সারকোপেনিয়া বা পেশিক্ষয়
সারকোপেনিয়া হল বয়স্কদের মধ্যে পেশী ভর এবং কার্যকারিতা হ্রাস যা গতিশীলতা হ্রাস করে, জীবনের মান হ্রাস করে এবং পতন-সম্পর্কিত আঘাতের কারণ হতে পারে, যার জন্য ব্যয়বহুল হাসপাতালে ভর্তি এবং বর্ধিত পুনর্বাসন প্রয়োজন। তাই সময় থাকতে সচেতন হোন।
আমরা জানি আমাদের মাংসপেশীর প্রধান কাজ হল রক্ত পাম্প করা এবং দেহের নড়াচড়া করা থেকে শুরু করে ভারী ওজন তোলা বা সন্তান জন্মদান পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ রয়েছে।
পেশীগুলি সংকোচন বা শিথিল হয়ে চলন সৃষ্টি করে। এই আন্দোলন স্বেচ্ছায় হতে পারে (অর্থাৎ সচেতনভাবে পেশী) অথবা আমাদের সচেতনতা ছাড়াই করা হয় (অনিচ্ছাকৃত পেশী)।
বয়সের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হল পেশী ভর, শক্তি এবং কার্যকারিতার অনিচ্ছাকৃত ক্ষতি, যাকে সারকোপেনিয়া বলা হয়।
পেশী ভর ৩০ বছর বয়সের পরে প্রতি দশকে প্রায় ৩-৮% হ্রাস পায় এবং ৬০ বছর বয়সের পরে এই হ্রাসের হার আরও বেশি হয়।
সারকোপেনিয়া হল বয়স-সম্পর্কিত পেশী ভর এবং শক্তির প্রগতিশীল ক্ষতি। এই অবস্থার প্রধান উপসর্গ হল পেশী দুর্বলতা।
সারকোপেনিয়া হল এক ধরণের পেশী ক্ষয় বা অ্যাট্রোফি যা প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়ার কারণে ঘটে।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এই রোগে অবদান রাখতে পারে।
সার্কোপেনিয়া কী
সার্কোপেনিয়া হচ্ছে বয়সজনিত মাংসপেশির ক্ষয় ও আয়তন কমে যাওয়ার সমস্যা |
সার্কোপেনিয়া হচ্ছে বয়সজনিত মাংসপেশির ক্ষয় ও আয়তন কমে যাওয়ার সমস্যা। ফলে মাংসপেশির শক্তি কমে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে শারীরিক দুর্বলতা।
কাদের বেশি হয়
এটি সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ৬০ বছর বা তার ওপরে যাঁদের বয়স, এই সমস্যা তাঁদের মধ্যে দেখা যায়।
সাধারণত ৬০ বছরের পর এটি শুরু হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি বাড়তে পারে। অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের এই প্রবণতা আরও বেশি।
পেশিক্ষয় বা সারকোপেনিয়ার কারণ
পেশিক্ষয় কেন হয়
গবেষণায় দেখা গেছে, মাংসপেশির তন্তু ও কোষ সংখ্যায় ও আয়তনে কমে যাওয়ার ফলে এ রকম হয়। শারীরিক পরিশ্রম কম করলে এটি বেশি হয়।
বয়স বাড়লে অনেকে শরীরচর্চা কমিয়ে দেন, যা সার্কোপেনিয়া হতে সহায়তা করে। বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়।
শয্যাশায়ী না হলেও বিভিন্ন রোগের কারণে যাঁরা কায়িক পরিশ্রম বা শরীরচর্চা করতে পারেন না, তাঁদেরও মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া কিছু হরমোন, যেমন ইনসুলিন, টেসটোস্টেরনের পরিবর্তন ও ঘাটতিতে এ রকম হয়। কিছু ক্রনিক রোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা থাকলেও এ রকম হতে পারে।
যাঁদের শরীরে আমিষ বা প্রোটিনের ঘাটতি আছে, তাঁদেরও এ সমস্যা হয়। অনেকে ভাবতে পারেন, যাঁরা স্থূল (মানে বিএমআই বেশি), তাঁদের এ রকম হওয়ার আশঙ্কা নেই। গবেষণায় বরং উল্টোটা দেখা গেছে, তাঁদের সার্কোপেনিয়া হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
সারকোপেনিয়ার লক্ষণ
লক্ষণ ও উপসর্গ
সবচেয়ে বেশি যে উপসর্গটি দেখা যায়, সেটি হলো শারীরিক দুর্বলতা বা মাংসপেশির দুর্বলতা।
অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া, ধীরে ধীরে হাঁটা, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হওয়া—এ রকম উপসর্গের কথাও কেউ কেউ বলেন। অনেকে বলেন, তাঁরা হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান।
সারকোপেনিয়া প্রতিরোধে করণীয়
সার্কোপেনিয়ার জন্য বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন জীবনচর্চার পরিবর্তন। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
একটি রুটিনের মধ্যে চলতে পারলে ভালো। এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। শুরু থেকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনচর্চায় সার্কোপেনিয়া সহজে প্রতিরোধ করা যায়।
সাবস্ক্রাইব করুন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন, উত্তর বা উপদেশ পেতে শুধু হোয়াটস্যাপ +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬ এ মেসেজ দিন।
মন্তব্যসমূহ