রান্নার চুলা
“আমার জ্বালানী কাঠের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। আমি প্রতি দুই মাসে একবার জ্বালানী কাঠ কিনতাম, এখন প্রতি পাঁচ মাসে একবার জ্বালানী কাঠ কিনি।
এটি আমাদের অর্থ সাশ্রয় করতে সাহায্য করেছে।” - ঢাকার উপকণ্ঠের সাভার গ্রামের শেফালী ঘোষ এর বক্তব্য।
বিয়ের পর হতে এলপিজি বোতলের গ্যাসের উপর চলছি। কারন স্ত্রী বৈদ্যুতিক কুকার ওসবে অভ্যস্ত নয়।
বিদ্যুতের চুলায় ভীষণ ভয় তার। কিন্তু মাসে তিনটি বোতল কিনতে জান বেরিয়ে যায় আমার। বড় মেহমান এলে একদিনেই এক বোতল গ্যাস যথেষ্ট।
গরম জল ছাড়া স্ত্রী স্নান করতে নারাজ, ছোট ছেলের কলের জলে সর্দি চলে, তাই তার ও গরম জল লাগে।
তবে স্ত্রী কায়দা করে প্রেসার কুকারে চট জলদি রান্না শিখে নিয়েছে। পয়সা বাঁচাতে ভাত হতে ডাল সবই বোতলের গ্যাসে কম সময়ে কাজ সেরে নেয়।
অসময়ে বোতলের গ্যাস শেষ গেলে বাবুর দুধ ও আমার চা ইলেকট্রিক কেটলিতে কাজ সারেন স্ত্রী!
গ্যাসের চুলাতে ও ঝামেলা আছে, লাইনের গ্যাসের ও বোতলের গ্যাসের দু রকমের চুলা। যারা ভাড়াটিয়া তাদের সব দুঃখ কষ্ট নিয়ে ছুটতে হয়।
কখন কোন রান্নার ব্যবস্থা কে জানে। লাইনের গ্যাস ইচ্ছেমত খরচ করা যায় ফিক্সড রেট এ।
প্রেসার কুকারে রান্নার ভালো মন্দ কি⁉️👉
নতুন চুলা কেনার আগে
একটি নতুন চুলা কেনার আগে ভাবুন। একটি নতুন চুলা নির্বাচন করার সময় বিবেচনা করার জন্য অনেক কিছুই আছে।
যদিও বেশিরভাগই দ্রুত এবং ইনস্টল করা যায় কিন্তু যে ধরনের কুকার দরকার তা মূলত কারো রান্নাঘরের জ্বালানী সরবরাহের উপর নির্ধারিত হবে, তা গ্যাস, বৈদ্যুতিক, লাকড়ির নাকি গ্যাস ও বৈদ্যুতিক ওভেন একত্রিত করে।
একটি নতুন চুলার জন্য মোট ইনস্টল করা খরচ হয়। চুলা বা ওভেনের পরিসরের দাম নির্ভর করে আকার, প্রকার এবং এটি লাকড়ি গ্যাস বা বৈদ্যুতিক কিনা তার উপর।
রান্নাঘরের স্থানও বিবেচনা করতে হবে। একটি চুলা কি যথেষ্ট নাকি আরও মুখ আছে? সম্ভবত একটি দ্বিতীয় (বা তৃতীয়) চুলা থাকলে সুবিধা।
কুকারের দাম কতগুলি টাকা খাবে তার চেয়ে প্রয়োজন মাসে কত জ্বালানী ব্যয় হবে তা বিবেচনা করা। তাই বাজারে উপলব্ধ সব ধরণের কুকারের মধ্যে পার্থক্য জানা গুরুত্বপূর্ণ।
গ্যাস, বৈদ্যুতিক, ইন্ডাকশন, ইনফ্রা রেড রেডিয়েশন এবং সিরামিক সব গুলির মধ্যে বেছে নিতে হবে, তাই রান্নার প্রয়োজনের জন্য কোনটি সেরা তা নির্ধারণ করা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
সাশ্রয়ী চুলা
বোতল জাত গ্যাস কুকার
উপরন্তু, সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সংরক্ষণ না করা হয় গ্যাস লিকেজ এর জন্য।
গ্রাহক পর্যায়ে ১২ কেজি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম সকালে বিকালে বাড়ানো হয়। নতুন দাম ১৪০০ টাকা প্রায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্যাসের চুলা
বাড়ির রান্নার জন্য গ্যাস এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় পছন্দ। তাপ দৃশ্যমান, নিয়ন্ত্রণ করা সহজ, দ্রুত, প্রতিক্রিয়াশীল এবং সব ধরনের প্যানের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সহজে পরিষ্কার করার জন্য গ্যাস হবগুলি খুলে ফেলা যেতে পারে। কিন্তু দেশ এখন গ্যাস শূন্য প্রায়। তাই আরব জাহান হতে আমদানি করা বোতল জাত গ্যাস ই ভরসা।
বার্নারগুলি বৈদ্যুতিক সিরামিক গ্লাস হবের মতো দ্রুত গরম হয় না, তবে নির্ভুল তাপ এবং গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রাজধানী ঢাকাসহ প্রায় সব জেলায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন কূপ না পাওয়া পর্যন্ত কুপোকাত থাকতে হবে নগরবাসী কে।
গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক কুকার উভয়ই চালাতে অর্থ খরচ হয়, তবে তাদের খরচ কত তা ভিন্ন।
যদি একটি বৈদ্যুতিক কুকার ব্যবহার করেন তবে কম শক্তি ব্যবহার করবেন কিন্তু যেহেতু বিদ্যুতের খরচ প্রতি ইউনিট সরবরাহ কৃত লাইনের গ্যাসের কাছাকাছি , তাই আপনি একটি বৈদ্যুতিক কুকারের জন্য কিছুটা বেশি অর্থ প্রদান করতে পারেন।
কিন্তু বোতল জাত গ্যাস হলে তার খরচ বৈদ্যুতিক কুকারের চেয়ে বেশি।
যে ধরনের কুকার পাবেন তা মূলত রান্নাঘরে জ্বালানি সরবরাহের দ্বারা নির্ধারিত হবে, তা গ্যাস, বৈদ্যুতিক বা দ্বৈত জ্বালানী যাই হোক।
রান্নার জন্য কোন চুলা সাশ্রয়ী এটি নির্ভর করে আপনি কোন এলাকায় বাস করেন, পরিবারে কি পরিমান সদস্য আছে ও জ্বালানী মন্ত্রী (স্ত্রী) কোন চুলায় অভ্যস্ত তার উপর।
নইলে কিন্তু রান্নায় স্বাদ হবে না। কুকারগুলির জন্য একজন যোগ্যতাসম্পন্ন লোক দ্বারা ইনস্টলেশন প্রয়োজন, কারণ বৈদ্যুতিক গুলিকে ভাল সকেটে তারযুক্ত করা প্রয়োজন (একটি প্রচলিত বৈদ্যুতিক সকেট মাত্র 13amps) এবং গ্যাস চুলা গুলি একটি গ্যাস সেফ দক্ষ লোক দ্বারা ইনস্টল করা উচিত৷
আধুনিক লাকড়ির চুলা
যেমন, আমি যখন মফস্বলে ছিলাম, উন্নত লাকড়ির চুলাই ভাল মনে হতো।
সেখানে লাকড়ির অভাব ছিলো না, খাবার ও খুব স্বাদের হত। দারুন স্বাদ লাকড়ির রান্নায়।
কিছু এল্যুমিনিয়মের পাত্র হলে যথেষ্ট। সেই স্বাদ এখন বাজাজের চার বার্নার ও কিয়ামের সেরা নন স্টিক ফ্রাইং প্যানের রান্নায় পাইও না।
ইনডাকশন কুকার
একজনের পরামর্শ ক্রমে ইনডাকশন কুকার কিনেছিলাম। তাতে রান্নার খরচ অনেক কমে গেলেও স্টিলের এক গাদা প্যান, কারী প্যান কিনতে হয়েছে।
রান্নাঘর জ্যাম করে ফেলেছি। তবে এতে ধোঁয়া নেই, টাইমার আছে, তাপমাত্রা ফিক্স করা যায়।
ইন্ডাকশন চুলার আদ্যপান্ত !!! ➡️
ইনফ্রা রেড কুকার
অতপর ইনফ্রা রেড কুকার। সেটি সব পাত্র চলে বটে, রান্নার পর চুলা উপরের সিরামিক টি অনেক ক্ষণ গরম হয়ে থাকে যা সহজে বোঝা যায় না , এতে হাত লাগলে বিপদ হতে পারে। বিল ও খানিক টা বেশি আসে।
সব ধরনের রান্নার জন্য উপযুক্ত নয়: যদিও ইনফ্রারেড গ্যাসের চুলা অনেক রান্নার কাজে পারদর্শী, সেগুলি নির্দিষ্ট বিশেষ কৌশলের জন্য আদর্শ নাও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ভাঁজা বা ধীর রান্নার পদ্ধতিগুলির জন্য আরও সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হতে পারে, যা ঐতিহ্যগত চুলাগুলি করতে পারে।
কেরোসিনের চুলা
এই চুলাগুলি অত্যন্ত টেকসই, অত্যন্ত জ্বালানী সাশ্রয়ী, এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ এবং কখনও কখনও গ্রাহকের প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করা হয়।
কেরোসিনের চুলা দুই ধরনের হয় - উইক টাইপ এবং প্রেসার টাইপ। উইক স্টোভ হতে পারে একাধিক ছোট উইক, অথবা তার প্রান্তে একটি একক বাতি, অথবা একটি স্ট্যান্ডার্ড হিটার-টাইপ বৃত্তাকার বেতি।
কেরোসিন চাপের চুলায় জেনারেটরকে একটি কাপে অ্যালকোহল জ্বালিয়ে প্রিহিট করা হয়, তারপর চুলা জ্বালানো হয়।
প্রেসার স্টোভের একমাত্র সমস্যা হল জেট পরিষ্কার রাখা, কিন্তু যদি জ্বালানী ট্যাঙ্কটি বছরে একবার ধুয়ে ফেলা হয় এবং শুধুমাত্র ফিল্টার করা জ্বালানী ব্যবহার করা হয় তবে এটি যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
রাইস কুকার
রাইস কুকার কি প্রচুর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে?
অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় শক্তি খরচ অনেক কম (২৩-৫৭%) ছিল।
এখন বাড়িতে গেলে, দুটি ছোট রাইস কুকারে সব ধরনের রান্না করি। জাপানিরা খাওয়া গরম করা হতে শুরু করে প্রায় সবকিছু এই রাইস কুকারে রান্না করে থাকে।
এর বড় সুবিধা হলো ঢাকনা বন্ধ করে ও খুলে দুভাবে রান্না করা যায়, ঢাকনা বন্ধ হলে অনেকটা প্রেসার কুকারের মত ভেতরে তাপ তৈরী হয়। সবচেয়ে সুবিধা হলো, রান্না শেষে যখন পাত্রে আর জল থাকে না, কুকার নিজে হতে বন্ধ হয়ে যায়।
রাইস কুকারে ভাত খাওয়ার ক্ষতিকর দিক কী⁉️▶️
রান্নার খরচ
আপনার রান্নাঘরের বার্নার প্রতি ঘন্টায় যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে তা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে, যার মধ্যে আপনার বার্নারের ধরন, আপনার রান্নাঘরের আকার এবং আপনি কত ঘন ঘন বার্নার ব্যবহার করেন তার উপর নির্ভর করে।
সাধারণভাবে বলতে গেলে, একটি রান্নাঘরের বার্নার প্রতি ঘন্টায় ০.১৫ থেকে ০.৬ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করবে।
এখন রান্নার খরচের হিসেব নিকেশ বলি। দিনে তিন ঘন্টা করে ব্যবহার করলে, এলপিজি গ্যাস লিটার প্রতি ১০০/ টাকা হিসেবে মাসে ৩০০০/টাকা খরচ প্রায়।
ইনডাকশন কুকারে মাসে ৯০০/ টাকা খরচ প্রায়। ( ২০০০ ইউনিট চুলায় ঘন্টায় ২ কিলো ওয়াট বা ২ ইউনিট বিদ্যুৎ )
ইনফ্রা রেড কুকার মাসে ১৩৫০/ টাকা প্রায় ( ২০০০ ইউনিট চুলায় ঘন্টায় ৩কিলো ওয়াট বা ৩ ইউনিট প্রায়।)
তাই গ্যাসের চুলায় রান্নার চেয়ে ইন্ডাকশন কুকিং বেশি লাভজনক। ইনফ্রা রেড ইনডাকশন এর চেয়ে কিছু বেশি ব্যয় বহুল।
রাইস কুকার মূলত ইনডাকশন কুকিং পদ্ধতিতে চলে।
শক্তি স্থানান্তর এবং দ্রুত গরম করার সময় এর কার্যকারিতার কারণে, গ্যাসের চুলায় রান্নার তুলনায় ইন্ডাকশন কুকিং কম শক্তি ব্যবহার করে এবং এর ফলে এটি একটি অধিক লাভজনক বিকল্প।
উন্নত লাকড়ির চুলা সবচেয়ে ভাল যদি রান্নায় আদিম স্বাদ বিবেচনা করেন।
মন্তব্যসমূহ