কম খরচে ঢাকা শহরে থাকার উপায় কী!

কম খরচে ঢাকা শহরে থাকার উপায় কী ! 

চিত্র, উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ, একজন চাকুরিজীবি কি করে ঠিক সময়ে আসবেন অফিসে তা মুখ্য নয়। মুখ্য হলো ঠিক সময়ে পৌঁছানো।

2022 সালে  বসবাসের জন্য  বিশ্বের  সবচেয়ে সস্তা রাজধানী শহরগুলো হল, (সূচক অনুযায়ী বসবাসের জন্য সেরা দশটি সর্বনিম্ন ব্যয়বহুল স্থান:) 

  •  হ্যানয়, ভিয়েতনাম
  •  ব্যাংকক
  •  বুদাপেস্ট
  •  সোফিয়া, বুলগেরিয়া
  •  জোহানেসবার্গ 
  •  নম পেন, কম্বোডিয়া
  •  লা পাজ, বলিভিয়া
  •  কুইটো, ইকুয়েডর
  •  মেক্সিকো শহর
  •  কুসকো, পেরু

অর্থাৎ ঢাকা শহরের চেয়ে সস্তায় ওসব শহরে বসবাস করা সম্ভব। 

 এই রাজধানী শহরে দেশের সেরা হাসপাতাল( ! ) এবং স্কুল কলেজ রয়েছে। তাই দেশের জনগণকে বাধ্য হয়েই ঢাকা শহরে আসতে হয় । কিন্তু মেট্রো সিস্টেম এবং পাতাল রেল, ট্রাম লাইন না থাকায় চলাফেরায় অবর্ননীয় কষ্ট জনগণের।  সেজন্য তেমন কোন পর্যটক আসেনা ঢাকায় যা প্যারিস, দিল্লী বা রোম শহরের মত রাজধানী শহর গুলোর অন্যতম আয়ের উৎস। তাই করণীয়গুলির একটি অন্তহীন তালিকা আছে ঢাকার মেয়রদের ।  কিন্তু মশা মারতে আর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাদের মেয়াদ পার হয়ে যায়।

কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষ্যে, বিশ্বকাপের টিকিট ধারী পর্যটক দের বিনা ভাড়ায় বাসে ট্রেনে ভ্রমণের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যা ঢাকা শহরে অকল্পনীয়। 

কেপটাউন শহরের দর্শনীয় স্থানগুলোয় প্রবেশ করতে বিদেশী পর্যটকদের কোন অর্থ দিতে হয় না। ইউরোপিয়েদের কাছে হ্যানয় কিংবা ব্যাংকক ভ্রমণ মানে অর্থ সাশ্রয়। একটি পূর্ণ প্লেট খাবারের দাম প্রায় ১ ডলার এবং একটি মোটামুটি মানের হোটেল থাকার দাম প্রায় ১০ ডলার। সেজন্য ব্যাংকক মানে বিনোদন, খাবার, পরিবহন এবং মজার জীবনযাত্রা ! 

নিজ অভিজ্ঞতা : 

চিত্র, ভাসমান হোটেল, দৈনিক ৮০ টাকায় মাত্র।

কম খরচে ঢাকা শহরে থাকার আমার কষ্টকর অভিজ্ঞতাগুলো বলি । প্রথমেই বলি, শহরের ভিতরে কর্মস্থল হলে বাঁদরের মত লাফিয়ে বা বাঁদুড়ের মতো ঝুলে বাসে চলাচল করাটা রপ্ত করে নিতে হবে। সেটা পারলে আশেপাশে কোথাও থাকার সস্তায় ব্যবস্থা করতে পারেন, যাত্রাবাড়ী বা সাভার। দু-চারজন নামার পর খালি সিটে বসে রাতের ঘুমটা ঘুমিয়ে নিবেন, কারণ বাস কখন পৌঁছাবে ঠিক নেই। এই শহরে সকল গেইটলক বাস ই লোকাল আর সকল সড়ক আইন ই অসার ।

সেটা না পারলে শাহবাগের আশেপাশে অনেক উচুতে অষ্টম, নবম তলায় কিছু শেয়ারিং করে থাকার ব্যবস্থা আছে। লিফট মান্ধাতার আমলের। তাই সিঁড়িভাঙা ও শিখতে হবে।

যদি ছাত্র হোন তবে, হোস্টেল, মেসে থেকে রাজনীতির ঘুটি হিসেবে চলতে হবে । সরকারি দলের হলে, বিড়ালের মতো আর অন্য দলের হলে ইদুঁরের মতো চলাফেরা শিখতে হবে । যদি নিবরাস এর মতো জেএমবি বা আইএস এর ফাঁদে পড়েন, তবে জঙ্গি অতঃপর এনকাউন্টার ,,,,, লাশ নিতেও পরিবার ভয়ে আসবেনা। পরিচয় থাকা সত্বেও আপনি বেওয়ারিশ লাশ হয়ে যাবেন।

সময় কাটাতে টিভি দেখা বা পত্রিকা পড়া সম্বল ঢাকার মানুষের। কিন্তু একটিও নিরপেক্ষ পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল নেই, যা দেখে দেশের অবস্থা বুঝতে পারবেন। বেশিরভাগ পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের মতে বাংলাদেশ আর কটা দিন পরে সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে! 

আরবের যাযাবর বেদুঈনদের মত ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। যাযাবরদের মতো করেই নিদারুণ কষ্টে বছর কাটে ভাড়াটিয়াদের। বছর ঘুরলেই ভাড়া বাড়ে কিন্তু সেই সঙ্গে বেতন বাড়েনা যাদের তাদের বাসা বদলের  হিড়িক শুরু হয়। ফলে সাধ্যের মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে প্রতি বছর ঢাকার মানুষকে ঠিকানা বদলাতে হয় আরবের যাযাবরদের মতোই ।

চিত্র, আধুনিক সুপার মেস।

যদি স্কুটার চালাতে জানেন , তবে একটু দুরে ভালোভাবে থাকতে পারবেন। যানজট সমস্যা হলেও খেয়াল রাখবেন , জান টা যেনো না যায় বেখেয়ালে । সব স্কুটারই এখন ফুটপাত দিয়ে চলে।

আমি এসবের কোনটাই পারতাম না। তাই অন্যদের শিখিয়ে দেয়া নিয়মে, বসের সামনে প্রায় পা ধরা বা এ জাতীয় ভঙ্গিতে কেঁদে ফেলেছিলাম।

বস বড় দয়াল মানুষ। প্রতিষ্ঠানের ছাদে আরো কয়েকজনের সাথে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। ছাদের ওপর কুঁড়েঘর। তার বিনিময়ে বাড়তি অনেক কাজও আমাকে করতে হতো। অবস্থাপন্ন কলিগরাও কাজ দিতো, টিপ্পনী কাটতো " মসজিদে খান, মসজিদে ঘুমান " এই জাতীয়। তবুও আমি ভাবতাম, আকাশে কুঁড়েঘর হলেও ভালো আছি। নীচে তাকালে রাস্তায় সারিসারি গাড়ির মিছিল আর ফুটপাতে পিপড়ের মতো ঘরমুখো মানুষ দেখতাম, আর সেই ঢাকার বিখ্যাত যানজট দেখতাম, ঘন্টার পর ঘন্টা।

তখন ভাবতাম, বস্তিবাসীদের মতো শিক্ষিত বেকারদের (মিনিমাম ইন্টার পাস, চাকুরী সন্ধানী, গরিব চাকুরে) জন্য একটা ভালো বস্তির খুব দরকার ঢাকা শহরে।কেউ কি উদ্যোগ নেবে!





স্বাস্থ্যের কথা/ বাংলাভাষায় অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন

মন্তব্যসমূহ