সেরোটোনিন
সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক যা শরীর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করে। স্নায়ু কোষ এবং মস্তিষ্কের কাজ করার জন্য এটি প্রয়োজন। কিন্তু অত্যধিক সেরোটোনিন লক্ষণ এবং উপসর্গ সৃষ্টি করে যা হালকা (কাঁপুনি এবং ডায়রিয়া) থেকে গুরুতর (পেশীর অনমনীয়তা, জ্বর এবং খিঁচুনি) পর্যন্ত হতে পারে। গুরুতর সেরোটোনিন সিন্ড্রোম যদি চিকিত্সা না করা হয় তবে মৃত্যুর কারণ হতে পারে
আমাদের শরীরে স্নায়ু কোষগুলোর রাসায়নিক বার্তাবাহক হিসেবে কিছু জৈব যৌগ আছে যা নিউরোট্রান্সমিটার নামে পরিচিত। মানুষের দেহে ৫০টির ও অধিক নিউরো ট্রান্স মিটার রয়েছে তন্মধ্যে সেরোটোনিন বা ৫- হাইড্রক্সিট্রিপ্টামিন অন্যতম।
সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক যা মস্তিষ্কে এবং সারা শরীরে স্নায়ু কোষের মধ্যে বার্তা বহন করে। সেরোটোনিন মেজাজ, ঘুম, হজম, বমি ভাব, ক্ষত নিরাময়, হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্ত জমাট বাঁধা এবং যৌন আকাঙ্ক্ষার মতো শরীরের ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এটি মস্তিষ্কের স্নায়ুকে সংযোগকারী একটি নিউরোট্রান্সমিটার। রক্তনালিকায় রক্ত প্রবাহে এটি সাহায্য করে। এটি মানুষকে ভাল থাকার অনুভূতি প্রদান করে| তাই একে অনেক সময় সুখানুভূতির হরমোন বলা হয়। সেরোটোনিন স্বাভাবিক পরিমাণে থাকলে মানসিক সুখানুভূতির একটি ভারসাম্য অবস্থায় থাকে। আর তাই একে হ্যাপি কেমিকেলও বলা হয় কখনো।
সেরোটোনিন হরমোন নয়, একটি মনোএমাইন। মনোমাইন নিউরোট্রান্সমিটারের মধ্যে রয়েছে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নোরপাইনফ্রাইন।
মোনোমাইনগুলি অন্তঃ ব্যথা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে জড়িত এবং প্রকৃতপক্ষে, দূরের এবং কেন্দ্রীয় মনোঅ্যামিনার্জিক কর্মহীনতা নির্দিষ্ট ধরণের ব্যথায়, বিশেষত নিউরোপ্যাথিক ব্যথায় জড়িত।
অনেক উদ্ভিদ এবং ছত্রাকে সেরোটোনিন পাওয়া যায়।
দেহে সেরোটোনিন কমে যাবার প্রভাব ও লক্ষণসমূহ:
- পরিপাক ক্ষমতা কমে যায়, কারণ সেরোটোনিনের প্রধান কাজ সমূহের একটি হচ্ছে পরিপাকে সাহায্য করা। এতে করে ডায়রিয়া, কোষ্টকাঠিন্য , পেটে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
- স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের প্রভাবে সেরোটোনিনের পরিমাণ কমে যায়। তখন মানসিক অবসাদ, বিষন্নতা ইত্যাদি দেখা যায়।
- তাই ডিপ্রেসিভ রোগীদের কিংবা Mood disorderএর রোগীদের চিকিৎসায় SSRI দেওয়া হয়, যা Circulatory সেরোটোনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- ডিপ্রেশনের সময় যেহেতু সেরোটোনিনের পরিমান কমে যায়, তাই তাদের Associate symptoms হিসাবে Anorexia, Diarrhoea, constipation দেখা দেয়।
- ইনসমনিয়া ডেভেলপ করে, আর সকাল বেলায় জাগ্রত হতে সমস্যা হয়। ডিপ্রেশনের পেশেন্ট দের যেহেতু সেরোটোনিন এর পরিমাণ কম থাকে, তাই তাদের রাত্রে ঘুম হয় না, ইনসমনিয়া থাকে, আর সকাল বেলায় ঘুম বেড়ে যায়।
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সিন্ড্রোম (চরম, দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি),
- ফাইব্রোমায়ালজিয়া (ব্যাপক ব্যথার অবস্থা),
- আলঝেইমারস, (প্রগতিশীল রোগ যা স্মৃতিতে সমস্যা এবং মানসিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে),
- পারকিনসন (স্নায়বিক রোগ যা আন্দোলনকে প্রভাবিত করে)
সেরোটোনিন বৃদ্ধিকারী প্রাকৃতিক খাদ্যসমূহ :
অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো, যা রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করতে পারে।
- প্রাণীর প্রোটিন, যেমন টার্কি, মুরগি, মাছ
- ডিম
- দুধ
- সয়া পণ্য যেমন সয়াবিন (edamame), tofu, Seitan, সয়া দুধ
- চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়োর বীজ এবং তিল সহ বাদাম এবং বীজ
সেরোটোনিন বৃদ্ধির ড্রাগসমূহ :
- Citalopram
- Escitalopram
- Fluoxetine
- Fluvoxamine
- Paroxetine
- Sertraline
- Vilazodone
সেরোটোনিন লেভেল কমে গেলে SSRI drugs দেওয়া হয়, তবে SSRI এর কারণে সেরোটোনিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে, তখন আবার সেরোটোনিন সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। তাই SSRI প্রেসক্রাইব করার সময় রোগীর অবস্থা দেখে নিতে হবে। সেরোটোনিন সিন্ড্রোম এর কারণে সেক্সুয়াল ডিসফাংশন দেখা দেয়। তাই সবসময় ডিপ্রেশন আর সেরোটোনিন এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য টেনশন মুক্ত থাকবে, আর সেরোটোনিন সম্পৃক্ত খাবার তথা যেসব খাবার খেলে প্রাকৃতিকভাবে সেরোটোনিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তা বেশি করে খাওয়া উচিৎ।
ঔষধের মাত্রা ও সময়কাল
রুগী সনাক্ত হলে কোন রেজিষ্টার্ড ডাক্তার সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের জন্য দিয়ে থাকেন। কিছু প্রতিক্রিয়া হতে পারে। কাঞ্জিত ফলাফল অর্জনের জন্য ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। যদি ফলাফল ও রুগীর আচরণ অনুকূল হয় তবে কমপক্ষে ৬ মাস ঔষধ চালাতে হবে।
কিছু রক্ত পরীক্ষা করে ঔষধের মাত্রা ও প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এরপর ঔষধের মাত্রা কমিয়ে এনে একসময় বন্ধ করা হয়। কিন্তু এসময় যদি রুগীর পূর্বোক্ত লক্ষণসমূহ রিল্যাপ্স করে তবে মাত্রা বাড়িয়ে আরো ছয়মাস প্রয়োজনে সারাজীবনও খেতে হতে পারে।
এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলোর সাথে সামঞ্জস্য করে মাত্রা নির্ধারণ ও সহযোগী ঔষধের প্ৰয়োজন হতে পারে।পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো উত্তেজনা, ক্লান্তিচোখ, ঝাপসা লাগা, যৌনতা কমে যাওয়া, ক্লিনিকেলি শেষেরটি দিয়ে রুগীর উপর ঔষধের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করি আমরা। অতঃপর ব্যবস্থা নিই।
ঔষধের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও ইফেক্ট এর ভারসাম্য রাখতে পারলে প্রয়োজন অনুযায়ী সারাজীবনও খাওয়া যেতে পারে।
« Previousডোপামিন, ঘুম ও দেহঘড়ি নিয়ন্ত্রক
সিজোফ্রেনিয়া, চিকিৎসা যোগ্য! Next »
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। স্বাস্থ্যের কথা/ অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন
মন্তব্যসমূহ