এমবিবিএস
এমবিবিএস এ সুযোগ পাওয়া খুবই কঠিন। প্রতিটি আসনের বিপরীতে উচ্চ নম্বর প্রাপ্ত অনেক মেধাবী প্রতিযোগী শিক্ষার্থী থাকে। ভর্তি পরীক্ষায় সামান্য কিছু ভুল ছিটকে দেবে ভবিষ্যত স্বপ্ন থেকে। সেই সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা, সীমিত আসন, বিষয় বৈচিত্র কম থাকায়, সুযোগ না পাওয়ারা হতাশায় ভোগে।
"কোন বিষয়ে এমবিবিএস করছো"
প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের এই " মধুর প্রশ্ন" টি সব মেডিকেল স্টুডেন্ট ও গ্রাজুয়েট ডাক্তারদের সহ্য করতেই হয় ।বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা আমার বন্ধুদের কিন্তু এমন প্রশ্ন শুনতে হয়না।
কেউ ক্রিকেট খেলে জানলে সে ব্যাটার, বোলার নাকি আমার মতো উইকেট কিপার সেটাও
আমি জানতে চাই। পারলে কিছু খুচরো উপদেশ দিয়ে দিই। "বুঝলে, জেনুইন উইকেট
কিপারের কোন দাম নেই এখন। ঋষভ পন্থ না হয় গিলকৃষ্ট বা লিটনের এর মত মারকুটে ওপেনার ও হতে হবে । নিদেন পক্ষে
মুশফিকের মত হলেও ঢাকা লিগে চলবে। যদিও সে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। নিখুঁত উইকেট কিপারের যেমন চাহিদা কমে গেছে , বিশেষজ্ঞহীন ডাক্তারদের অনেকে তাই মনে করেন নিজেদের ।
একে ইতিবাচক ভাবে নিতে হবে। ওকালতি, প্রশাসন, ও অর্থনীতির উচ্চ ডিগ্রিগুলো
সম্পর্কে ও অন্য পেশাজীবীদের এমনই ধারণা।
যাহোক, বন্ধু ও আত্মীয়দের এমন প্রশ্নের জন্য ই বিজ্ঞানী হওয়ার অদম্য ইচ্ছা
বিসর্জন দিয়ে শেষমেষ সার্জন হয়েছি।
ডাক্তারি পাশ করে প্যাথলোজি নিয়ে পড়ছিলাম। উদ্দেশ্য গবেষক হবো। কিন্তু
আত্মীয়দের ধারণা হলো, রুগীদের মল, মূত্র, কফ, রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষার ডাক্তার
হচ্ছি। কিছু ক্লিনিশিয়ান ডাক্তারেরও ভীষণ অবজ্ঞা দেখলাম। তারা পেরিফেরিতে
পার্ট ১, পার্ট ২, নামক ডিগ্রি, সাইন বোর্ড লাগিয়ে ঔষধের দোকানের পেছনে ঘুপচি রুমে বসে
রুগী দেখছে। অথচ নতুন বিশেষজ্ঞরা রুগী স্বল্পতায় এখানে ওখানে ফেরিওয়ালার মত
ঘুরে ঘুরে রুগী দেখছে ।
মানুষের প্রশ্নবান সইতে না পেরে অগত্যা প্যাথলোজি ছেড়ে মেডিসিনে মাত্র ঢুকে
ছিলাম । ব্যস্ততা ছিল। তাড়াতাড়ি বিয়ে করায় বাসর রাতে শুনলাম, স্ত্রী ইনিয়ে
বিনিয়ে বলছে, তাঁর নাকি সার্জনদের খুব ভাল ও ব্যক্তিত্ববান লাগে, ঠিক তার
মামার মত। দাঁত চেপে সহ্য করলাম।
পড়াশোনা ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে সার্জারি তেও সুযোগ হয়ে গেলো। সার্জন ও হলাম ।
কিন্তু মন আমার এখনও গবেষনা কর্মের কাজে ব্যস্ত থাকতে চায় । তাই ইনফেকশাস
ডিজিজ নিয়ে আপাতত ব্যস্ত আছি।
এটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। যেহেতু এদেশের নীতি নির্ধারকরা ইউরোপের
মতো "জেনারেল প্র্যাকটিসনার্স " বা " জিপি "নামক খুব মূল্যবান চিকিৎসা
পর্যায়টির কোন স্বীকৃতি তৈরী করেন নি। তাহলে নিজ গ্রামে জিপি করেই কোটিপতি
হতে পারতাম ।
প্রশ্নটি অজ্ঞানতা প্রসূত হলেও আপনার জন্য উদদীপক হতে পারে । বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সবার জন্য নয়। রুগীদের মাত্র ১০ শতাংশ এর জন্য বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালের বহিবিভাগ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের
চেম্বারে রুগী সংখ্যার মধ্যে আজকাল কোন পার্থক্য নেই ।
তাই, সহকর্মী হিসেবে উপদেশ থাকবে, এমনতর প্রশ্নর উত্তর হবে, একজন
অলরাউন্ডারের মতই ।
" আংকেল, আমি মেডিসিন, সার্জারি উভয়ই সাবজেক্ট নিয়ে এমবিবিএস পড়তেছি। " তাতে তিনি ২২০ ভোল্টের শক খেয়ে অজ্ঞান হলেও তার চিকিৎসার দায়ভার কিন্তু আপনার!
মন্তব্যসমূহ