নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার হল একটি মানসিক রোগ যেখানে মানুষের নিজস্ব গুরুত্ব সম্পর্কে অযৌক্তিকভাবে উচ্চতর ধারণা থাকে।
তাদের প্রয়োজন এবং অত্যধিক মনোযোগ চাই এবং লোকেরা তাদের প্রশংসা করুক। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যের অনুভূতি বোঝার বা যত্ন নেওয়ার ক্ষমতার অভাব হতে পারে।
আমরা জানি নার্সিসিজম হল চরম আত্ম-মগ্নতা। এটি একজন ব্যক্তিকে তার চারপাশের লোকদের চাহিদাকে উপেক্ষা করতে শেখায়। তারা বুঝতে পারে না যে তাদের আচরণ অন্য লোকেদের উপর প্রভাব ফেলে।
আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজম আত্নমগ্নতা, নিজের গুন সম্বন্ধে অতিরঞ্জিত ধারণা পোষন করা, নিজের প্রতি নিজেই অতিরিক্ত মুগ্ধ থাকা এবং নিজের জীবনে অন্য কাউকে অতটা গুরুত্ব না দেওয়া বিষয়গুলো জড়িত।
নার্সিসিজম সব সময় খারাপ কিছু নয়। এ অবস্থায় ব্যক্তি নিজেকেই সম্ভাব্য সকল কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু মনে করে। তবে এর মাত্রা অধিক হলে নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্ব নামক ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
নার্সিসিজম কি ❗
এর বৈশিষ্ট্য ও চিকিৎসা কি ⁉️
আত্মরতিমূলক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি (Narcissistic Personality Disorder) হলো এমন একটি ব্যাপক ও দীর্ঘকালস্থায়ী প্রবণতা যা মানুষের আচরণে বা চিন্তায় অপরের প্রশংসা পাওয়ার অত্যন্ত প্রবল চাহিদা এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতির তীব্র অভাব দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিশ্বাস করে যে তারা তাদের চারপাশের মানুষদের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
'আত্মরতিমূলক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি'তে আক্রান্তরা প্রায়ই অপরের প্রতি উন্নাসিক ও তাচ্ছল্যপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করে।
উদাহরণস্বরূপ, এই ব্যাধিতে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি একজন সাধারণ ওয়েটারের "কর্কশতা" বা "নির্বুদ্ধিতা" সম্পর্কে অভিযোগ করতে পারে এবং তাকে জেরা করা হলে সে অস্বীকার করতে পারে।
তারা সাধারণত কপটতার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু মানুষদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সর্বদা নিয়োজিত থাকে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে সম্পুর্ন ঘটনা তার উপরে দোষারোপের চেষ্টা করে এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে দোষী প্রমাণের অবিরাম চেষ্টা করে যেতে পারে।
পুরুষ নার্সিসিস্টরা সংখ্যায় বেশি, তারা সাধারণত বেশি আক্রমণাত্মক এবং বিস্ফোরক হয় যখন তারা রেগে যায়।
মহিলা নার্সিসিস্টরা বেশি প্যাসিভ আগ্রাসনের সাথে কাজ করার প্রবণতা রাখে, প্রায়শই ভালবাসা এবং মনোযোগকে আটকে রাখে।
ব্যক্তিত্ব কী, আমাদের কী কাজে লাগে ⁉️👉
নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের লক্ষণ
ক্ষমতা, সৌন্দর্য বা সাফল্য নিয়ে ব্যস্ততা। শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বা বিশেষ ব্যক্তিদের আশেপাশে থাকতে পারে।
নিজেদের লাভের জন্য আন্তঃব্যক্তিকভাবে শোষক প্রকৃতির। অহংকারী। কম সহানুভূতিশীল।
কারো আত্মরতিমূলক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি (NPD) নির্ণয়ের জন্য তার ভেতরে নিচের লক্ষণগুলি বা তার বেশি সংখ্যক উপস্থিত থাকতে পারেঃ
আত্ম-গুরুত্ব নিয়ে বিরাট ধারণা থাকা, নিজের সফলতা, অর্থ বা মেধা নিয়ে সর্বদা দাম্ভিকতা প্রকাশ করা এবং শ্রেষ্ঠতর হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার প্রত্যাশা করা, অন্যকে অবমাননাকর আচরণ এবং বিদ্রুপের সাহায্যে অবজ্ঞা করার মাধ্যমে নিজেকে শ্রেষ্ঠতর প্রমাণের অবিরাম প্রচেষ্টায় থাকা;
যেকোনো বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে চাওয়া হলে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা;
অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর স্বভাব এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত এবং অসম্পৃক্ত ব্যক্তিদের সাথে যার ব্যাপারে নাক গলানো হয়েছে তার ব্যাপারে বিদ্রুপ, গীবত করা;
কোনো বিষয়ে অজ্ঞতা থাকলেও তাতে বিজ্ঞতা জাহির করার চেষ্টা;
বিশাল সাফল্য, শক্তি, অর্থ, সৌন্দর্য, বা প্রেমের কল্পনায় সর্বদা আচ্ছন্ন থাকা;
নিজেকে শ্রেষ্ঠতর ও অনন্য ভাবা এবং শুধু অন্য উচ্চ-মর্যাদা অথবা অর্থ সম্পন্ন মানুষদের (বা প্রতিষ্ঠান এর) সাথেই তার মেশা উচিত বলে বিশ্বাস করা;
অত্যধিক প্রশংসা পাওয়ার তীব্র বাসনা, না পেলে অবমাননাকর আচরণ;
সব কিছু পাওয়ার অধিকার কেবল তারই বলে বিশ্বাস করা যেমন সব সময় অনুকূল আচরণ বা স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি পাওয়ার অযৌক্তিক প্রত্যাশা,যেমন: অন্যদের প্রতি সামান্যতম অবদানের পরিবর্তে তা ঢালাউভাবে প্রচার এবং অমানবিক কুটিল আচরণের পরেও সর্বদা আনুগত্যের বাসনা;
নিজের সুবিধা লাভের জন্য অপরকে ব্যবহার করা, যেমন: নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ফাঁদে ফেলতে অন্যান্য মানুষদের ব্যবহার করা;
সর্বদা সেরা বা সর্বোত্তম থাকার উপর জোর দেয়া। অর্থাৎ এই ধরনের ব্যাক্তিরা প্রতিটা বিষয় সেরা থাকার উপর জোর দেয়। যেমনঃ দামি গাড়ি, দামি খাবার, দামি জামা ব্যবহার ইত্যাদি।
সহানুভূতি অভাব,যেমন: অন্যদের আবেগ-অনুভূতি ও প্রয়োজনকে স্বীকার বা শনাক্ত করতে অনিচ্ছুক;
অন্যরা সর্বদা অনুকূল আচরণ না করলে, অযথা জবাবদিহিতা, সর্বদা নিয়ন্ত্রিত হতে না চাইলে এবং কুটিল আচরণ সহ্য করতে না চাইলে তাদের প্রয়োজন পূরণে অনিচ্ছা;
নিজের কৃতকর্মের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার তীব্র বাসনা, অন্যদের প্রতি তার ক্ষতিকর বিধ্বংসী প্রভাব স্বীকারে অনিচ্ছুক;
তাকে সবাই ঈর্ষা করে এমন বিশ্বাসে প্রায়ই অন্যদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হওয়া;
কাউকে কোনো বিষয়ে সফল হতে দেখলে কীভাবে তার সফলতা দমন করা যায় সেই প্রচেষ্টাতে লিপ্ত হওয়া;
নিয়মিত কুটিল, অহংকারী, তাচ্ছল্যপূর্ণ এবং উদ্ধত আচরণ বা মনোভাব দেখানো;
নিজের কৃতকর্মের ফলে অন্যরা তার সঙ্গ ত্যাগ করলে তাকে অবিচার হিসেবে বাস্তবায়নের কলাকৌশল প্রদর্শন এবং নিজের দোষ স্বীকারে প্রবল অনিচ্ছা এবং কোনোভাবে সত্য প্রকাশ হয়ে গেলে নিজের করা দোষ ঠিক কাজ হিসেবে প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো এবং আবারও তা কপটতা হিসেবে প্রকাশ পেলে বিচার থেকে বাচার জন্য একই কাজ বারবার করতে থাকা।
নিতম্ব বৃদ্ধি সার্জারি জনপ্রিয় হচ্ছে কেন⁉️▶️
"স্বাস্থ্যের কথা " বাংলা ভাষায় অনলাইন স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিশেষজ্ঞ মানবিক চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত। নিম্নোক্ত নম্বরে বিকাশ এর মাধ্যমে দান করে সহায়তা করুন; +৮৮০১৮১৩৬৮০৮৮৬, আপনার দান দরিদ্রদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ