কিভাবে টেস্টটিউব বেবি পদ্ধতি পরিচালিত হয়
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) বন্ধ্যাত্বের একটি সফল চিকিৎসা যা বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে পাওয়া যায়।
আইভিএফ নিষেক বা টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত করার পদ্ধতি।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক নিঃসন্তান নারী সন্তান লাভ করে থাকেন, অাবার অনেক নারী সারোগেসি বা নিজ গর্ভ ভাড়া দিয়ে তাতে অন্য দম্পতির নিষিক্ত ভ্রুণ ধারণ ও লালন করেন।
বন্ধ্যাত্বের বিভিন্ন কারণের চিকিৎসার জন্য এই পদ্ধতি প্রসারিত করা হয়েছে; IVF অ-নিষিক্ত ব্যক্তিদের দ্বারাও ব্যবহৃত হয় যারা উর্বরতা সংরক্ষণের পদ্ধতি অনুসরণ করে। এখানে IVF এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু তথ্য রয়েছে:
টেস্টটিউব বেবি বা আইভিএফ কি
এর উপযোগিতা কী⁉️▶️
নারী শরীরে জরায়ুর দুই পাশে আয়তাকার, চ্যাপ্টা ও নালিবিহীন দুটি ডিম্বাশয় বা ওভারি আছে। ওভারির কর্টিক্যাল অংশে অসংখ্য থলের মধ্যে থাকে ডিম্বানু বা ওভাম। জন্মের সময় প্রতিটি নারীর একেকটি ডিম্বাশয়ে প্রায় দশ লক্ষ পরিমান ওভাম থাকে।
একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর ওভারি দুটির যে কোনও একটি থেকে প্রতি মাসে সাধারণত একটি করে ডিম্বানু নিঃসৃত হয়ে ডিম্বনালি বা ফ্যালোপিয়ান টিউবে চলে আসে।
প্রথম ঋতুচক্র বা ফার্স্ট মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল থেকে মেনোপজ অবধি মোটামুটি ৪০ বছরে সর্বাধিক ৫০০টি ওভাম এইভাবে নিঃসৃত হয়।
শারীরিক সম্পর্কের পর ফ্যালোপিয়ান টিউবে থাকা ওভামের সঙ্গে পুরুষের শুক্রানু বা স্পার্ম মিলিত হয়ে সৃষ্টি হওয়া ভ্রূণ বা এমব্রায়ো জরায়ু বা ইউটেরাসে গিয়ে বাসা বাঁধে এবং সেখানেই বড় হয়।
নিষেক বা ফার্টিলাইজেশনের প্রথম পর্ব ফ্যালোপিয়ান টিউবে ঘটে। কোনও কারণে সেখানে প্রতিবন্ধকতা থাকলে ওভারি থেকে বেরিয়ে আসা ওভাম সেখানে পৌঁছাতে পারে না।
অন্য স্থানে উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ার কারণে তাই ফার্টিলাইজেশনও হয় না। সেই রকম অবস্থায় এই নালিকে পাশ কাটানোর দরকার হয়।
আই ভি এফ যখন প্রথমবারের মতো প্রয়োগ করা হল তখন ফ্যালোপিয়ান টিউবকে পাশ কাটিয়ে চিকিৎসা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
পরবর্তীকালে দেখা গেল আরও বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে আই ভি এফ-এর প্রয়োগ হতে পারে।
এটা অনুমান করা কঠিন যে IVF চিকিত্সা একজন দম্পতির জন্য সফল/অসফল হবে কারণ এটি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া।
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে IVF-এর প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয় কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় ক্ষেত্রে, একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হতে পারে।
একটি সাধারণ IVF চক্রের মধ্যে রয়েছে, প্রথমে, একাধিক ডিম্বাশয় ফলিকলকে উদ্দীপিত করার জন্য ডিম্বস্ফোটন প্রবর্তন, তারপরে ট্রান্সভ্যাজিনাল আল্ট্রাসাউন্ড-গাইডেড সুই ব্যবহার করে ওসাইট অ্যাসপিরেশন।
সংগৃহীত ওসাইটগুলিকে ভিট্রো বাইতে স্পার্মাটোজোয়া (IVF) এর সাথে মিশ্রিত করে বা নির্বাচিত শুক্রাণুকে সরাসরি oocyte সাইটোপ্লাজমে (ইন্ট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন) ইনজেকশন দিয়ে নিষিক্ত করা হয়।
ভ্রূণগুলিকে যত্ন সহকারে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়, অক্সিজেনের ঘনত্বকে অপ্টিমাইজ করে, ভ্রূণ কালচার মিডিয়া এবং উচ্চ-মানের ভ্রূণের বিকাশের প্রচারের জন্য অন্যান্য পরিবর্তনের অধীনে লালন করা হয়।
তারপর ভ্রূণগুলিকে আল্ট্রাসাউন্ড গাইডেন্সের অধীনে ক্যাথেটারের মাধ্যমে জরায়ুতে স্থানান্তর করা হয়।
গুরুতর পুরুষ ফ্যাক্টর বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে, এপিডিডাইমিস বা টেস্টিস থেকে শুক্রাণু পুনরুদ্ধারও করা যেতে পারে।
স্থানান্তরিত না হওয়া ভ্রূণগুলিকে পরবর্তী চক্রে স্থানান্তর করার জন্য ক্রায়োপ্রিজার্ভ করা হতে পারে (হিমায়িত ভ্রূণ স্থানান্তর)।
এই পদ্ধতিতে সাধারণভাবে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও একজন বৈজ্ঞানিক মিলিত ভাবে যা করেন তা এইরকম,
১, ফলিকিউলার স্টাডি: রোগীর শরীরে ওষুধ দিয়ে প্রথমে কিছু ভাল ওভাম তৈরি করে নেওয়া হয়। এই ব্যাপারে কয়েকটি জিনিস খেয়াল করা দরকার।
প্রথমত, এমনভাবে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে যাতে খুব বেশি সংখ্যক ওভাম তৈরি হয়।
দ্বিতীয়ত, সতর্কভাবে ওভামগুলির ক্রমিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে। ধারাবাহিক পর্যবেক্ষেণের ফলাফল থেকে বোঝা যাবে ঠিক কোনদিন ওভামগুলিকে শরীরের ভেতর থেকে বাইরে বের করে আনা সম্ভব। পর্যবেক্ষেণর এই পদ্ধতি ফলিকিউলার স্টাডি নামে পরিচিত।
২, ডিম্বানু সংগ্রহ: ফলিকিউলার স্টাডির সাহায্যে ওভামের প্রস্তুতি সম্পর্কে সবুজ সঙ্কেত মিললেই, এইচ সি জি ইঞ্জেকশন দিয়ে ওভারির যে কক্ষে ওভামগুলি বড় হচ্ছে সেই কক্ষটিকে ফাটিয়ে ফেলা হয়।
এর ঠিক ৩২-৩৬ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে ক্লিনিকে এনে ঘুম পাড়িয়ে প্রসবের পথ দিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাফির সাহায্য নিয়ে ওভামগুলিকে বের করে আনা হয়।
৩, শুক্রানু সংগ্রহ: যেদিন ওভাম সংগ্রহ করা হল সেদিনই সেই মহিলার স্বামীকে তাঁর সিমেন দিতে বলা হয়। তিনি হস্তমৈথুনের সাহায্যে সিমেন দিলে সেগুলি থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু বাছাই করা শুক্রানু বা স্পার্ম সংগ্রহ করে রাখা হয়।
৪, ভ্রূণ প্রস্তুতি: ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে সংগৃহীত ওভাম ও স্পার্মগুলি থেকে কিছু ভাল এগ ও সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর কিছু স্পার্মকে গবেষণাগারে ফার্টিলাইজ করানো হয়। এর পরে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ভ্রূণ তৈরি হয়ে যায়।
ফার্টিলাইজেশনের সময় শরীরের অভ্যন্তরে যে ধরনের তাপমাত্রা বা তরলের উপস্থিতির দরকার হয়, সেই রকম একটি আদর্শ পরিবেশ কৃত্রিম উপায়ে গবেষণাগারে সৃষ্টি করা হয়।
৫, ভ্রূণ স্থাপন: ৪৮-৭২ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেই বোঝা যায় কোন ভ্রূণগুলোতে কোষ বিভাজিত হতে শুরু করেছে, অর্থাৎ কারা কারা ফার্টিলাইজড হয়েছে। এবারে ফার্টিলাইজড দুটি বা তিনটি ভ্রূণকে জরায়ু বা ইউটেরাসে স্থাপন করা হয়।
দাতা গ্যামেট এবং সারোগেসি
দাতা গ্যামেট বিবেচনা করা যেতে পারে যখন কোনও অংশীদারের গ্যামেটের গুণমান বা পরিমাণে গুরুতর ত্রুটি থাকে
পুরুষদের ক্ষেত্রে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে গুরুতর অলিগোস্পার্মিয়া, অ্যাজোস্পার্মিয়া, পূর্বের IVF চক্রে নিষেকের ব্যর্থতা, বীর্যপাতের কর্মহীনতা, বা অন্যান্য গুরুতর পুরুষ ফ্যাক্টর বন্ধ্যাত্ব (যেমন, গোনাডোটক্সিক কেমোথেরাপির পরে) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
ডোনার oocytes বা ভ্রূণ ব্যবহার করা যেতে পারে যখন একজন মহিলার oocyte রিজার্ভ কম হয় (অর্থাৎ, উন্নত প্রজনন বয়স বা ডিম্বাশয়ের রিজার্ভ হ্রাস) বা oocyte গুণমান খারাপ হয়, যখন তার নিজের oocytes দিয়ে IVF-এর একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, বা যখন অকালের মতো অবস্থা ডিম্বাশয়ের অপ্রতুলতা তার নিজের গ্যামেট দিয়ে গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে অত্যন্ত কম করে তোলে।
দাতা গ্যামেটগুলিও ব্যবহার করা যেতে পারে যখন কোনও অংশীদারের একটি উল্লেখযোগ্য জেনেটিক ত্রুটি থাকে, বা যদি কোনও জেনেটিক অবস্থার পারিবারিক ইতিহাস থাকে যার জন্য ক্যারিয়ারের অবস্থা নির্ধারণ করা যায় না।
পুরুষ সঙ্গী ছাড়া মহিলা, সমকামী দম্পতি, বা মহিলা অংশীদার ছাড়া পুরুষরাও দাতা গ্যামেট ব্যাঙ্ক বা পরিচিত দাতাদের থেকে বেনামে দাতা গ্যামেট ব্যবহার করতে পারে৷
গর্ভকালীন বাহক (GC) হল একজন মহিলা যিনি গর্ভধারণ করেন এবং জেনেটিক পিতামাতা বা গ্যামেট দাতাদের সাথে যৌনভাবে ঘনিষ্ঠ হন না।
স্বাস্থ্য ও রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা পরামর্শ পেতে ২০০ টাকা নিম্নোক্ত নম্বরে বিকাশ করে হোয়াটস্যাপ করুন যেকোন সময়ে, যেকোন বিষয়ে; +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬,
মন্তব্যসমূহ