বোন টিবি বা হাঁড়ে যক্ষ্মা

বোন টিবি বা হাঁড়ে যক্ষ্মা

হাঁড়ে যক্ষ্মা



যক্ষ্মা একটি জীবাণুবাহিত রোগ। যক্ষ্মা শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে, ফুসফুসে ও ফুসফুসের পর্দায় হতে পারে, অন্ত্রনালি, কিডনি, অস্থিসন্ধি ও লিম্প্ফনোডে হতে পারে। পাশাপাশি হাড়ে, বিশেষ করে মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হতে পারে।


যক্ষ্মা রোগ কি, উপসর্গ ও লক্ষণ সমুহ কি ⁉️▶️


হাড়ের টিবি একই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয় যা যক্ষ্মা সৃষ্টি করে, মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস। এটি মেরুদণ্ড এবং ওজন বহনকারী জয়েন্টগুলিতে বেশি সাধারণ, তবে এটি যে কোনও হাড় বা জয়েন্টকে প্রভাবিত করতে পারে।


হাড়ের টিবি বায়োপসি এবং আক্রান্ত হাড় বা জয়েন্ট থেকে পুঁজের নমুনা এবং টিস্যুর কালচারের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়।


ক্ষতির পরিমাণের উপর নির্ভর করে চিকিত্সার মধ্যে সংক্রমণের চিকিত্সার জন্য ওষুধ এবং অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।


মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হলে এটিকে বিশেষভাবে পটস ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।


যক্ষ্মার জীবাণু সাধারণত ফুসফুস বা অন্য কোনো স্থান থেকে রক্তবাহিত হয়ে মেরুদণ্ডে বা হাড়ে পৌঁছায়। পাশাপাশি হাড়ের ভেতর প্রদাহও এটি করতে পারে। এটিকে বলা হয় অস্টিওমায়েলাইটিস।


মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হলে এটিকে বিশেষভাবে পটস ডিজিজ বলা হয়ে থাকে।


হাড়ে কি যক্ষ্মা হয়? হ্যাঁ, হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলে বোন টিবি। এর বেশির ভাগই হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন ভারত, বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায়।


হাড়ে যক্ষ্মা হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ না করলে পরে জটিলতা বেড়ে হাড় ভেঙেও যেতে পারে।


সঠিক খাদ্য সংমিশ্রণ কী⁉️
এতে বাড়তি পুষ্টির নিরাপত্তা কেন▶️


হাড়ের যক্ষ্মার উপসর্গ লক্ষণ

হাড়ের যক্ষ্মা (টিবি) বিভিন্ন উপসর্গের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ব্যথা: একটি অবিরাম, নিস্তেজ ব্যথা যা রাতে এবং কার্যকলাপের সাথে খারাপ হয়

  • দৃঢ়তা: জয়েন্ট শক্ত হতে পারে, বিশেষ করে সকালে, গতির পরিসীমা সীমিত করে

  • ফোলা: সংক্রমিত হাড় বা জয়েন্টের চারপাশের জায়গা ফুলে উঠতে পারে

  • উষ্ণতা: স্ফীত এলাকা স্পর্শে উষ্ণ অনুভূত হতে পারে

  • ওজন হ্রাস এবং ক্লান্তি: দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ অব্যক্ত ওজন হ্রাস এবং ক্লান্তি হতে পারে

  • স্নায়বিক সমস্যা: মেরুদণ্ড জড়িত গুরুতর ক্ষেত্রে, স্নায়ু সংকোচন দুর্বলতা, অসাড়তা, বা হাঁটা অসুবিধা হতে পারে

  • বিকৃতি: মেরুদণ্ড এবং নিতম্বের মতো ওজন বহনকারী হাড়গুলিতে বিকৃতি বেশি দেখা যায়

  • কোমলতা: রোগী জয়েন্ট বা হাড়ের চাপ থেকে অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং যখন তারা আক্রান্ত স্থান স্পর্শ করার চেষ্টা করে, তখন এটি কোমল অনুভূত হয়

  • পদ্ধতিগত লক্ষণ: জ্বর, রাতের ঘাম এবং অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস হাড়ের যক্ষ্মা সহ হতে পারে

বোন টিবি বা হাড়ে যক্ষ্মা হলে বুঝবেন কীভাবে

  • হাড়ে বা মেরুদণ্ডে যক্ষ্মা হলে ওই স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা, জ্বর, অরুচি, ওজন কমার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
  • ব্যথার কারণে রোগী পিঠ অতিরিক্ত সোজা করে হাঁটে।
  • কখনো হাত দিলে মেরুদণ্ডে একটু ফোলা অংশ টের পাওয়া যায়।
  • হাড় থেকে পরে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ প্রয়োগ করে, এমনকি প্যারালাইসিসও হতে পারে।
  • শুরুর দিকে অনেক সময় এটি এক্স–রেতে ধরা না–ও পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা ও টিবি–সম্পর্কিত পরীক্ষা করে নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন।
  • এমআরআই পরীক্ষায় সাধারণত এই রোগ ধরা পড়ে।
  • সন্দেহ হলে আগে তাঁর যক্ষ্মা রোগ হয়েছিল কি না, জানা উচিত।
  • নিজের না হলেও যাঁদের সঙ্গে থাকেন, তাঁদের কারও আগে যক্ষ্মা হয়েছে কি না, সেটি জানাও গুরুত্বপূর্ণ।

যক্ষ্মা হলে কি হাড় ভেঙে যেতে পারে?

যক্ষ্মার জীবাণু হাড়ের ভেতর ঢুকে এর গঠনগত পরিবর্তন করে ফেলে। ধীরে ধীরে এটি হাড়কে ক্ষয় করতে থাকে। 

এটি হাড়ের পাশাপাশি মেরুদণ্ডের ভেতরে যে ডিস্ক থাকে, সেটিকে নষ্ট করার চেষ্টা করে। পাশাপাশি এটি ইনফেকশনজনিত পুঁজও তৈরি করে।

সর্বোপরি পুরো হাড়ের ভেতর ক্ষয় ও চাপ তৈরি করে হাড় ভেঙে ফেলতে পারে।



হাঁড়ে যক্ষ্মা নির্ণয়

হাড়ের যক্ষ্মা, যা কঙ্কালের যক্ষ্মা নামেও পরিচিত, ক্লিনিকাল মূল্যায়ন, ইমেজিং অধ্যয়ন এবং পরীক্ষাগার পরীক্ষার সমন্বয় ব্যবহার করে নির্ণয় করা হয়:

  • ক্লিনিকাল মূল্যায়ন: একজন চিকিত্সক পেশাদার একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং জয়েন্টে ব্যথা, ফোলাভাব এবং শক্ত হওয়ার মতো লক্ষণগুলি সনাক্ত করতে আপনার চিকিৎসা ইতিহাস পর্যালোচনা করবেন।

  • ইমেজিং অধ্যয়ন: এক্স-রে, সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই হাড়ের অস্বাভাবিকতা, যেমন ক্ষত এবং বিকৃতি দেখতে সাহায্য করতে পারে। এমআরআই নরম টিস্যু জড়িত মূল্যায়নের জন্য বিশেষভাবে দরকারী

  • ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
    • টিউবারকুলিন ত্বক পরীক্ষা: একটি ইতিবাচক পরীক্ষা যক্ষ্মার সন্দেহকে সমর্থন করে, তবে এটি সক্রিয় রোগ নির্দেশ করে না।

    • রক্ত পরীক্ষা: এর মধ্যে সুপ্ত সংক্রমণ সনাক্ত করতে IGRA এবং সক্রিয় সংক্রমণে প্রদাহ নির্দেশ করার জন্য CBC, ESR এবং CRP অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

    • বায়োপসি: আক্রান্ত হাড় বা জয়েন্টের বায়োপসি মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে।

    • পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি তরলের ট্রেস পরিমাণে সংক্রমণ সনাক্ত করতে পারে।


হাঁড়ে যক্ষ্মার চিকিৎসা

হাড়ে যক্ষ্মা হলে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে শল্যচিকিৎসা দরকার হয়। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল। স্নায়ু বিনষ্ট হয়ে গেলে বা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসায় সফলতার সম্ভাবনা কমে যায়। 

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, অপুষ্টি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস, ফুসফুস বা অন্য কোনো যক্ষ্মার ঠিকমতো চিকিৎসা না করা—এসব হাড়ের যক্ষ্মার জন্য দায়ী। 

মেরুদণ্ড বা হাড়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার পাশাপাশি অন্যান্য উপসর্গ টের পেলে দেরি না করে সঠিক কারণ অনুসন্ধান করা উচিত।



সাবস্ক্রাইব করুন। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন, উত্তর বা উপদেশ পেতে শুধু হোয়াটস্যাপ +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬ এ মেসেজ দিন।

মন্তব্যসমূহ