গন্ধ
মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ আছে যাকে ঘ্রাণশক্তি বলে। এই স্পটটি নাকের ছিদ্র থেকে গন্ধের সংকেত পাওয়ার জন্য দায়ী।
মহিলাদের ঘ্রাণজ বাল্বের কোষগুলি পুরুষদের তুলনায় ৪৩% বেশি। এটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের নাকের গন্ধ সনাক্ত করার ক্ষমতা দেয়।
সব নাক গন্ধ পায় না। গন্ধ সুস্থ জীবনধারণে সাহায্য করে।
নাকের গন্ধ পাওয়ার শক্তি হারিয়ে গেলে খাদ্য আস্বাদনের ক্ষমতা চলে যায়। স্বাদু ইলিশ ও পচা মাছের মধ্যে তখন তফাত করা যায় না। সব খাবারের স্বাদই একরকম মনে হয়।
গন্ধ পাওয়াটা হাঁচি কাশির মতোই এক ধরনের রক্ষাকারী প্রতিঘাত বা প্রোটেকটিভ রিফ্লেক্স, যা আমাদের সুস্থ জীবনধারণে সহায়তা করে।
কোনও খাদ্যের গন্ধ আমাদের মধ্যে ক্ষুধার উদ্রেক করে। যাঁরা নাকে গন্ধ পান না, তাঁরা খাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেন। শরীরস্বাস্থ্য শুকিয়ে যায় ও নানা ধরনের রোগের শিকার হন। যেমন, রক্তাল্পতা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।
গন্ধ পাওয়ার আশায় তখন তাঁরা ডাক্তারদের দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়ান। কিন্তু না, তাঁরা শেষ পর্যন্ত সেরে ওঠেন না। গন্ধ না পাওয়া বা ‘অ্যানোসমিয়া’ একবার দীর্ঘমেয়াদী হয়ে পড়লে তা দুরারোগ্য হয়ে ওঠে।
শিশুরা তাদের পরিবেশ অন্বেষণ করার উপায় হিসাবে বা একটি নির্দিষ্ট বস্তুর সাথে অভিমুখী এবং আরামদায়ক হওয়ার উপায় হিসাবে গন্ধ ব্যবহার করতে পারে।
নাক গন্ধ পায় না যে যে কারণে
মানুষের নাক ‘অ্যানোসমিয়া’র শিকার হয় নানা কারণে। যেমন,
- নাকে বা মাথায় আঘাত
- অ্যালার্জি
- মেয়াদি সাইনোসাইটিসের মতো নানা প্রদাহ, ভাইরাস ইত্যাদি
- অর্বুদ বা পলিপের দ্বারা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
- নাকের ঝিল্লির আবরণ শুকিয়ে যাওয়া (অ্যাট্রোফিক রাইনাইটিস)
অ্যালঝাইমার বা পার্কিনসনস্ রোগেও নাক গন্ধশক্তি হারাতে পারে। গন্ধশক্তি নষ্ট হতে পারে নানা হরমোন ভারসাম্যের কারণেও।
যেমন, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ইত্যাদি। কারও নাক গন্ধ হারাচ্ছে মনে হলেই তাই উচিৎ দ্রুত চিকিত্সা করানো।
ঘ্রাণযুক্ত বাল্ব দ্বারা গন্ধ পরিচালনা করা হয়, মস্তিষ্কের সামনের কাঠামো যা আরও প্রক্রিয়াকরণের জন্য শরীরের কেন্দ্রীয় কমান্ডের অন্যান্য অঞ্চলে তথ্য পাঠায়।
গন্ধ অ্যামিগডালা এবং হিপ্পোক্যাম্পাস, আবেগ এবং স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত অঞ্চলগুলি সহ লিম্বিক সিস্টেমে সরাসরি পথ নিয়ে যায়।
গন্ধের ব্যাকরণ
নাকের উপরিভাগের ঝিল্লির আবরণকে বলে অলফ্যাক্টরি এরিয়া বা গন্ধগ্রহণকারী অংশ। এর ভেতরে থাকে গন্ধগ্রহণকারী স্নায়ুগুলি।
গন্ধ একজাতীয় রাসায়নিক অনুভুতি বা কেমিক্যাল সেন্স। কোনও বস্তুর গন্ধকে বুঝতে প্রয়োজন সেই বস্তুটির শ্লৈষ্মিক ঝিল্লির ওপরে পৌঁছনো। তার জলীয় অংশে দ্রবীভূত হওয়া।
যখন তা গন্ধগ্রহণকারী স্নায়ুগুলিকে উত্তেজিত করে তখনই সেই অনুভুতি গন্ধ স্নায়ুর মাধ্যমে ব্রেনের গন্ধ সেন্টার বা কেন্দ্রে পৌঁছে যায়। সেই কেন্দ্র তখন তাকে বুঝিয়ে দেয় গন্ধের সঠিক চরিত্র। ভাল-মন্দ।
গন্ধটি মন্দ হলে, ঝাঁঝালো হলে, ব্যক্তিটি তখন সে স্থান থেকে সরে যান। নিজেকে দুর্গন্ধ থেকে বাঁচিয়ে নেন।
তাদের নাকে ৩০০ মিলিয়ন পর্যন্ত ঘ্রাণজনিত রিসেপ্টর রয়েছে, আমাদের মধ্যে প্রায় ৬ মিলিয়নের তুলনায়। এবং কুকুরের মস্তিষ্কের যে অংশটি গন্ধ বিশ্লেষণে নিবেদিত তা আমাদের চেয়ে প্রায় ৪০ গুণ বেশি।
ক্ষমতা
এতদিন জানা ছিল মানুষ দশ হাজার রকমের গন্ধকে আলাদা করে চিনতে পারে। বর্তমানে জানা গেছে, মানুষ এক লক্ষ কোটি গন্ধকে চিনতে সক্ষম।
নাকের উপরিভাগের ঝিল্লি যা গন্ধবিচারে সক্ষম, সেখানে গন্ধকে ধরে রাখার জন্য মোট চারশোটি কোষ আছে। খরগোশের ক্ষেত্রে যা দশ কোটি।
কুকুরের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা বাইশ কোটি। তার ফলে এইসব প্রাণী গন্ধবিচারে মানুষের তুলনায় অনেক বেশি পারঙ্গম। এমনকী গন্ধবিচারে ইঁদুরও মানুষের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে।
শেষে
গন্ধ শক্তি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনুভুতি। যা একবার হারিয়ে গেলে ফিরে পাওয়া খুবই শক্ত। তাই সবারই উচিত নাক এবং নাকের অসুখের সঠিক যত্ন নেওয়া।
সাবস্ক্রাইব করুন। স্বাস্থ্যের কথা
সূত্র, PLOS জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার পরামর্শ।
মার্ক ডি. শ্রীভার, গবেষণার প্রধান লেখক এবং নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক পেন স্টেট ইউনিভার্সিটি।
https://www.google.com/amp/s/amp.cnn.com/cnn/2017/03/16/health/nose-shape-climate-genetics-study/index.html
মন্তব্যসমূহ