মাতৃমৃত্যু কি
2020 সালে প্রায় প্রতি দুই মিনিটে একটি মাতৃমৃত্যু ঘটেছে।
মাতৃমৃত্যু বলতে গর্ভাবস্থা বা প্রসবকালীন জটিলতার কারণে মায়ের মৃত্যুকে বোঝায়। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা প্রতি ১,০০০০০ জীবিত শিশু জন্মদান করতে ২২৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে যা আগের দুই দশকে ৩৪২ ছিল।
2020 সালে প্রতিদিন, প্রায় ৮০০ জন মহিলা গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সাথে সম্পর্কিত প্রতিরোধযোগ্য কারণে মারা যান। 2020 সালে সমস্ত মাতৃমৃত্যুর প্রায় ৯৫% নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে ঘটেছে।
প্রসবের আগে, সময় এবং পরে দক্ষ স্বাস্থ্য পেশাদারদের যত্ন নারী এবং নবজাতকের জীবন বাঁচাতে পারে।
পশুপাখি জন্মানোর সময় মাতৃপ্রাণী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না কিন্তু মানব সন্তান জন্মানোর সময় প্রসূতির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কেন?
হোমো ইরেক্টাসদের সময় থেকে অর্থাৎ দুপায়ে হাঁটা চলা শুরু হতে নারীর পেলভিস সরু হয়ে যায়।
শেষেরটি সরু বার্থ ক্যানেলের গ্রাফিক্স |
যেসব মায়েরা তুলনামূলক অপরিপক্ব সন্তান জন্ম দিতেন, তারা তখন বেশিদিন বেঁচে থাকা শুরু করে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী মানব শিশু তখন থেকে অপরিপক্ব অবস্থায়ই জন্মাতে শুরু করে। ফলে কাজ বেড়ে যায় মায়েদের অপরিপক্ক শিশুটিকে বাঁচাতে ।
এজন্যই দেখবেন একটি ঘোড়ার বাচ্চা যেখানে জন্মানোর দু’সপ্তাহ পর স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখে যায়, সেখানে বছরের পর বছর ধরে যত্ন ও শিক্ষার দরকার হয় একটি মানব শিশুর।
মাতৃ মৃত্যুর কারণ
নিম্নোক্ত গর্ভাবস্থার ক্ষেত্রে মায়েদের মৃত্যু অবধারিত ছিলো;
- বাধাপ্রাপ্ত প্রসব,
- যমজ গর্ভাবস্থা,
- মায়ের উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্লিডিং ,
- ব্রীচ বা আড়াআড়ি গর্ভস্থ শিশু প্রসব এবং
- প্ল্যাসেন্টা বা নাভির সমস্যা,
সে কারণেই বার্থ ক্যানেল কে বাইপাশ করে সিজার ওপারেশনে শিশু জন্ম দানের প্রথা চালু হয়।
পেলভিমেট্রি বা শ্রোনী পরিমাপ
ক্লিনিকাল প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে সমস্ত গর্ভবতী মহিলাদের পেলভিমেট্রির ফলাফল নির্বিশেষে প্রসবের চেষ্টার অনুমতি দেওয়া উচিত।
পেলভিমেট্রি হল মহিলাদের পেলভিসের পরিমাপ। এটি তাত্ত্বিকভাবে cephalo-pelvic disproportion (ভ্রূণের মাথা ও শ্রোনীখাল) সনাক্ত করতে পারে, যখন শ্রোণীর ক্ষমতা ভ্রূণকে জন্মের খালের মধ্য দিয়ে প্রসব করার অনুমতি দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত হয়।
গাইনোকয়েড পেলভিস হল মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ পেলভিস আকৃতি এবং এটি যোনিপথে জন্মের জন্য অনুকূল। অন্যান্য পেলভিস প্রকার, যেমন অ্যান্ড্রয়েড এবং প্লাটিপেলয়েড আকারগুলি আরও কঠিন যোনিপথে জন্ম দিতে পারে বা সিজার অপারেশন বা সি-সেকশনের সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু শ্রোণীর আকৃতি একাই নির্ধারণ করে না যে আপনি কীভাবে জন্ম দেবেন।
যাইহোক, ক্লিনিকাল প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে সমস্ত গর্ভবতী মহিলাদের পেলভিমেট্রির ফলাফল নির্বিশেষে প্রসবের পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া উচিত। অপব্যাবহারে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ কমেছে।
সিজারিয়ান ডেলিভারি কি?
একটি সিজারিয়ান ডেলিভারি, যাকে সিজারিয়ান বিভাগ বা সি-সেকশনও বলা হয়, একটি শিশুর জন্ম দেওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার। গর্ভবতী মেয়েদের পেট দিয়ে বাচ্চা বের করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায় তিন শিশুর মধ্যে একটি এইভাবে জন্মগ্রহণ করে। কিছু সিজারিয়ান প্রসবের ঘটনা পরিকল্পনা করা ও কিছু প্রয়োজনে।
মায়ের পেলভিসের আকারের উপর ভিত্তি করে সিজারিয়ান ডেলিভারি করা যেতে পারে।
সিজারিয়ান সেকশন, যা সি-সেকশন বা সিজারিয়ান ডেলিভারি নামেও পরিচিত, একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি যার মাধ্যমে মায়ের পেটে একটি ছেদনের মাধ্যমে এক বা একাধিক বাচ্চা প্রসব করা হয়, এটি এখন প্রায়শই সঞ্চালিত হয় কারণ যোনিপথে প্রসবের ফলে যেসব শিশু বা মা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তাদের ক্ষেত্রে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চালিত প্রথম সফল সিজারিয়ান সেকশনটি ভার্জিনিয়ার মেসন কাউন্টিতে (বর্তমানে মেসন কাউন্টি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া) ১৭৯৪ সালে সংঘটিত হয়েছিল। পদ্ধতিটি ডাঃ জেসি বেনেট তার স্ত্রী এলিজাবেথের উপর সঞ্চালিত করেছিলেন।এই অপারেশন আবির্ভাবের পড়ে মাতৃমৃত্যুর হার কমে যায়। আমরা দেখতে পাই যে ১৯ শতকে প্রতি ১০০০০০ জন্মের জন্য প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ মা মারা যেতো। 2000 সালে বাংলাদেশে এই হার ছিল ৪০০, এখন ২০১৭ তে ১৭৩, প্রতি ১০০০ জন্মের জন্য। তবে আর্থিক লাভের জন্য এই অপারেশনের অপব্যবহারও হতে দেখা যায়।
মেয়েদের সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য জানতে লিঙ্কটি দেখা যেতে পারে।
মন্তব্যসমূহ