মানসিক অবসাদ

মানসিক অবসাদ

মানসিক অবসাদ


অবসাদ

অবসাদ একটি উপসর্গ, রোগ নয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি শারীরিক পরিশ্রম, খারাপ খাদ্যাভ্যাস বা মানসিক চাপের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।


যাইহোক, ক্লান্তি একটি অন্তর্নিহিত চিকিৎসা সমস্যার একটি উপসর্গও হতে পারে যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন। এই অধ্যায়ে আমরা মানসিক ক্লান্তি বা অবসাদ নিয়ে আলোচলা করবো।


ক্লান্তি বা অবসাদ কি
ভালো খাওয়ার পরও ক্লান্তি কেন হয়⁉️▶️


মানসিক ক্লান্তি এবং হতাশার মধ্যে পার্থক্য কী?


ক্লান্তি হল শারীরিক এবং মানসিক শক্তি এবং অনুপ্রেরণা উভয়ের অভাব (ওরফে ক্লান্তি, অবসাদ, এবং কম শক্তি)।

দীর্ঘস্থায়ী বিষন্ন ও বিষণ্ণতা, হতাশ এবং হতাশার অবিরাম অনুভূতির সাথে জড়িত অন্যান্য মানসিক, মনোদৈহিক এবং শারীরিক পরিবর্তন যা দৈনন্দিন কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করে সেটা অবসাদ।


আমরা সকলেই জীবনে কখনও না কখনও অবসাদে ভুগেছি। কখনও কাজের চাপে অবসাদ, কখনও চাকরি না পাওয়ার অবসাদ, কখনও বৈবাহিক জীবনে অশান্তির কারনে আসা অবসাদ, কখনও অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ার ভয়, হতাশা থেকে আসা অবসাদ।


কখনও এই অবসাদই ধারণ করে চরম আকার। দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভুগে মানুষ বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো অবাঞ্ছিত রাস্তা।


অবসাদ কাটাতে চিকিত্‍সকদের সাহায্য পাওয়া গেলেও নিজেকে নিজে সাহায্য না করলে অবসাদ কাটানো কখনই সম্ভব নয়কিছু জিনিস মেনে চললে কাটতে পারে অবসাদ।


তেমনই কিছু উপামনযোগী হঅবসাদে ভুগলে মনে সবসময় ভুলভাল ও অপ্রয়োজনীয় ভাবনা ভিড় করে থাকে। নিজেকে মনযোগী করে কাজের মধ্য ব্যপ্ত থাকলে নেগেটিভ চিন্তা মাথায় আসবে না।



মানসিক ক্লান্তি বা অবসাদের কারণ

মানসিক ক্লান্তির অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • স্ট্রেস: দীর্ঘস্থায়ী চাপ, সমবেদনা ক্লান্তি বা অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন মানসিক ক্লান্তি হতে পারে।

  • ঘুমের বঞ্চনা: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে কারণ আপনার শরীর ও মন বিশ্রাম ও রিচার্জ করতে পারে না।

  • অতিরিক্ত কাজ করা: দীর্ঘ সময় বা উচ্চ চাপের পরিবেশে কাজ করা মানসিক অবসাদ সৃষ্টি করতে পারে।

  • মাল্টিটাস্কিং: একসাথে অনেক কাজ করার চেষ্টা করা আপনার মনকে চাপ দিতে পারে।

  • মানসিক চাহিদা: স্থির মনোযোগের প্রয়োজন, নতুন দক্ষতা শেখা বা জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে।

  • মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা: মানসিক ক্লান্তি হতাশা বা উদ্বেগজনিত রোগের লক্ষণ হতে পারে।

  • শারীরিক অসুস্থতা: ফাইব্রোমায়ালজিয়ার মতো দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

  • অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন: অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিস বা স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো ক্লান্তি-সম্পর্কিত অবস্থার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কম ওজনের কারণেও ক্লান্তি হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি খাওয়ার ব্যাধি বা ক্যান্সারের কারণে হয়।


অবসাদ কাটানোর কিছু উপায়:

🎶গান শুনুন- অবসাদ কাটানোর জন্য খুব উপযোগী গান শোনা। তবে দুঃখের গান নয়, এমন গান শুনুন যা মনকে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করে অবসাদ দূরে রাখতে পারে গান।


🦜নেগেটিভ কথা বলা বন্ধ করুন- অবসাদে ডুবে থাকা মানুষ নিজের চারপাশে সবসময়ই হতাশা দেখে। কথাবার্তার মধ্যেও ফুটে ওঠে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা।


নিজের সম্পর্কে সংশয়, নিজেকে মূল্যহীন ভাবেন অবসাদে ভোগা মানুষ। এইসময় মানুষ খারাপ কিছু ঘটলে নিজেকে দোষ দেয়।


🗣️ক্ষোভ- অপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ভাবা ও প্রয়োজনের থেকে বেশি চিন্তা করা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। এইসব ক্ষোভ, ভাবনা চিন্তাই আপনার সবথেকে বড় শত্রু।


💤ভাল করে ঘুমোন-অবসাদে ভুগলে মানুষের ঘুম কমে যায়। কিন্তু শারীরিক বা মানসিক সুস্থতার জন্য ভাল ঘুম খুব জরুরী।


🏋️‍♂️শরীরচর্চা- শরীরচর্চার ফলে শরীর থেকে এনডোরফিন বেরিয়ে যায়। ফলে আমাদের মন ভাল থাকে। মন ভাল রাখার পাশাপাশি শরীর সুস্থ থাকায় রোগভোগও অনেক কম হয়। বাড়ে আত্মবিশ্বাস।

সকল মানুষেরই প্রতিদিন আধ ঘণ্টা থেকে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা উচিত্‍।


🎊মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন- অবসাদে ভুগলে মানুষ অনেক সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। কিন্তু এই সময় সবথেকে খারাপ একা থাকা। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, সময় কাটান।



অবসাদের চিকিৎসা

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যতম একটি প্রধান বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন তাঁরা। গবেষণায় উঠে এসেছে যে অবসাদ নিরাময়কারী (অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট) ওষুধ অবসন্নতা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।


সোয়া এক লক্ষেরও বেশি মানুষের ওপর ৫২২টি পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে সাধারণ ঔষধের তুলনায ২১টি প্রচলিত অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট তীব্র অবসাদ দূর করতে সক্ষম।


এ ধরনের ওষুধের দ্বারা আরও অনেক মানুষ উপকৃত হতে পারেন বলে স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যাগাজিন 'ল্যানসেট'-এ প্রকাশিত হওয়া এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়।


রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টস বলেছে, এই গবেষণা "অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান" ঘটিয়েছে।


গবেষণায় ব্যবহৃত ৫২২টি পরীক্ষা ছাড়াও অপ্রকাশিত বেশকিছু পরীক্ষার তথ্য সংযুক্ত করা হয়, যা থেকে প্রমাণিত হয় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তীব্র অবসাদ দূর করতে অন্য যেকোনো চিকিৎসাপদ্ধতির চেয়ে অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট বেশি কার্যকর।


"সাধারণভাবে সুপারিশ করা অ্যান্টি-ডিপ্রেসান্ট মাঝারি থেকে তীব্র অবসাদ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কাজ করে, আর আমি মনে করি এটি রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য খুবই ভাল খবর।"


সবচেয়ে বেশী কার্যকরী ঔষধ

  • অ্যাগোমেলাটাইন (এগোটিন 25mg)
  • অ্যামিট্রিপটাইলাইন (ট্রিপটিন 25mg)
  • এস্কিটালোপ্রাম (এসিপ্রাম 5mg)
  • মির্টাযাপাইন (মিরেজ 15mg)
  • প্যারোক্সেটিন (অক্সাট 20mg)

সবচেয়ে কম কার্যকরী ঔষধ

  • ফ্লুওক্সেটাইন (নোডেপ 20mg)
  • ফ্লুভোক্সামাইন
  • রেবোক্সেটাইন
  • ট্র্যাজোডোন


"স্বাস্থ্যের কথা " বাংলা ভাষায় অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞ মানবিক চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত। নিম্নোক্ত নম্বরে বিকাশ এর মাধ্যমে দান করে সহায়তা করুন; +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬, আপনার দান দরিদ্রদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ