক প্রজাতির সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে ক্রস ব্রিডিং ও এপিজেনেটিক্সের মাধ্যমে।
আপনাদের দেশে আমাদের দেশি কুকুর প্রজাতি বলা হয় যদিও আমাদের বিদেশী প্রজাতিগুলোর এলশেসিয়ান, টেরিয়ার, ল্যাব্রাডোর, পিটবুল, এমন খুব সুন্দর সুন্দর নাম আছে।
একসময় নয়টি মানব প্রজাতি ছিল, এখন একটি কেবল আপনারাই। আমরা যতই বৈচিত্রময় হই না কেন বর্তমান মানব প্রজাতির মত একটাই প্রজাতি আমাদের নাম Canis lupus familiaris যেখানে গ্রে উল্ফ এর নাম Canis lupus।
আমরা এই বেওয়ারিশ প্রজাতিটি ময়লা খেয়ে ও নিজ উদ্যোগে চোর ডাকাত, শেয়াল, বহিরাগত সাপ, বেজি ইত্যাদি তাড়িয়ে মানুষের উপকার করি।
কিন্তু এসব করতে গিয়ে বন্য প্রাণীদের সাথে মারামারির ফলে অরক্ষিত কিছু প্রাণী থেকে আমাদের রেবিস রোগ হয় ও তা থেকে মানুষের জলাতংক এর মত মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে। জলাতংক ভাইরাসের জীবাণু করোনা ভাইরাস থেকেও মারাত্নক সংক্রামক।
এটি এখনো কেবল প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। কিন্তু কোন কারনে জিন মিউটেশন ঘটিয়ে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ালে তবে আরো একটি মহা মহামারি দেখা দেবে।
পোষা প্রাণীদের কেন ভ্যাক্সিন প্রয়োজন হয়! জানতে লিংকটি দেখার অনুরোধ।
আমাদের খাবার দাবার:
এককালের নগর পরিস্কারকারক আমাদের বেওয়ারিশ কুকুরের এই প্রজাতিটি এখন ভীষণ অবহেলিত।
আমাদের দেশে একসময় প্রচুর খাদ্য উচ্ছিষ্ট থাকত। কিন্তু বাণিজ্যিক কারনে কাউন্সিলররা উক্ত উচ্ছিষ্ট ও বর্জ্য বাসা থেকেই সংগ্রহ করে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। ডাস্টবিনগুলোতে আমাদের বা কাকেদের জন্য তেমন কিছুই থাকে না।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের কোনো সভ্য দেশেই রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে আমাদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় না। এটা শিশু, নারী, বয়স্কদের জন্য বেশি সমস্যা তৈরি করে। বেওয়ারিশ কুকুর যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানোটা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। আমাদের জন্য অভয়্যারণ্য প্রয়োজন
কুকুর কামড়ালে রেবিস ভ্যাক্সিনের সর্বোচ্চ মেয়াদ কতদিন? Next »
«Previous উল্ফ ডগ নাকি হাই ব্রিড ডগ, কেমন কুকুর চান?
আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি:
এত কুকুরকে জলাতংকরোধী ও বন্ধ্যাকরন ইনজেকশন দেয়ার কাজে করপোরেশনকে কেবল চাপ না দিয়ে সহযোগিতা দেয়া উচিত প্রাণী সংগঠন গুলোর।
এখন যে পরিস্থিতি, বেওয়ারিশ কুকুর সরিয়ে অভয়্যারণ্যে দেয়া না হলে এমনিতেই তারা না খেয়ে অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাবে। নানারকম রোগের শিকার হবে। ক্ষুধার জ্বালায় সারারাত চিৎকার চেচামেচি করা আর গলির খাবার নিয়ে লড়াই করা একমাত্র কাজ। এদেশে "প্রাণী অধিকার কার্যক্রম" আমরা দেখি না।
খুব ভোরে কোন কাজ বা ডিউটিতে যাওয়ার সময় কোন দিন এমন ক্ষুধার্ত কুকুরের তাড়া খেয়েছেন কিনা জানিনা।
অনেকেই বিদেশি কুকুরের ভক্ত কিন্তু খাওয়ার সময় দেশী খাবার খোঁজেন!
যারা দিন নয়টা পর্যন্ত ঘুমায় , দশটার সময় হেলেদুলে সিনেমার শুটিং বা অফিস যায়, তারা এসব সমস্যা উপলব্ধি করতে পারবেন না। তারা বিদেশী প্রজাতির কুকুর পুষবেন কিন্তু দেশি বেওয়ারিশ প্রজাতির কুকুরের জন্য দরদ দেখবেন না। এদেশের অধিকাংশ সেলেব্রিটি বিদেশি কুকুর পোষেন। দেশি কুকুরের প্রতি মৌখিক টান দেখানো ছাড়া আর কোন দায়িত্ববোধ নেই।
বেওয়ারিশ কুকুর সংক্রান্ত আইন কানুন
সিটি করপোরেশনের মৌলিক কার্যাবলীতে আছে, (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ , সিটি করপোরেশন যদি মনে করে, তাহলে কোনও বেওয়ারিশ কুকুর অথবা কোনও বেওয়ারিশ প্রাণিকে অপসারণ করতে পারে। এমনকি নিধনও করতে পারে।'
আবার ২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইনে ‘এই আইনে উল্লিখিত কোনও কারণ ব্যতীত, মালিকবিহীন কোনও প্রাণি নিধন বা অপসারণ যাবে না। কোনও ব্যক্তিমালিকবিহীন কোনও প্রাণি হত্যা করলে তা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
পরিবেশবিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ কর্মীদের বক্তব্য
আমাদের নিয়ে তারা বলছেন, কুকুর নিধন কিংবা অপসারণে কোনো সমাধান মিলবে না। সঠিক ও কার্যকর সমাধানে যৌক্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে। কুকুরকে বন্ধ্যাত্ব করতে পারলে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান মিলবে বলে মনে করছেন ।
এটি পরীক্ষিত যে কুকুরকে বন্ধ্যাকরণের টিকা দিলে কুকুরগুলো অস্থির আচরণ করে না। চঞ্চলতা কমে যায় । ধীরে ধীরে কুকুরের সংখ্যাও তাতে কমে আসে।
কিন্তু কুকুর বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল ও ব্যবস্থা সিটি করপোরেশনের নেই। উপরন্তু, কুকুর নিয়ে বিস্তর অভিযোগ যা এখন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে।
নবাগত নায়ক নায়িকাদেরও আছে জার্মান শেফার্ড, এলসেশিয়ান।
খাদ্য ও চিকিৎসা না পেলে কুকুর নিজে থেকেই নিধন হয়ে যাবে। একটি-দুটি বিস্কুট দিয়ে কুকুরের প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে সচেতন নগরবাসী এসব কুকুরের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নিতে পারেন। সবকিছু সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়।
আমাদের উপকারিতা:
কুকুরেরও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। পরিবেশেরই একটা অংশ আমরা। বাড়ি পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে গোয়েন্দা ভূমিকা পালন করা, শিকারের সময় সাথে থাকা, রাতে হিংস্র প্রাণীর বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করা, শিশুর বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন, ক্ষতিকর প্রাণী নিধন করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকি।
এছাড়া পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষার কথা না বললেই নয়। কুকুর অপসারণ করলে জীববৈচিত্র্য ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে। তখন অন্য কিছুর উপদ্রব হয়ত বাড়বে যেমন শেয়াল, সাপ বা বানর।
আমার মালিকের কুকুর পোষা!
তিনি কুকুর ভালোবাসেন , সাধারণ দেশি কুকুর পেলে পুষে বড় করেছিলেন, আদর করে আমার নাম রেখেছিলেন 'টম'। কিন্তু ভাদ্র মাসে আমাকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন নি । বেওয়ারিশ কুকুরের দলে মিশে গেলে সে কুকুর আর ঘরে রাখা নিরাপদ নয় বলে মনে করলেন। তখন থেকে বাগানেই থাকতাম। তিনি বিয়ের পর উনার স্ত্রী নামাজী বিধায় আমি আর উনার বিছানার ধারে গিয়ে খেলতে পারতাম না, টিভি দেখতে পারতাম না।
তাই আমি বেওয়ারিশ। তার নিজ হাতে মাখানো ভাত মাংস যা প্রিয় ছিল আমার তার পরিবর্তে এখন মুরগির আতুড়ি খাওয়ার আশায় সারাদিন বাজারের দোকানের সামনে বসে থাকি। বাজারের কুকুরের সাথে খাওয়া নিয়ে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয়। দোকানদারেরা লাঠি দিয়ে মারে, গরম জল ছিটায় গায়ে।
উপসংহার
বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ করা উচিত তবে বেওয়ারিশ কুকুর কে বন্ধ্যাকরণ ইনজেকশন দেয়া হোক কিংবা কোন নিরাপদ অভয়ারণ্যে রাখুন। সেখানে খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা উচিত। অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত কুকুর সকল কে পীড়িত করে। বেওয়ারিশ কুকুর কখনো কাম্য নয়।
মন্তব্যসমূহ